ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

জহিরুল হত্যা: ১৩ জনের ফাঁসি, ৮ জনের যাবজ্জীবন
প্রকাশ: রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:১২ পিএম  (ভিজিট : ৩৯৬)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী জহিরুল হক হত্যা মামলায় ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও আট আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— বসু মিয়া, কবির মিয়া, মোখলেস, সাচ্চু মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, শহিবুর রহমান শুক্কি, লিয়াকত আলী, ইউনুছ মিয়া, রহমত উল্লাহ ওরফে ফারিয়াজ মিয়া, শিথিল আহমেদ ওরফে ফাহিম আহমেদ, সাইফুল, পাবেল ও আলী মিয়া।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— নুরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, রাসেল, মাজু মিয়া, গোলাপ মিয়া, সোহেল মিয়া, শাহজাহান ও বোরহান ওরফে রুহান। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। 

এদিন রায় ঘোষণার সময় আদালতে ১৬ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া এ মামলায় পলাতক রয়েছেন পাঁচ আসামি। তারা হলেন, রহমত উল্লাহ ওরফে ফারিয়াজ মিয়া, শিথিল আহমেদ ওরফে ফাহিম আহমেদ, সাইফুল, পাবেল এবং আলী মিয়া। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জহিরুল হক হত্যার ঘটনাটি খুবই নৃশংস। যেখানে সামান্য ঘটনা নিয়ে খুবই উত্তেজিত হয়ে একপক্ষ অন্য পক্ষকে খুন ও জখমের মতো ঘটনা ঘটায়। এই মামলায় পরিকল্পনা মোতাবেক আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল হককে বসু মিয়া গং কর্তৃক ভিকটিমকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্রের দ্বারা দুই হাতে গলা চেপে ধরলে গলা দিয়ে রক্ত বমি হয়, বাম উরুতে সামনে রগ কাটা জখম, বাম উরুতে পেছনে কাটা জখম, কোমড়ের পিছনে জখম, বাম হাঁটুর নিচে রগ কাটা জখম, মুখের ডান চোয়ালে ছিদ্র জখম, মাথার পেছনে থেঁতলানো জখম, বুকে পিঠে কোমড়ে পিটিয়ে জখম, বাম চোয়ালের উপরে গুরুতর থেঁতলানো কালচে জখম, তলপেটে পা দিয়ে মুড়িয়ে জখমসহ কিলিয়ে, উষ্টিয়ে, লাথিয়ে পুরো শরীরে আঘাত করে, বুক থেকে পেট পর্যন্ত খোলা লম্বা কাটা মারাত্মক রক্তাক্ত গ্রিভিয়াস জখম করে খুন করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এ কারণে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়াই সমীচীন বলে মনে করেন ট্রাইব্যুনাল।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও নিহতের  ছোট ভাই অধ্যক্ষ কবির হোসেন। তিনি বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করবো, উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকবে এবং দ্রুত তা কার্যকর হবে। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঞাও রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করার কথা জানিয়েছেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া উত্তর পৌরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে জহিরুল হক নিজ গ্রাম পয়াগে ফিরছিলেন। পথে আসামি বসু মিয়া, হাবিবুর রহমান, শহিবুর রহমান ওরফে শুক্কি, কবির মিয়া, সাচ্চু মিয়া, মোখলেছ মিয়া, রুহান ওরফে বোরহান, শিথীল আহমেদ ওরফে ফাহিম আহমেদ, রহমত উল্লাহ ফারিয়াজসহ অন্য আসামিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলের পাশে অবস্থান করছিলেন। জহিরুল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুটি মোটরসাইকেলযোগে আসামিরা তার সিএনজি ব্যারিকেড দিয়ে আটকান। এসময় সিএনজিতে থাকা জহিরুলকে তারা আক্রমণ করে মারাত্মক জখম করেন। আসামিরা সিএনজিচালক গোলাপ মিয়াকেও আঘাত করেন। ঘটনার সময় অন্যদিক থেকে আসা আরেকটি সিএনজিচালককে গোলাপ মিয়া বিষয়টি জানালে তিনি মোটরসাইকেল দুটি ধাওয়া করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উত্তর পৌরতলা সিএনজি স্ট্যান্ডে থাকা লোকজনের সহায়তায় মোটরসাইকেল দুটিসহ আসামি শিথিল ও ফারিয়াজকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। 

পরবর্তীতে ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জহিরুল। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই কবির হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্ত শেষে ২১ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ আদালতে পাঠানো হয়। 

এফএইচ




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close