১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যখন ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর বিজয় লাভ করে তখন দেশটির চেহারা যারা দেখেছিলেন তাদের এখনও হয়তো মনে আছে। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসন, শোষণ, অর্থনৈতিক বঞ্চনার কারণে এমনিতেই ছিল পিছিয়ে। এর ওপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধ দেশের রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর, শিল্প, কলকারখানার অনেক কিছুই ধ্বংস করে দিয়েছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণহত্যা এবং পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করেছিল। অর্থনীতি এক বছর একেবারে বন্ধ ছিল।
ফলে আমাদের স্বাধীনতা অনেক ত্যাগ, ক্ষয়ক্ষতি এবং অনেক মানবিক বিপর্যয়ের বিনিময়ে কেবল অর্জিত হয়েছিল। এক কোটি মানুষ ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা ফিরে এসে রাত কাটানোর মতো বাসস্থানও ছিলো না। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তাই তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে অভিহিত করেছিল। এটি আমাদের জন্য ছিল গ্লানিকর। তবে এই দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করতে হেনরি কিসিঞ্জারদেরও দায় কম ছিল না। তারা পাকিস্তানকে অন্ধের মতো সমর্থন করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধের নয় মাস যেসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করেছিল তা কিসিঞ্জার সাহেবের মোটেও অজানা ছিল না।
কিন্তু বিশ্বের প্রধান ধনী এবং অন্যতম পরাশক্তি হয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সামান্যতম বিবেক বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের প্রতি সাড়া দেয়নি। এটিকে কোন গণতন্ত্র বা উন্নত দেশ ও জাতির সংজ্ঞায় ফেলা যাবে তা নির্ণয় করাই বোধহয় বেশ কঠিন। হেনরি কিসিঞ্জার জেনে-শুনেই এমন বিদ্রূপ উচ্চারণ করেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে। বিশ্বের আরও অনেক দেশ নীরবতা পালন করেছিল। পাকিস্তানকেই তারা সমর্থন করেছিল। ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু তাদের কাছে যেন কিছুই নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশ যখন বিজয়ের পতাকা হাতে তুলে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করে তখন পাশে দাঁড়াতে আসেনি অনেক রাষ্ট্র, ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ দাবিদার সরকারও!
তারপরও বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের হাল ধরেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশের করুণ পরিণতি দেখে মনে কষ্ট পেয়েছিলেন সত্য কিন্তু সাহস মোটেও হারাননি। তিনি এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হাত দিলেন, যেটি চরিত্রগতভাবে হবে আধুনিক, আদর্শগতভাবে হবে গণতান্ত্রিক, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক এবং জাতীয়তাবাদের উদারবাদী- এককথায় একটি আধুনিক জাতি- রাষ্ট্র। বিশ্বে তখন কেবলমাত্র কয়েকটি পশ্চিমা রাষ্ট্রই জাতি-রাষ্ট্রের রাজনীতি অনুসরণ করে একটি মর্যাদার স্থান করে নিতে পেরেছিল। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন তেমনি একটি কল্যাণবাদী জাতি-রাষ্ট্র। স্বীকার করতেই হবে ধ্বংসস্তূপের সেই অবস্থা থেকে জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজটি মোটেও সহজে অর্জিত হওয়ার ছিল না। এর জন্য নীতি কৌশল, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি কাজ ছিল। তা ছাড়া যেহেতু এই ভূখণ্ডটি পরাধীন ছিল। স্বাধীন রাষ্ট্রের কোনো ধারণা বা কাঠামোগত ভিত্তি অনুপস্থিত ছিল, মাত্র ২৩ বছর পাকিস্তান নামক একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের নিগড়ে আবদ্ধ ছিল তাই এখানে একটি আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার কাজ খুবই জটিল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার দর্শনকে ধারণ করার রাজনীতি, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা তৈরি, জনমানুষকে এভাবে পরিচালিত করা ব্যতীত আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্মাণ করা বেশ কঠিন ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই কঠিন কাজটি সাধন করতে চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৯৪ ডলার। এত কম মাথাপিছু আয়ের দেশকে তখন দারিদ্র্যপীড়িত দেশ হিসেবে সকলেই অভিহিত করছিল। ৯০ শতাংশ মানুষই তখন দুবেলা পেট পুরে খাওয়ার অবস্থানে ছিল না। আমাদের কোনো বিদেশি রিজার্ভ ছিল না। নতুন মুদ্রাব্যবস্থা চালু করতে হয়েছে। তারপরও বঙ্গবন্ধু ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করে দিলেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা এবং শহীদদের ভাতা, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং রেশনিং প্রথাসহ সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। মোটা দাগে তিনি যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তার একটি হলো একটি আধুনিক জাতি-রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে পরিচালিত সংবিধান ৯ মাসের মধ্যে প্রদান করার ব্যবস্থা করলেন।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি গ্রহণ করা হলো, তা হলো প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন। এটি একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশল যা দেশে
কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জনগণের কল্যাণে পরিচালিত হবে। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ছিল, গোটা জাতিকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে দিলেন। ১৯৭৩ সালেই তিনি প্রায় ৩৮ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছিলেন। এর মাধ্যমে সকল শিশুর প্রাথমিক শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। দেশে যেসব কলকারখানা পশ্চিম পাকিস্তানের মালিকরা ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন সেগুলো রাষ্ট্রের হাতে পরিচালনার ভার অর্পণ করলেন। উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানায় বৃহৎ শিল্পগুলো পরিচালিত করা। কারণ পূর্ব বাংলায় তখনও বৃহৎ শিল্প পরিচালনা করার মতো ধনিক, অভিজ্ঞ, শিল্পপতি এবং বণিক শ্রেণি ছিল না। সুতরাং ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের বিকাশ সাধিত হওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে শিল্প ও বাণিজ্য অর্থনীতি বিকাশ লাভ করার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছিল কৃষি অর্থনীতির ওপর। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য পূরণে সরকারি নীতি কৌশল থাকলেও দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাস্তবতা প্রতিকূলে ছিল। তখনও কৃষিতে উন্নত ফলন, চাষবাস এবং প্রাণিজ ও মৎস্য শিল্পের বিকাশে উদ্যোগ গ্রহণ করার মতো পুঁজি ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের হাতে খুব বেশি ছিল না।
তারপরও উন্নয়ন কৌশল প্রণয়নে সরকারের সদিচ্ছা ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের এক বছরের অর্থনৈতিক ধ্বংস, ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বন্যা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ওপর বড় ধরনের অভিঘাত হিসেবে ক্রিয়াশীল ছিল। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠী বাংলাদেশকে ঋণ কিংবা সাহায্য প্রদানে খুব বেশি উদারতা প্রদর্শন করেনি। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উগ্র ডান, বাম এবং হঠকারী শক্তির উত্থান একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ওইসব শক্তি ব্যাংকলুট, পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ, ধনীদের গলা কাটা নীতি অনুসরণ, সরকার উৎখাত এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির ব্যাপক উদাহরণ তৈরি করে। সাম্প্রদায়িক এবং ভারতবিরোধী প্রচারণা অনেক পুরনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও করা হতে থাকে। যেখানে প্রয়োজন ছিল জাতীয় ঐক্যের সেখানে তা ঘটেনি। রাজনীতিতে ঐক্যের ধারণা ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হচ্ছিল, বরং বিরোধিতাই বীরত্বের লক্ষণ বলে সমাদৃত হচ্ছিল।
অথচ তখন রাষ্ট্রের কোষাগার ছিল ঋণাত্মক। সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর চাহিদা পূরণ করার অর্থ রাষ্ট্রের কোষাগারে ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজেদেরকে উৎসর্গীকৃত করার যে মনোবৃত্তি প্রদর্শিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে তাতে নানা বিভাজন, ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার অভিযোগ ইত্যাদি ক্রমেই জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরাতে থাকে। সে অবস্থায় দেশি এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের নানা গোপন পরিকল্পনা দেশের অভ্যন্তরে চলতে থাকে। এর সঙ্গে হাত মেলায় দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠী। ১৯৭৪-এ দেশে খাদ্য সঙ্কট বেড়ে যায়। বিশ্ববাজারে তখন খাদ্যের অভাব তীব্র ছিল। সে কারণে প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানি করা বা সাহায্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এর ফলে দুর্ভিক্ষ রোধ করা সম্ভব হয়নি। প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারান বলে অভিযোগ আছে। সেই অবস্থায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্য গঠনের উদ্যোগ নিলেন, গঠন করলেন নতুন রাজনৈতিক প্লাটফরম। প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হলো। কৃষিতে বহুমুখী সমবায় সমিতি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হলো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নেওয়া হলো। গোটা রাষ্ট্রকাঠামোকে শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালেই দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করে। প্রবৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশে এবং মাথাপিছু আয় ২৯৩ ডলারে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক দরিদ্র দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করে। বলা চলে বাংলাদেশ উন্নয়নের সড়কে তখন চলতে শুরু করেছিল। এটি যদি অন্তত এক দশক নির্বিঘ্নে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ পেত তা হলে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী শক্তি বাংলাদেশের বিকাশের এই সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করে দিতেই রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন ঘটাতে গোপনে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করে। ১৫ আগস্ট সেই বিয়োগান্ত ঘটনারই স্বাক্ষর বহন করে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, বিয়োগান্ত ঘটনা এবং পরবর্তী ক্ষমতা দখল, সামরিক শাসন এবং রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক উল্টো পথে পরিচালিত হওয়ার ঘটনা স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ এবং আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রাকে সম্পূর্ণরূপে কক্ষচ্যুত করেছে। বাংলাদেশ এক দীর্ঘ সামরিক ও বেসামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে, একই সঙ্গে হারিয়েছে অভিজ্ঞ দেশপ্রেমিক, পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদদের, যারা ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশটাকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক এবং আদর্শগতভাবে উদারনৈতিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইতিহাসের করণীয় ও স্মরণীয় ভূমিকা পালন করতে পারতেন।
১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর সামরিক-আধা-সামরিক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলাদেশ সকল অর্থেই তার সম্ভাবনার সব সুযোগ হারিয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক, রক্ষণশীল, প্রতিক্রিয়াশীল, পশ্চাদমুখী ও সুবিধাবাদী রাজনীতির উত্থানের যে অবাধ ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তার ফলে সাড়ে তিন বছরের অর্জনের চাকা শুধু থেমেই যায়নি, পশ্চাদমুখীও হয়েছে। এখন খুব বস্তুনিষ্ঠভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তুলনামূলক বিশ্লেষণ দাঁড় করালে স্পষ্ট দেখা যাবে বাংলাদেশ ১৯৭৫-পরবর্তী সময় থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন, অগ্রগতির সূচকে গতির চেয়ে বেগতিরই প্রমাণ বেশি দেখতে পাবে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে দেশটি এই দীর্ঘ সময়ে পায়নি কোনো যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে, যারা আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, শিক্ষা, প্রশাসন ও সামাজিক উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক কোনো দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত এমন একটি দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব, অদক্ষ, অযোগ্য এবং পাকিস্তানি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী কিংবা নানা বিভ্রান্তবাদী ধারণা দ্বারা পরিচালিত বনে যাওয়া ‘শাসকগোষ্ঠী’ দ্বারা অর্জিত হওয়া সম্ভব নয়। সেটি বাস্তবে ঘটেওনি। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে যে মাথাপিছু আয় এবং প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করেছিল, পরবর্তী ২১ বছরের কোনো শাসকই সেই অর্জনের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি। অধিকন্তু বাংলাদেশকে বিদেশ নির্ভরশীলতায় অনেকটাই পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের বাৎসরিক বাজেট প্রণয়নে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কনসোর্টিয়াম বৈঠকে যে ঋণ প্রদান করা হতো তা বাজেটের মোট বরাদ্দের সিংহভাগ ছিল। কিন্তু তাতে দেশে উন্নয়ন ঘটেনি, ঘটেছে লুটপাটের অর্থনীতি। দেশে বেসরকারি খাত অপরিকল্পিতভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে এক ধরনের লুটপাটের অর্থনীতি চালু হয়েছিল যার সুফল মুষ্টিমেয় কিছুসংখ্যক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পেলেও বৃহত্তর জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচেই অবস্থান করেছে। দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে এককভাবে সুবিধা প্রদানের ফলে উদারবাদী রাজনীতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে কার্যত উদারবাদী গণতন্ত্র কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র কার্যত দ্বিতীয় পাকিস্তান রাষ্ট্রে পরিণত হয়। গোটা সমাজব্যবস্থায় স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনার বিকাশ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। গোটা শিক্ষাব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয় সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ, বহুধাবিভক্ত অপরিকল্পিত, অগ্রহণযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার হিড়িক। এখান থেকেই সৃষ্টি হতে থাকে বহুধারার শিক্ষাব্যবস্থা, পরিত্যাজ্য হয় একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা। এর ফলে জাতি-রাষ্ট্র গঠনের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি থেকে বাংলাদেশকে নিক্ষিপ্ত করা হয় এক বহুধাবিভক্ত মতাদর্শিক রাজনৈতিক রাষ্ট্রে যেখানে গণতন্ত্রের চর্চা সুদূরপরাহত হওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। বাংলাদেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক অবিশ্বাস, অনাস্থা, বিভাজন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত আগ্নেয়গিরির মতো ভেতরে লাভা জমিয়ে রেখেছে সেটি ১৯৭৫-পরবর্তীকালের শাসকগোষ্ঠীর অবিমৃশ্যকারিতার কুফল ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলাদেশকে ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা দখলকারী গোষ্ঠী আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যে বিভাজিত করার যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে তা এখন দূর করা মোটেও সহজসাধ্য কাজ নয়। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে ক্ষমতার অভ্যন্তরে নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত এত জটিল আকার ধারণ করেছিল যে এর ফলে হত্যা, অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান এবং স্বৈরশাসন বাংলাদেশের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
১৯৭৫ থেকে ৯০ পর্যন্ত দুই পর্বের সামরিক স্বৈরশাসন দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে দুর্বল করেছে তা থেকে মুক্ত হওয়া কিংবা আধুনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য পরবর্তীকালে দুরূহ হয়ে পড়েছে। ১৯৯১ সালে তথাকথিত যে গণতান্ত্রিক ধারায় উত্তরণ রাজনীতি ও রাষ্ট্রযন্ত্রে ঘটেছে তা কার্যত ১৯৭৫-উত্তর রাজনীতির লিগেসি বহনের চৌহদ্দি অতিক্রম করার ক্ষমতা রাখেনি। সমাজ ও রাষ্ট্রে এই সময়ে যেসব প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল তাই ১৯৯১-উত্তর পরিবর্তনের নিয়ামক চরিত্রের সহজাত বৈশিষ্ট্যরূপে স্থায়িত্ব লাভ করেছে। এর ফলে গণতন্ত্রের উত্তরণ যতটা নামে ঘটেছে, বাস্তবে এর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা হাঁটু ভেঙে পড়ার কারণে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সমাজ ও রাজনীতিতে যে গভীর ক্ষত ও প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে বের হয়ে আসার মতো রাজনৈতিক শক্তি এককভাবে দাঁড়াতে পারেনি। রাজনীতিতে নতুন কোনো ভিশনারি-মিশনারি নেতৃত্ব আবির্ভূত হতে পারেনি। অপেক্ষাকৃত উদারবাদী রাজনৈতিক শক্তিকেও অনেক ক্ষেত্রে আপস করতে হয়েছে ১৯৭৫-উত্তর বেড়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক মনোভাবের কাছে। দেশে রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ উদারবাদী রাষ্ট্রচিন্তায় ফেরা খুবই কঠিন এবং জটিল আকার ধারণ করে। নানা বিভ্রান্তি এবং বিভাজন জাতি রাষ্ট্রকে পেছনের দিকে টেনে ধরছে। এমন এক জটিল রাজনৈতিক বাস্তবতায় ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার সুযোগ লাভ করে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল শেখ হাসিনার শাসনকাল ছিল বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী এবং ১৯৭৫ -পূর্ববর্তী শাসনের আংশিক প্রত্যাবর্তন। পরিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন মোটেও সম্ভব ছিল না। কারণ দীর্ঘ ২১ বছরের পরিবর্তনকে উপেক্ষা করা কিংবা গঠিত বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দুই দশক পূর্ববর্তী উদ্যোগ, পরিকল্পনা, চিন্তাধারা ইত্যাদিকে ফিরিয়ে আনা মোটের ওপর অসম্ভব ব্যাপার ছিল। তারপরও শেখ হাসিনার সরকার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বাভাবিকীরণ, গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পাদন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি প্রতিষ্ঠা, কৃষি অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয় কোনো কোনো শিল্প ও বাণিজ্যে উদারনীতি, বিদেশ নির্ভরশীলতা হ্রাসকরণ এবং দেশীয় উদ্যোগ, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি কর্মসূচি প্রণয়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক রাজনীতিতে ভারসাম্যমূলক নীতি-কৌশল প্রবর্তন করার ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থা নতুনভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। অর্থনীতিতে উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, শিক্ষার সম্প্রসারণ উল্লেখযোগ্য হারে ঘটে। ১৯৯৮ সালে স্মরণকালের দুযোর্গপূর্ণ বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আশ্চর্যজনকভাবে সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়। সেই সময় প্রবৃদ্ধির হার ৫-৬ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করেছিল যা পূর্ববর্তী দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে অর্জিত হতে দেখা যায়নি। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেই শুধু নয়, রাজনীতিতেও বড় ধরনের পশ্চাদপসরণ ঘটে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধারবাহিকতা লঙ্ঘিত হয়। দেশে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং সরকারের কঠোর রক্ষণশীলতা বাংলাদেশকে আগেরকার সকল বাস্তবতার চেয়েও জটিল এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে শেখ হাসিনা দিনবদলের সনদ ম্যানিফেস্টো জাতির সম্মুখে উত্থাপন করেন। এতে ২০২১ সালকে টার্গেট করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পরিকল্পনা রূপকল্প আকারে দিনবদলের সনদ উপস্থাপিত হয়। নির্বাচনে তার দল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করার পর শেখ হাসিনার সরকার দেশের অর্থনৈতিক ব্যাপক পরিবর্তনের লক্ষ্যে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন তা ছিল একটি ঐতিহাসিক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ ইতঃপূর্বে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এতটাই পিছিয়ে পড়েছিল যে, অর্থনীতির চাকা সচল করার কোনো উপায় ছিল না। মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের অন্ধকার ঘুচিয়ে আনা মোটের ওপর অসম্ভব ব্যাপার ছিল। সেখানে একের পর এক স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি নানা ধরনের বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করতে থাকে। এর ফলে দেশের অর্থনীতির চাকা দ্রুত সচল হতে থাকে।
বিশেষত শিল্প, কৃষি অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি দ্রুত বাংলাদেশে জায়গা করে নিতে থাকে। বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া নতুনভাবে জায়গা করে নেয়, এনালগ পদ্ধতি দ্রুত অকার্যকর হয়ে পড়ে। সরকার কৃষিতে ব্যাপক ভর্তুকি ও প্রণোদনা দেওয়ার ফলে শুধু কৃষি উৎপাদনই বাড়েনি, গ্রামীণ অর্থনীতিও আমূলভাবে পরিবর্তিত হতে থাকে। এই সময় দেশে প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগতভাবে ঊর্ধ্বগতি লাভ করতে থাকে, দেশের গার্মেন্টস শিল্প বিশ্বমানে উন্নীত হয়। এ ছাড়া ওষুধ শিল্প, মৎস্য চাষ, কৃষিতে বহুমুখী চাষাবাদ, বিদেশে জনশক্তি রফতানিতে উদ্যোগ গ্রহণ, শিক্ষায় ব্যাপক সম্প্রসারণ লাভ, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ মাত্র এক যুগের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তনের ধারায় যুক্ত হতে সক্ষম হয়। ২০০৮ সালে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৬৮৬ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয় ছিল ৯ হাজার ৬৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম ৫ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৬০ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশের রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করে। বর্তমানে এটি ৪ থেকে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে, খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে, বাংলাদেশ পোশাক রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টিতে বিস্ময়কর নজির স্থাপন করেছে, অর্থনীতির সকল সূচকেই বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় উন্নতি লাভ করেছে।
দেশে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল মেগা প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি সম্পন্ন হওয়ার পথে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করেছে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও লাভ করেছে। গত দুই বছর করোনার অতিমারি সংক্রমণকালেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। দেশব্যাপী সকল মানুষকে বিনামূল্যে টিকা প্রদান করা হচ্ছে, নানা ধরনের প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সহযোগিতা প্রদান করেছে। উন্নয়নের এসব তথ্য নানাভাবে প্রদর্শন করা যেতে পারে। এককথায় গত এক যুগে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। এর অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তার কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষেরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
নতুবা পৃথিবীর সবচেয়ে জনঘনবসতিপূর্ণ দেশটিতে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটলে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে তাতে শুধু সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যই নয়, মানুষের জীবনও বিপন্ন হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়া মোটেও রোধ করা যাবে না। কেন না আমাদের দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি সবেমাত্র ঘটতে শুরু করলেও রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, সহনশীলতা ইত্যাদি সমন্বিতভাবে গড়ে তোলার যে ব্যাপক আয়োজন অতীব জরুরি সেটি এখনও পুরোপুরি শুরু করা যায়নি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে সামগ্রিক বিষয়ে এসব পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটিয়ে জনগণের জীবনমান বৃদ্ধির সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও গুণগত রূপান্তর ঘটাতে হবে। সেই কাজটিই আগামী দিনের নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে হবে।
ইতিহাসবিদ