প্রকাশ: সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২, ৯:৪৭ পিএম আপডেট: ০৮.০৮.২০২২ ৯:৪৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ Count : 387
আসাদুল্লাহ নুমান। বেসরকারি একটি সংস্থায় নির্বাহী পদে চাকরি করেন। বাবা, মা, দুই ছেলে এবং স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। চাকরি থেকে বেতন পান সাকুল্যে ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যেই তার সমস্ত খরচ নির্বাহ করতে হয়। আগে কোনও রকম টেনেটুনে সংসার চললেও এখন কোনওভাবেই এ বেতনে চলে না। তাই সংসারের হিসাব মেলাতে প্রতিমাসেই ঋণ করতে হয় বলে জানান তিনি।
নুমান সময়ের আলোকে বলেন, বেতন পাই ২৪ হাজার। বাসা ভাড়া ইউটিলিটিসহ দিতে হয় ৯ হাজার টাকা। বড় ছেলেটা ক্লাস ওয়ানে পড়ে। ছোট ছেলেটা এখনো পড়াশোনায় নেই। বাচ্চার স্কুলের খরচ মাসে প্রায় ২০০০ টাকা। বাজার খরচ করতে হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার। এর মধ্যে এখন মাংস খাওয়া বাদ দিয়েছি বললেই চলে। যদিও মাংস হয় তাও ব্রয়লার মুরগির। মাছ বলতে সরপুঁটি, কই এবং তেলাপিয়া। এর বাইরে ইলিশ তো কল্পনাতেও আসে না। শেষ কবে ইলিশ মাছ খেয়েছি মনেই পড়ে না। এরপর নিজের অফিসে যাতায়াত, পকেট খরচ চালাতে ঋণ করতে হয়। দাওয়াত বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যাই না। কোথাও বেড়াতেও যাওয়া হয় না।
মা-বাবা বয়স্ক। নানান অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। ছোট বাচ্চাটারও ডাক্তার দেখাতে হয় নিয়মিত। ডাক্তার দেখানো, ওষুধ খরচ এসব মেলাতে গিয়ে ঋণের অঙ্ক শুধু বাড়ছেই। প্রতিমাসেই বাজেট মেলাতে ঋণ করতে হচ্ছে। কিন্তু ঋণ আর শোধ করা হচ্ছে না। প্রতিবার নতুন নতুন কারো কাছ থেকে ঋণ খুঁজতে হয়। আগের ঋণ পরিশোধ করতে না পারার যন্ত্রণা তো থাকেই। পাশাপাশি এখন ঋণ দিবে কে? সবারই তো একই অবস্থা।
মধ্যবিত্তদের প্রায় সবার অবস্থাই নাজুক এ সময়ে। তাই সংসার খরচ মেটাতে সবাইকেই ঋণ করতে হচ্ছে। এছাড়া, সংসারের খরচ কমিয়ে আনা, ব্যক্তিগত খরচ বন্ধ করাসহ নানান চেষ্টায় টিকে থাকতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় চাকরির পাশাপাশি অন্য কোনও আয়ের সংস্থান করার উপর জোর দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামসুল ইসলাম।
তিনি সময়ের আলোকে বলেন, এখন বাজেট মেলাতে সবাই হিমশিম খাচ্ছে। মধ্যবিত্তসহ সবারই এক অবস্থা। এ থেকে উত্তরণে আপাতত কোনও উপায় নেই খরচ কমানো ছাড়া। কিন্তু খরচ তো আসলে বিভিন্ন কারণে বেড়ে যায়। এখন আপতকালীন সময়ের জন্য চাকরির পাশাপাশি অন্য কোনও আয়ের সংস্থান করতে হবে। কেউ যদি অফিস টাইমের পর সময় পায় তবে টিউশনি করিয়ে, কিংবা ছোটখাটো ব্যবসা করেও এর একটা বিহিত করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ঠিক এ সময়ে আসলে খুব বেশি কিছু করার থাকে না। দেখা যায়, বেতনের পাশাপাশি যদি আর কিছু টাকা আসে তবে ভালোভাবেই চলা যায়। এ জন্য স্ত্রীকে এখন ঘরে বসিয়ে না রেখে কোনও একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। অথবা এখন যেমন অনেক নারী রান্না করে পার্সেল সিস্টেমে খাবার বিক্রি করে, তাও করা যেতে পারে।
/জেডও