ই-পেপার বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

ঈমানদার জীবন সাজাবেন যেভাবে
প্রকাশ: রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ১১:৩৭ এএম আপডেট: ২৪.১০.২০২১ ১১:৩৯ এএম  (ভিজিট : ৬৭৪)
একজন মানুষ ঈমান গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামের ছায়াতলে এসে মূলত আল্লাহর রহমতে আশ্রিত হয় এবং তার অধীনস্থ হয়ে যায়। যেমনটি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমে বলেছন, ‘আল্লাহই হচ্ছেন তাদের অভিভাবক যারা ঈমান এনেছে, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা ঈমান গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে তাদের পৃষ্ঠপোষক হলো তাগুত তথা পথভ্রষ্ট শয়তানেরা; যারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। বস্তুত তারাই হলো জাহান্নামের অধিবাসী। তারা সেখানে চিরকাল বসবাস করবে।’ (সুরা বাকারা : ২৫৭)। আয়াতে কারিমা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়, স্রেফ জন্মসূত্রে বা কালিমা পড়ে ঈমান গ্রহণ করলেই প্রকৃত মুমিন হওয়া সম্ভব নয়। বরং মুমিনের যথাযথ গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য যতক্ষণ না নিজের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে ততক্ষণ আল্লাহর ভাষায় প্রকৃত মুমিন হওয়া যাবে না। প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার জন্য নিজেকে সাজাতে হবে ঈমানের গুণে।

প্রখ্যাত তাবেয়ি আবদুর রহমান বিন উযায়নাহ (র.) বলেন, আমি হজরত আবু জর (রা.)-এর কাছে আবেদন জানালাম, আমাকে এমন আমল বলে দিন, যেই আমল করলে বান্দা জান্নাতে যাবে! তিনি বললেন, এই বিষয়টি আমিও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আবেদন করেছিলাম, তিনি জওয়াব দিয়েছেন, সে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, নিশ্চয় ঈমানের সঙ্গে কোনো আমল আছে? তিনি বললেন, আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন তা থেকে কিছু পরিমাণে দান করবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, যদি এমন নিঃস্ব হয় যে, তার কিছুই নেই? তিনি বললেন, মুখে সুন্দর কথা বলবে। আমি বললাম, যদি কথা বলতে না পারে? তিনি বললেন, তা হলে বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে। আমি বললাম, যদি সে এমন দুর্বল হয় যে, তার কোনো ক্ষমতা নেই? তিনি বললেন, তা হলে কর্মহীনকে কর্ম জুগিয়ে দেবে। আমি বললাম, সে নিজেই যদি কর্মহীন হয়? তখন রাসুল (সা.) আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি যদি বলতে চাও যে, তোমার সঙ্গীর মধ্যে ভালো কোনো যোগ্যতাই নেই, তবে সে যেন অন্তত তার কষ্ট দেওয়া থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ তো অনেক সহজ কথা! আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ওই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যে বান্দাই আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার উদ্দেশ্যে এসবের কোনো একটার ওপর আমল করবে, কেয়ামতের দিন ওই আমল তাকে হাত ধরে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবে। (ইবনে হিব্বান : ৩৭৩)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সফল ঈমানদারের গুণ বর্ণনায় বলেন, ‘সফলকাম হলো ওইসব মুমিন- ১. যারা তাদের নামাজে গভীরভাবে মনোযোগী। ২. যারা অনর্থক ক্রিয়াকর্ম এড়িয়ে চলে। ৩. যারা সঠিকভাবে জাকাত আদায় করে। ৪. যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; নিজেদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত। কেননা এসবে তারা নিন্দিত হবে না। এদের ব্যতীত যারা অন্যকে কামনা করে, তারা হলো সীমালঙ্ঘনকারী। ৫. যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করে। ৬. যারা তাদের নামাজগুলোর হেফাজত করে। তারাই হলো উত্তরাধিকারী; তারা উত্তরাধিকারী হবে ফেরদৌসের। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা মুমিনুন : ১-১১)

আয়াতগুলোতে মুমিনের গুণাবলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো- ‘তারা নামাজে গভীরভাবে মনোযোগী’। তারা খুশুখুজু ও ধ্যান-তন্ময়তার সঙ্গে নামাজ আদায় করে। এর বিপরীতে কোরআনের অন্যত্রে আরও দুই প্রকার নামাজির কথা এসেছে। একদল নামাজি হলো ‘উদাসীন’। আল্লাহ বলেন, ‘দুর্ভোগ ওইসব নামাজির জন্য, যারা তাদের নামাজে উদাসীন।’ (সুরা মাউন : ৫)। অন্য একদল নামাজি হলো ‘অলস’; এটা মুনাফিকদের নামাজ।

আল্লাহ বলেন, ‘যখন তারা নামাজে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়’। (সুরা নিসা : ১৪২)। আয়াতদৃষ্টে বোঝা যায়, উদাসীন ও অলস নামাজিরা জাহান্নামি হবে এবং কেবল মনোযোগী নামাজিরা জান্নাতি হবে। আর তারাই হলো সফলকাম মুমিন। কেননা হৃদয় মনোযোগী হলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মনোযোগী হয়। আর উভয়ের সহযোগে কর্ম সফল হয়। হৃদয়ের টান ও আকর্ষণ না থাকলে কোনো কর্মই যথার্থ হয় না। আর আল্লাহর কাছেও তা কবুল হয় না।

দুনিয়ায় যত ফিতনা-ফাসাদ ও অপকর্ম সংঘটিত হয় তার অধিকাংশই হয়ে থাকে জিহ্বা ও লজ্জাস্থান দ্বারা। এ জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো লজ্জাস্থান হেফাজত করা। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বর্ণনা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দুই রানের মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থান) হেফাজতের নিশ্চয়তা আমাকে দেবে, আমি তার জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।’ (বুখারি : ৬৪৭৪)। 

এ দুটোকে যে সংযত করবে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বোঝাই যায়, এ দুটো বিষয় নিয়ন্ত্রণ কতটা জরুরি!
 
সুন্দর-সুখী জীবনের জন্য ঈমানদার ব্যক্তি আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন। পৃথিবীর সব মানুষের সঙ্গেই উদার ও সমব্যথী হতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন সবার আপন হয়, সে অন্তরঙ্গ হয় এবং তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া যায়। আর যে ব্যক্তি অন্তরঙ্গ হয় না এবং যার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া যায় না, তার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৯১৯৮)।

অর্থাৎ মুমিন হবে অন্তরঙ্গ প্রকৃতির। সে অন্যদের ভালোবাসবে, আপন করে নেবে। অন্যরাও তাকে ভালোবাসবে, আপন মনে করবে। যদি এই বৈশিষ্ট্য কারও না থাকে, তা হলে যেন তার মধ্যে কোনো কল্যাণই নেই। না সে অন্যদের উপকার করতে পারে আর না অন্যরা তার থেকে উপকৃত হতে পারে। বলাবাহুল্য, এই প্রীতি, ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতা সবই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হবে এবং আল্লাহর বিধানের অধীনে হতে হবে। আল্লাহ আমাদের এরকম আরও যত উত্তম গুণ আছে, সব অর্জনের এবং সে অনুযায়ী জীবন সাজানোর তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক: খতিব ও প্রাবন্ধিক


আরও সংবাদ   বিষয়:  ঈমানদার   ইসলাম শিক্ষা  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close