ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালগুলো কতটা প্রস্তুত
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৩১ এএম  (ভিজিট : ৬৩৪)
বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’। এই ভাইরাস ঠেকাতে ইতোমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসহ দেশের সব প্রবেশপথে স্ক্রিনিং আরও জোরদারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ওমিক্রন মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোর একাধিক কর্মকর্তা। তবে সরেজমিন বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে ওমিক্রন মোকাবিলায় আলাদা কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি। 

তারা বলছেন, আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি। করোনার সময়ে যেভাবে রোগীদের সেবা দিয়েছি, যে ভ্যারিয়েন্টই আসুক না কেন, সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত। তবে যেহেতু দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আসার প্রমাণ নেই, তাই আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। 

অন্যদিকে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ প্রতিরোধে এরই মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ধরন শনাক্তের ঘটনায় দেশটির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেছেন, ওমিক্রন ঠেকাতে সামাজিক-রাজনৈতিকসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান সীমিত করা হবে। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ চালুর পরামর্শও এসেছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসবে এটাই স্বাভাবিক। কোনো একটি ভ্যারিয়েন্ট যদি দীর্ঘসময় কোনো স্থানে থাকে, তা হলে সেটি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে বাধ্য হয়। সে জন্যই আমাদের সংক্রমণ একেবারেই কম। তবে নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট চলে এলে ফের সংক্রমণ বাড়তে পারে। আর এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সবার জন্য টিকা নিশ্চিতের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, দেশে অব্যাহতভাবে করোনার সংক্রমণ কমে আসায় তেমন কোনো চাপ নেই এসব হাসপাতালে। কোনো ধরনের দুর্ভোগ ছাড়াই রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে। সাধারণ শয্যার পাশাপাশি অধিকাংশ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) খালি রয়েছে।

দেশের শীর্ষ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কোভিড ফিল্ড হাসপাতালে ৩৫৭টি শয্যার বিপরীতে ২১ জন রোগী ভর্তি আছেন। ৪০টি আইসিইউর বিপরীতে ভর্তি আছেন ৭ জন। অন্য হাসপাতালগুলোরও একই অবস্থা। রোগী নেই বললেই চলে। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ মোকাবিলায় এসব কোভিড ফিল্ড হাসপাতালে আলাদা কোনো ধরনের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়নি। সব কিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে। আর করোনা টেস্ট করতে রোগীদেরও আগে যেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো সেভাবে কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তবে আগের মতো আর ভিড় নেই।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক সময়ের আলোকে বলেন, বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতি খুব ভালো। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের ব্যাপারে আমরা খুব সতর্ক অবস্থানে আছি। সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। সরকার যে নির্দেশনা দেবে আমরা সেই আলোকে কাজ করব।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত নতুন কোনো নির্দেশনা পাইনি। এলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

এদিকে আফ্রিকা ও ইউরোপের যেসব দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের আপাতত দেশে না ফেরার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংস্থার মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বুধবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ আহ্বান জানান তিনি।

নাজমুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটা সম্পর্কে প্রতিনিয়ত আমরা নতুন তথ্য-উপাত্ত পাচ্ছি। আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে ভ্রমণ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে বন্দরগুলোতে আমরা সতর্কতা দিয়েছি। কোয়ারেন্টাইনের বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছিল সেটি আর শিথিল নেই। কোয়ারেন্টাইনের বিধিনিষেধ আমরা কঠোরভাবে প্রতিপালনের নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। যাদের পরীক্ষার দরকার তাদের পরীক্ষা করছি। সামগ্রিকভাবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

মঙ্গলবার করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে ১৮টি মন্ত্রণালয়কে নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সভা শেষে তিনি জানান, ওমিক্রন ঠেকাতে সামাজিক-রাজনৈতিকসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান সীমিত করা হবে। একই সঙ্গে ষাটোর্ধ্বদের জন্য করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথাও ভাবছে সরকার। পাশাপাশি ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম গতিশীল করতে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ চালুর পরামর্শও এসেছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে।

নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল ইসলাম খান সময়ের আলোকে বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিষয়টি আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, শুধু ওমিক্রন নয়, করোনার ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে যে আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সেবা দিয়েছি, যে ভ্যারিয়েন্টই আসুক, একইভাবে সেবা দিয়ে যাব আমরা।


আরও সংবাদ   বিষয়:  করোনা   ওমিক্রন  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close