ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ: যত কাটে তত লাগে
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:১৯ পিএম  (ভিজিট : ৫৯৮)
খোঁজ পেলেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ কেটে দেয় তিতাস, জেল-জরিমানাও করে। এভাবে প্রতিবছর লাখ লাখ সংযোগ কাটা হয়। কিন্তু আবার সুযোগ বুঝে নেওয়া হয় অবৈধ সংযোগ। আবার কাটে তিতাস, আবারও নেওয়া হয় অবৈধ সংযোগ। এমনকি তিতাসের দৃষ্টি এড়াতে পানির নিচ দিয়ে অবৈধ লাইন টেনে নেওয়া হয় সংযোগ। এভাবেই চলছে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ কাটা ও নেওয়ার খেলা। শত শত কোটি টাকা বেহাত হচ্ছে তিতাসের। 

রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে প্রায় ৪০ হাজার ঘরে কয়েক লাখ মানুষ বসবাস করে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই তিতাসের অবৈধ সংযোগ রয়েছে। কিছুদিন পরপর অভিযান চালিয়ে সেগুলো বিচ্ছিন্ন করা হয়। আবার সেগুলোর সংযোগ নেওয়া হয়। তিতাসকে ফাঁকি দিতে অভিনব পন্থায় গুলশান লেকের নিচ দিয়ে পাইপ টেনে কড়াইল বস্তিতে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। 

গত বুধবার অভিযান চালিয়ে পানির নিচ দিয়ে নেওয়া এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি পাইপগুলো জব্দ করে তিতাসের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তিতাস বলছে এখন পর্যন্ত চারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। প্রভাবশালীরা আবারও অবৈধ এই সংযোগ নিয়েছে।

ড্রেনের নিচ দিয়ে প্লাস্টিকের পাইপ টেনেও নেওয়া হচ্ছে অবৈধ সংযোগ। বৃহস্পতিবার বনানী লেকপাড়ে এমনই এক অবৈধ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস। এ সময় তিনটি পয়েন্টে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তিতাস বলছে, অভিযানে দেখা যায়, বনানী লেক ঘেঁষে ছোট্ট খুপরিঘর। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, কী ঘটছে ভেতরে। ঢুকেই দেখা যায় এ যেন অবৈধ গ্যাস সংযোগের মহাযজ্ঞ। ড্রেনের ভেতর দিয়ে প্লাস্টিকের পাইপে টানা হয়েছে গ্যাসের সংযোগ। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এখান থেকেই গ্যাস সংযোগ চলে গেছে কড়াইল বস্তিসহ বিভিন্ন এলাকায়। বনানী এলাকার বিভিন্ন আবাসিক ভবনেও অবৈধ সংযোগ পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস। রাতারাতি সেগুলো আবার জোড়াও লাগে। তবে কত অবৈধ সংযোগ রয়েছে, তা জানে না তিতাস। এর জন্য তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, সিবিএ নেতা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী মহল জড়িত।

তিতাস বলছে, তাদের জনবলের অভাব রয়েছে। খোঁজ পেলেই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য তারা অভিযান পরিচালনা করেন। এর জন্য রয়েছে ভিজিলেন্স টিম। এ ছাড়া মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করে অর্থদ-সহ জেল-জরিমানা করা হয়। তারপরও থেমে নেই অবৈধ সংযোগ নেওয়া। রাজনৈতিক প্রভাব আর জনবলের অভাবে কমছে না অবৈধ সংযোগ। 

তিতাসের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৭৮৯টি অবৈধ আবাসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া ৬ হাজার ৮০৫টি আবাসিক, ৯৩টি বাণিজ্যিক, ৬৯টি শিল্প, ৩৭টি ক্যাপটিভ ও ১০টি সিএনজি গ্রাহকের অবৈধ উপায়ে-অনুমোদনের চেয়ে বেশি স্থাপনায় গ্যাস ব্যবহার ও বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

শুধু গত ডিসেম্বর মাসেই ২৮টি অভিযান পরিচালনা করে তিতাস। এ সময় ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণঞ্জের ৮১টি স্পটে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৮.১০ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া ঢাকায় ৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারীকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা অর্থদ- করা হয়। নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁ এলাকায় ৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৩ লাখ টাকা অর্থদ- দেওয়া হয়। সাভার, জয়দেবপুর ও চন্দ্রা এলাকায় ৭টি মোবাইল কোর্ট চালিয়ে ১২ লাখ ৭১ হাজার টাকা অর্থদ- করা হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরের ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৪৯টি অবৈধ আবাসিক অবৈধ আবাসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া ৯ হাজার ৫৩৭টি আবাসিক, ৩২৫টি বাণিজ্যিক, ১৮৪টি শিল্প, ৬০টি ক্যাপটিভ ও ১৭টি সিএনজি গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৫৯টি অবৈধ আবাসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া ৩ হাজার ৫২৭টি আবাসিক, ২২৮টি বাণিজ্যিক, ৯৫টি শিল্প, ৩৮টি ক্যাপটিভ ও ২৩টি সিএনজি গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৪টি অবৈধ আবাসিক অবৈধ আবাসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া ৬ হাজার ৪৫১টি আবাসিক, ২৯৪টি বাণিজ্যিক, ১৯১টি শিল্প, ৬৪টি ক্যাপটিভ ও ১৮টি সিএনজি গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

আর ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১৫১টি জিডি ও ১২২টি মামলা করেছে তিতাস। তবে বছরে কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তিতাস গ্যাসের প্রধান কার্যালয়ের ভিজিল্যান্স টিমের ডিজিএম তৌহিদুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও পুনঃসংযোগ দেওয়ার পেছনে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করে। আমাদের যথেষ্ট লোকবল নেই।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা প্রফেসর সামসুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, যারা অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে যারা ব্যবহার করছে তাদের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা অর্থহীন। বৈধ সংযোগ বন্ধ রাখায় অবৈধ সংযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, অবৈধ সংযোগ দেওয়া এবং নেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করে। তিতাসের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আরও কঠোর আইন করে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করলে অবৈধ সংযোগ কমে আসবে।

এফএইচ


আরও সংবাদ   বিষয়:  তিতাস গ্যাস  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close