ই-পেপার শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

জ্বালানি তেলের নজিরবিহীন দাম বৃদ্ধি
মানুষের জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে
প্রকাশ: রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:৩১ পিএম  (ভিজিট : ২৩৩)
আবারও বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম। এই দাম বৃদ্ধি যে আকস্মিক এমনটি বলা যাবে না। কেননা বেশ কিছুদিন ধরেই দাম বৃদ্ধির প্রস্তুতি চলছিল। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শুক্রবার বিকালেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। আর সেই বৃদ্ধির মাত্রা হবে ‘যৌক্তিক’ এবং ‘সহনীয়’। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তেলের দাম বাড়াল সরকার। মূল্যবৃদ্ধির হারের দিক থেকে যা নজিরবিহীন। ডিজেল ও কেরোসিনের ক্ষেত্রে লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে ৩৪, পেট্রোলে ৪৪ এবং অকটেনে বেড়েছে ৪৬ টাকা। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকেই নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।
এমন একটি সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো যখন সাধারণ মানুমহামারির আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি এবং  রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাবে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এমতাবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার দাম স্বাভাবিকভাবে আরও বাড়বে। অর্থাৎ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রা ও নিত্য ব্যয়ের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
 
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ডিজেলের দাম হবে প্রতিলিটার ১১৪ টাকা, যা এতদিন ছিল ৮০ টাকা। কেরোসিনের দামও একই হারে বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম ডিজেলের সমান অর্থাৎ ১১৪ টাকা। বাড়ানো হয়েছে পেট্রোল ও অকটেনের দামও। পেট্রোলের নতুন দাম প্রতিলিটার ১৩০, যা এত দিন ছিল ৮৬ টাকা। অকটেনের দাম ৮৯ থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেছেন, ডিজেলের দাম বিশ্ববাজারে ব্যারেলে ১৭০ থেকে ১৩০ ডলারে নেমেছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে ১০০ ডলারের মধ্যে এসেছে। এই দাম এ বছর ৭০ থেকে ৮০ ডলারে নামতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এমন সময় হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব। ভারতের সঙ্গে দামের পার্থক্য সবসময় ছিল। এখন পাচারের প্রশ্ন তোলা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। দাম কিছুটা বাড়ানো হবে, এ আশঙ্কা ছিল। তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা অনেকেরই চিন্তার বাইরে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ দফায় দাম বাড়ানোর পর জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ভর্তুকি একবারে কমে আসবে। সরকার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো, জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সেই শর্ত পূরণ করা হয়েছে।
 
আমরা মনে করি, এমনিতেই দেশের নিম্ন আয়ের মানুএবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিদারুণ কষ্টে আছে। ইতঃপূর্বে প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়েছে, দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ। জ্বালানির দাম বাড়ানোয় আবারও বড় ধরনের ধাক্কা খাবে নিম্ন আয়ের মানুও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অন্যদিকে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের কৃষি ও কৃষকের ওপর। কারণ কৃষিতে সেচ দেওয়ার মেশিনের ব্যবহার করা হয় ডিজেল। এতে করে কৃষির উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। কয়েকদিন আগে সারের দামও বাড়ানো হয়েছে। কৃষকের ব্যয় বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে কৃষিজাত পণ্যের দাম। তাই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জ্বালানি মন্ত্রণায়ের উচিত ছিল জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া; কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এমনটি হচ্ছে না। তাই  আমাদের প্রত্যাশা, যত দ্রুত সম্ভব জ্বালানি তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা হবে।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close