ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ইএফটির মাধ্যমে প্রতারণা
গ্রুপ অফ কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট টার্গেট ছিল তাদের
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৬ পিএম  (ভিজিট : ৩২০)
ব্যাংকের সার্ভার থেকে তথ্য নিয়ে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলো একটি চক্র। এজন্য দেশের বড় বড় গ্রুপ অফ কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট টার্গেট করা হয়। পরে সার্ভারে সংরক্ষিত স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া আরটিজিএস ফর্ম তৈরি করা হয়। প্রলোভনের মাধ্যমে ম্যানেজ করা হয়, ব্যাংকের যে শাখায় ফান্ড ট্রান্সফারের আবেদন করা হবে সেখানকার ম্যানেজারকে। এভাবে ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ট্রান্সফার করার চেষ্টা করে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে চক্রের মূলহোতাসহ ১০ সদস্য। তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকেও ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল।

শুক্রবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান। এরআগে, গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ তয়াছির জাহান বাবুর নেতৃত্বে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। 

তারা হলেন— মূলহোতা ডাচ বাংলা ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখায় এসএমই সেলস্ টিম ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন, তার সহযোগী ইয়াসিন আলী, মাহবুব ইশতিয়াক ভূঁইয়া, আনিছুর রহমান ওরফে সোহান, মো. দুলাল হোসাইন, মো. আসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, জাকির হোসেন, মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া ও মো. নজরুল ইসলাম। এসময় তাদের কাছ থেকে আরটিজিএস ফর্ম, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে (ডিবিবিএল) থাকা ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা আরটিজিএস ফর্মে ট্রান্সফারের একটি আবেদন আসে। টাকাটি ‘এন আই কর্পোরেশন বিডি লি.’ নামে একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট মতিঝিল শাখায় ট্রান্সফারের আবেদন করা হয়। ডিবিবিএল'র বসুন্ধরা শাখার ম্যানেজারের কাছে ট্রান্সফারের আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওয়ালটন গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ওয়ালটন থেকে ব্যাংক ম্যানেজারকে বলা হয় তারা টাকা ট্রান্সফারের আবেদন করেননি। পরে ট্রান্সফারের আবেদনটি স্থগিত করায়। এ বিষয়ে ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ডিএমপির ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ করা হয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রটির ১০ সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ আরো জানায়, চক্রের মূলহোতা জাকির হোসেন ডিবিবিএল এ চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করেন। যেই সব অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ বেশি তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএস'এর মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার পর জাকির গ্রেফতারকৃত ইয়াসিন আলীকে স্বাক্ষর জালিয়াতির কাজ দেন। পরে ইয়াসিন আলী স্বাক্ষর জাল করে মাহবুব ইশতিয়াক ভূঁইয়ার পরিচালিত অ্যাকাউন্ট ‘এন আই কর্পোরেশন, বিডি লি.’ নামের কোম্পানির অ্যাকাউন্টে, এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করে জাল ব্যাংক দলিল তৈরি করে। পরে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অন্য আসামিদের ঠিক করে। গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন দিন যাবৎ ডিবিবিএল এর সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছিল।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো.আসাদুজ্জামান বলেন, এই চক্রটির কার্যক্রম ব্যাংকের ভিতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে। আমরা যখন তাদের গ্রেফতার করতে যায় তখন তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। 

তিনি বলেন, চক্রটির এক অংশ যে গ্রুপ বা ব্যক্তির টাকা তারা ট্রান্সফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। অন্যদিকে চক্রটির আরেকটি অংশ যেই শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা দিবে সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে।

চক্রটি এরকম জালিয়াতি আরো করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে গ্রেফতারকৃতরা এরকম ট্রান্সফার করেছে কি না তা আমরা জানি না। তাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। 

এরা কি ধরনের অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরা মূলত বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রুপের অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে অ্যামাউন্ট ট্রান্সফার হলে যেন তাড়াতাড়ি বুঝতে না পারে। কেন না বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিশাল অঙ্কের টাকা থাকে।

এফএইচ


আরও সংবাদ   বিষয়:  ব্যাংক অ্যাকাউন্ট টার্গেট  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close