আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৃণমূল কর্মীরাই দলকে ধরে রেখেছে। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, এরশাদ, জিয়া সব আমলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। শত নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সংগঠন কিন্তু সবসময় শক্তিশালী। আওয়ামী লীগ বিশেষ করে আমাদের মাঠকর্মীরা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। তারা কিন্তু পার্টিটাকে ধরে রাখছে। এ কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে।
সোমবার টুঙ্গিপাড়া সফরকালে দুপুরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনি এলাকা কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
এ আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ, টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুলসহ টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা-বাবার দোয়া আছে, ওপরে আল্লাহ আছেন। আর আমার সব থেকে বড় শক্তি কিন্তু আপনারাই। প্রত্যেকটি কাজ আমরা পরিকল্পিতভাবে করে যাচ্ছি বলে আজকে বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে। সফলভাবে করোনা মোকাবিলার প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, এই করোনার সময় উন্নত দেশ, যাদের অনেক টাকা, কই তারা তো কেউ বিনাপয়সায় ভ্যাকসিন দেয়নি; কিন্তু আমরা দিতে পেরেছি। সবাই মিলে একযোগে কাজ করতে পেরেছি বলে আজকে করোনা মোকাবিলা, বন্যাসহ যেকোনো অবস্থা আমরা মোকাবিলা করতে পারি। এই দেশটা তো আমি চিনি। দেশটা জানি। জাতির পিতা কিন্তু নিজের জন্য দল করেননি। নিজের ক্ষমতার লোভে বা অর্থ-সম্পদের দল করেননি। তিনি দল করেছেন দেশের সাধারণ মানুষের জন্য। কাজেই আমার যেটুকু আছে তা যদি একটা মানুষকে দিতে পারি আর সে যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এটাই আমার সার্থকতা।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে চলতে হবে। পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা তো ক্ষমতায় এসেছে খাওয়া পার্টি হিসেবে, দেওয়ার জন্য নয়। আর আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে মানুষকে দিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জন্য করে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য। মানুষের শক্তিটাই আমার কাছে বড় শক্তি। অন্য কোনো শক্তি নয়। বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে, মারার চেষ্টা করেছে, পারেনি। বেঁচে গেছি। আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ হায়াত দেন তাকে দিয়ে কিছু কাজ করাতে। আমি হয়তো সেই হায়াত পেয়েছি, বলেই কাজ করতে পারছি। আজকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে চলে আসছি। মা-বাবা সব হারিয়ে এই মানুষের কাছেই তো আসছি। মানুষের ভালোবাসা-দোয়া না থাকলে এতদূর আসতে পারতাম না। বিএনপির সময় আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, জেল-জুলুম হয়েছে। অনেক মানুষ মারা গেছে, অনেক লাশ হারিয়ে গেছে।
অনুন্নত দক্ষিণ ও উত্তর অঞ্চলের অবস্থা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখন সবচেয়ে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল। উত্তরাঞ্চল ছিল মঙ্গাকবলিত এলাকা। তখন মানুষের (উত্তরাঞ্চল) গায়ে মাংস ছিল না। তাদের খাবার ছিল না। রোগের চিকিৎসা ছিল না। আর প্রতিবছর দুর্ভিক্ষ হতো। তখন থেকে আমার একটা প্রতিজ্ঞা ছিল যখন সুযোগ পাব, তখন দেশের জন্য কাজ করব। এখন উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা নেই। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। আমি চাই এদেশের কোনো মানুষ গরিব থাকবে না। কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না। পদ্মা সেতু হয়ে গেছে। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলটা অর্থনৈতিকভাবে যাতে উন্নত হয়। দেশের জন্য যতটুকু কাজ করা দরকার, ততটুকু করে যাব। এটা হচ্ছে আমার অঙ্গীকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জুন উদ্বোধনের পর সোমবার প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তার পৈতৃক নিবাস পরিদর্শন করেন এবং জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও প্রার্থনা করেন। সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে ফাতিহা পাঠ করেন ও জাতির পিতা এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাযজ্ঞের অন্য শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাতে যোগ দেন।
এর আগে সকাল ৮টায় ঢাকার গণভবন থেকে সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুতে কিছুক্ষণ থামে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মোবাইলে পদ্মা সেতুতে সেলফিও তোলেন পরিবারের সদস্যরা। পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে তিনি গোপালগঞ্জ সদরে পৌঁছেন। প্রধানমন্ত্রী ৩ ঘণ্টারও বেশি সময়ে সড়কপথে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছেন।
টুঙ্গিপাড়া সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরটি বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকায় উদ্দেশে যাত্রা করে। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটের সময় টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পার হন প্রধানমন্ত্রী। পথে কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই বিকাল সাড়ে ৫টায় (২ ঘণ্টায়) গণভবনে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর।