আমিনবাজারে ছয় ছাত্র হত্যা মামলায় ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন
আদালত প্রতিবেদক
|
![]() বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান এ রায় ঘোষণা করেন। মামলায় ৩ জন মারা যাওয়ায় তাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অন্য একটি ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা । অন্য একটি ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, আবদুল মালেক, সাঈদ মেম্বার, আবদুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন রেফু, নিহার ওরফে জমশের আলী, মীর হোসেন, মজিবর রহমান, আনোয়ার হোসেন, রজুর আলী সোহাগ, আলম, রানা, আ. হামিদ, আসলাম মিয়া। যাবজ্জীবন প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, শাহীন আহমেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন, মো. ওয়াসিম, সাত্তার, সেলিম, মনির হোসেন, আলমগীর, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নূর ইসলাম, শাহাদাত হোসেন রুবেল, টুটুল, মাসুদ, মোখলেছ, তোতন, সাইফুল, মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন, বাদশা মিয়া, সালাম, আফজাল, অখিল খন্দকার, নিজাম, রহিম, শাহজাহান, সুলতান, সোহাগ, লেমন, সায়মন, এনায়েত, দুলাল, হায়দার, খালেক, ইমান আলী, আলম, আমিন, সালেহ আহমেদ, শামসুল হক, রহিম-২, মো. সেলিম, সানোয়ার, আনোয়ার, সাইফুল। এছাড়া বিচার চলাকালে কবির হোসেন, রাশেদ, পর্বত মারা যাওয়ায় তাদেরকে এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এদিন রায় ঘোষণার দিন থাকায় সকালে কারাগার থেকে ৪৬ জন আসামিকে হাজির করে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর শাকিলা জিয়াসমিন মিতু এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি এ রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে আসামি পক্ষ এ রায়ে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিলের কথা জানান। রায় ঘোষণার পর আসামিদের স্বজনদের আহাজারিতে আদালত প্রাঙ্গনের পরিবেশ ভারি হয়ে যায়। অনেক স্বজনদের জ্ঞান হারাতে দেখা গেছে। তবে রায়কে কেন্দ্র করে আদালত পাড়ায় নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর আগে ২২ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন। যুক্তি উপস্থাপন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করা হয়। অপরদিকে আসামিদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মাহবুব হোসেন আসামিদের খালাস চেয়ে শুনানি করেন। শুনানি শেষে জামিনপ্রাপ্ত ৫১ জন আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময় ২ জন আসামি মারা গেছেন এবং পলাতক রয়েছে ৭ জন আসামি। এ মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ৫৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামের কেবলার চরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন- বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ম্যাপললিফের এ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শামীম, মিরপুর বাংলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, একই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র কামরুজ্জামান কান্ত, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবির মুনিব। ঘটনার পর নিহতদের বিরুদ্ধেই ডাকাতির অভিযোগ এনে গ্রামবাসীর পক্ষে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন আব্দুল মালেক নামে এক বালু ব্যবসায়ী। অন্যদিকে ছয় কলেজছাত্র হত্যাকাণ্ডে ৬০০ গ্রামবাসীকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন। ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ৬০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ৮ জুলাই মামলার ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। /আরএ |