পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ৪টি কর্পোরেশনের (পুরনিগম) নির্বাচন তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হলো।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) এ সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত জানায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টকে সম্মান জানিয়েই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেক্ষেত্রে ২২ জানুয়ারির পরিবর্তে বিধাননগর, আসানসোল, চন্দননগর ও শিলিগুড়ি- এই চার কর্পোরেশনের নির্বাচন হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। ভোটগণনা হতে পারে ১৫ ফেব্রুয়ারি। কমিশনের এই সিদ্ধান্তে প্রচারণার জন্য রাজনৈতিক দলগুলি বাড়তি সময় পেয়ে গেল। যদিও এতদিন পর্যন্ত যে নির্বাচনী আচরণবিধি (মডেল কোড অব কনডাক্ট) চালু ছিল, তাই চলবে।
একইভাবে নির্বাচন সম্পর্কিত কোভিড বিধিও জারি থাকবে। নির্বাচনের দিন থেকে ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচারণার কাজ শেষ করতে হবে। ভোট শুরু হবে সকাল ৭টায়, চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। তবে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের আরও ১০৮টি পুরসভাগুলিতে যে বকেয়া ভোট হওয়ার কথা ছিল, তা নিয়ে এখনও অবধি কমিশনের তরফে কিছু জানানো হয়নি। সেক্ষেত্রে ওই নির্দিষ্ট দিনেই বাকি পুরসভার ভোট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আগামী ২২ জানুয়ারি ওই চার পুরনিগমে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। সেইমতো মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়া, প্রচারণার কাজ চলছিল। কিন্তু এরই মধ্যে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা হু হু করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্য সরকারের তরফে কঠোর বিধি নিষেধও জার করা হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিআইএম সহ রাজ্যটির বিরোধী দলগুলি নির্বাচন পিছনোর দাবি জানিয়ে আসছিল।
এমনকি ভোট পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টেও একাধিক মামলা হয়। এই প্রেক্ষিতে নির্বাচন পিছনো যা কি না তা কমিশনকে ভেবে দেখতে বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এমনকি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানায় আদালত। এরই মধ্যে শনিবার রাজ্য সরকারের তরফেও নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল কমিশন ভোট পিছিয়ে দিলে তাতে কোনও আপত্তি নেই।
এরপরই ভোট পিছানোর সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। এদিকে করোনা রোধে রাজ্য জুড়ে যে কঠোর বিধিনিষেধ জারি ছিল, তার মেয়াদ বাড়াল আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। শনিবারই এ সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয় সরকারের তরফে। আগের যা নিয়ম ছিল, আপাতত তাই বহাল থাকবে। যদিও দুইটি ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়েছে। বিয়ে বাড়িতে আগে ৫০ জনের জমায়েতের অনুমতি ছিল, তা বাড়িয়ে ২০০ জন করা হয়েছে। অন্যদিকে মেলার ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা থাকছে না। তবে তা করাতে হবে খোলা আকাশের নিচে এবং বিধিনিষেধ মেনে।
এছাড়াও মাস্ক ব্যবহার, শারীরিক দূরত্ববিধিসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। নাইট কার্ফু জারি থাকবে রাত ১০টা থেকে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, শুক্রবার একদিনে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ২২,৬৪৫ জন। যদিও বৃহস্পতিবারের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮২২টি কম। তবে গোটা দেশে গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
শনিবারের স্বাস্থ্য বুলেটিন অনুযায়ী, চব্বিশ ঘণ্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২,৬৮,৮৩৩ জন। গত দিনের তুলনায় ৪,৬৩১ জন বেশি। ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা এ পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০৪১ জন। একদিনে মৃত্যু ৪০২। ফলে পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণের দিক বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
/জেডও/