ই-পেপার শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসবে কি না বলা যায় না
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২, ২:২৭ পিএম  (ভিজিট : ৫৪১)
বাংলাদেশে করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংক্রমণের হারও কমে এসেছে। তবে নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসবে কি না তা বলা যায় না। যদি বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায় তাহলে আস্তে আস্তে করোনা চলে যাবে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। শুক্রবার সময়ের আলোকে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সময়ের আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক গোলাম মোস্তফা

সময়ের আলো : করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক পরিস্থিতি কী এবং স্বাস্থ্য খাতে করোনার কতটুকু প্রভাব পড়েছে? 

ডা. কামরুল হাসান খান : মাহামারি করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে সারা বিশ^ই হিমশিম খেয়েছে। কারণ প্রথমদিকে কোনো প্রস্তুতি ছিল না। কেউ ধারণা করতেও পারেনি এমনভাবে সংক্রমিত হবে, এত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে। তাই কোনো চিকিৎসাও ছিল না। ভ্যাকসিনও ছিল না। আর এত দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে কেউ বুঝতেও পারেনি। তাই উন্নত রাষ্ট্রগুলোও ম্যানেজ করেতে হিমশিম খায়। করোনাভাইরাস ছাড়াও অন্য ধরনের ভাইরাসের উপসর্গ কিংবা গতিবিধি একই ধরনের। তবে এই ভাইরাসে দেখা গেল মৃত্যুটা বেশি। যারা বয়স্ক মানুষ এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত যেমন হার্ট, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস এবং ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা বেশি ভুগছে। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রথমদিকে বেসামাল ছিল, পরে সামলে নিয়েছে। প্রস্তুতি দুর্বল ছিল। শুরুর দিকে সবচেয়ে দুর্বল ছিল রোগী পরীক্ষা করা, রোগী ম্যানেজমেন্টের সিস্টেম ফলো করা। কারণ করোনার প্রথম চিকিৎসা হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা এবং দূরত্ব বজায় রেখে ভিড় এড়িয়ে চলা। এক্ষেত্রে শুরুর দিকে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ কিছুটা অসহযোগিতা করলেও পরে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছে। 

সময়ের আলো : করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্য খাত কতটুকু সফল বলে মনে করেন? 

ডা. কামরুল হাসান খান : বিশ্বে ইতোমধ্যে চারবার করোনার ঢেউ এসেছে। বাংলাদেশেও তৃতীয় ঢেউ হয়ে গেল। আর করোনা মোকাবিলায় যে সমস্ত দেশ সফল হয়েছে যেমন চীন, যেখান থেকে করোনার শুরু, তারা তিন মাসে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও পরে আবার আক্রান্ত হয়েছে। আর দক্ষিণ অফ্রিকা উদাহরণ সৃষ্টি করলেও তারাও সমস্যায় পড়েছে। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো; যেমন আমেরিকা, ফান্স, রাশিয়া, জার্মানি এবং ব্রাজিল। সেই তুলনায় আমরা তো উন্নয়শীল দেশ, পুরো সক্ষমতা নেই। নানাভাবে সমালোচনা পর্যালোচনা করি আমরা। তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকার ব্যবস্থা ভালোই করেছে। আর চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে। কারণ করোনাকালে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বের মধ্যেই স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। 

সময়ের আলো : করোনা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় কী? 

ডা. কামরুল হাসান খান:  করোনা ব্যবস্থার মধ্যে দেশের কিছু দুর্বলতার চিত্র সামনে চলে এসেছে। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনের দিকে আমাদের ওভারঅল স্বাস্থ্যব্যবস্থার যেন সংশোধন করে সেই প্রত্যাশা থাকবে। করোনা দুর্বলতার জায়গাগুলো আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছে। 


সময়ের আলো : করোনা কি চলে যাবে এবার?সময়ের আলো : করোনা কি চলে যাবে এবার?

ডা. কামরুল হাসান খান : এটা ধরে নেওয়া যাবে না, করোনা আর ফিরে আসবে না। গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা বলে, সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে বৃদ্ধি পায়। নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসবে কি না তাও বলা যায় না। কারণ এটা মিউট্রেশান হয়। আবার যদি নতুন কোনো ভয়ঙ্কর ভাইরাস আসে। আমাদের ধারণা, গোটা বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষকে যদি করোনার টিকা দেওয়া যায় তাহলে আস্তে আস্তে করোনা চলে যাবে। তবে এখনও তো যায়নি। এক দেশ থেকে অন্য দেশে আমদানি হয়, সংক্রমিত হয়। তাই এখনই ভাবা যাবে যে করোনা চলে গেছে। 

সময়ের আলো : ভবিষ্যতে মহামারি এলে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে?

ডা. কামরুল হাসান খান : করোনার বাইরেও আরও বহুবিধ সমস্যা আছে। স্বাস্থ্যের বাইরেও যেমন শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস। অনেক দেশেই ধস নামছে। কিন্তু আমাদের দেশের অর্থনীতিতে সেই ধস নামেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনেকটাই সামাল দেওয়া হয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে, এমনকি বাজেটও বাড়ানো হয়েছে। যদিও এই সময়ে মধ্যবিত্ত মানুষের চরম কষ্ট হয়েছে, কিছু মানুষ দরিদ্র হয়েছে, কর্মহীন এবং বেকারও হয়েছে। সব মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তবে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক থাকতে হবে কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তাই বয়স্কদের সচেতন থাকতে হবে। তবে আমরা আশাবাদী যে টিকা নেওয়ার কারণে করোনা বেশ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে আমাদের আরও পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

সময়ের আলো : দেশে করোনার টিকা ব্যবস্থার মূল্যায়ন কীভাবে করবেন? 

ডা. কামরুল হাসান খান : ভ্যাকসিন প্রদানে বাংলাদেশ দশম অবস্থানে রয়েছে, যা বাংলাদেশের মতো দেশের অত্যন্ত গৌরবের। তা ছাড়া দেশে এখনও পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে সাড়ে ১২ কোটির ওপরে মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ৮ কোটির ওপরে এবং বুস্টার ডোজ পেয়েছে ৪০ লাখের ওপরে। এখন পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা ভালোই হয়েছে। আর রোগী শনাক্তের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯১ শতাংশে। আজকে যে সিদ্ধান্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন যে, ১২ বছরের নিচের শিশুদেরও টিকা দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল, সেটা হয়তো পেয়েছে বলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সময় নিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন। ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমরা সফলতা আশা করতেই পারি। টিকার ব্যবস্থাপনা খুবই সন্তোষজনক। 
দেখা গেছে, যারা মারা গেছে তাদের ৮০ শতাংশই ভ্যাকসিন নেয়নি। আর যারা ভ্যাকসিন নেয়নি আমরা চিকিৎসক হিসেবে দেখেছি, তারা গাফিলতির জন্য ভ্যাকসিন নেয়নি। আর ভ্যাকসিন নেয়নি এমন মানুষ আমেরিকা-ইউরোপে যেমন আছে, তেমনি আমাদের দেশেও রয়েছে। তারা ভ্যাকসিন না নেওয়াকে অধিকার মনে করে। তবে যারা ভ্যাকসিন নেয়নি তারাই বেশি মারা গেছে। 

সময়ের আলো : করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সমস্যা এবং পরিকল্পনায় কী ধরনের ঘাটতি ছিল আপনার দৃষ্টিতে? 

ডা. কামরুল হাসান খান : আমাদের দেশে চিকিৎসকের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের ম্যানেজমেন্টের কিছু দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের নার্সিংয়ের সংখ্যা অপ্রতুল। এর মধ্যেও যা সরকার দিয়েছে তা যথেষ্ট সন্তোষজনক। পরিকল্পনা নিয়ে আমরা চিন্তিত না যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন আছে, সে অনুযায়ী আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তা বাস্তবায়ন করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে দুটি সমস্যা। একটা হলো সমন্বয়ের অভাব, আর অন্যটি হলো নেতৃত্বের সঙ্কট। যেহেতু এটা বৈশ্বিক মহামারি, আন্তর্জাতিকভাবেই হোক আর জাতীয়ভাবেই হোক, এটা সমন্বিত কাজ। এক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একা সবকিছু মোকাবিলা করতে পারবে না। গাইডলাইনে প্রথম থেকেই বলা আছে যে এটা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কাজ। যখন কোনো আইন প্রয়োগের জন্য কোনো আদেশ দেওয়া হয় তখন তো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা লাগবে। এটা আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পারবে না। এই সমন্বয়ের জায়গাটায় দুর্বলতা রয়েছে। আর নেতৃত্বের সঙ্কট চরমভাবে দেখেছি। যেমন নেতৃত্বের মাধ্যমে সুপারভিশন করা, মনিটর করা, সঠিকভাবে ফলোআপ করা এবং সময়োচিত সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর এসব ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখা গেছে। আশা করি ভবিষ্যতে এই সমস্যাগুলো থাকবে না। তা ছাড়াও জনগণের সহযোগিতার জায়গাটা আরও বাড়াতে হবে। 

সাংবাদিক





সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close