ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

ডিম কি এখন সোনার হরিণ?
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২, ১:২৫ পিএম  (ভিজিট : ১৯৯)
চিত্রনায়ক ওমর সানী তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আর তা হলো, ‘এক দিন বা এক সপ্তাহ ডিম না খেলে মানুষ মরে যায় না। ডিম পচনশীল’ এ কথা যেমন সত্য, তেমনি সত্য ডিমের অনেক পুষ্টিগুণ আছে। প্রতিদিন ডিম খেলে ১৫টি রোগ সারবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন পুষ্টিবিদ ডা. খোদেজা খাতুন। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা ও ডায়াবেটিসের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খাওয়া উচিত বলে মনে করেন এই পুষ্টিবিদ। তিনি জানান, ডিমে থাকে ভিটামিন ‘এ’ যা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে।

মুগদার মদিনাবাগে বসবাসকারী জাকিরের ছোট মেয়ের বয়স ফারজানা, এক বছরে পা দিতে চলেছে। তার জন্য প্রতিদিন একটা মুরগির ডিম চাই। কিন্তু সম্প্রতি তার প্রতিদিনের ডিম কেনা এখন হয় না। কেন হয় না? একটাই জবাব, দাম বেড়েছে। কতটুকু বাড়তে পারে জাকিরের ধারণা আছে। এখন যেন ধারণাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখন তার আর প্রতিদিন ডিম কেনা হয় না।

এক সময় বাসায় কোনো কিছু না থাকলে চটজলদি একটা ডিম ভেজে ভাত খেতেন আউয়াল। এখন তা আর হয় না। ডিম যেন তার নাগালের বাইরে চলে গেছে। ভাবতে অবাক লাগে, ডিমের ডজন ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই বৃদ্ধি কয়েকদিনের মধ্যে হয়ে গেল।

এ কথা সত্য যে ডিম পচনশীল। এরপরও ফরিদপুরে একটি উপজেলায় এক বন্ধুর জন্মদিন পালন করতে সবাই মিলে তার মাথায় পচা ডিম ভেঙেছিল। ভাগ্য ভালো তারা কম দামে ডিম পেয়েছিল। এখন সেই দামেও ডিম মিলবে না।

একটি ছবিতে কণ্ঠশিল্পী মো. খুরশিদ আলম গেয়েছিলেন, ‘ডিম ডিম মারো/ যত পারো জোরে মারো/ ধরে ধরে ভেজে খাবো’। সেই পচা ডিমও তো এখন পাওয়া যাবে না অল্প দামে।

ডিমের দাম বাড়ল কেন? এই প্রশ্নে ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ইউসুফ বলেন, এখন ১০০ ডিম কিনতে হয় ১ হাজার ১২০ টাকায়। তবে পাইকারিতে ১৪০ টাকায় ডজন বিক্রি করছি। এখন খামারি থেকে ডিম আমদানি কম হচ্ছে। মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। বিশেষ করে ভুট্টার দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।

ঢাকা শহরে কোথা থেকে ডিম আসে প্রতিদিন। এ প্রসঙ্গে অন্য এক ডিম ব্যবসায়ী জানান, মূলত গাজীপুর, হেমায়েতপুর, মাতুয়াইল, কেরানীগঞ্জ, ভুলতা ও কাঁচপুর থেকে ঢাকায় ডিম আমদানি হয়। মালিবাগের মোড়ে এক দম্পতি রাস্তায় বসে ডিম বিক্রি করেন। কয়েকদিন ধরে তারা আসছেন না। অনেক ক্রেতা তার কাছ থেকে বয়লার ডিম কেনেন। কিন্তু তাদের না দেখে জিজ্ঞেস করি পাশে বসা মাছ বিক্রেতাকে। তিনি জানান, ডিমের দাম বেশি হওয়ায় এখন তারা ডিম আনতে পারছেন না।

গাজীপুর জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এই জেলায় প্রতিবছর ডিমের চাহিদা হচ্ছে ৯১ কোটি পিস। আর প্রতিদিন উৎপাদন হয় ৩১ হাজারের কিছু বেশি। তিনি আরও জানান, এই জেলায় ছোট-বড় ৬ হাজার ৬৭১টি খামার রয়েছে। আর লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৪ হাজার ১০৬ ও ব্রয়লার ২ হাজার ৫৬০টি। ডিমের দাম বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে তার মন্তব্য হচ্ছে, ভুট্টা আমদানি কমে গেছে। আর সয়াবিনের খৈলের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে ডিমের দাম বেড়েছে।

অন্যদিকে গাজীপুরের কালীগঞ্জের দুলাল নামে এক খামারি জানান, মুরগির খাবারের দাম আগে যেখানে ছিল ৫০ কেজি ১ হাজার ৩০০ টাকা, এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এই দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা কমে গেছে। তিনি আরও জানান, গাজীপুর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় খামারিরা বিপাকে পড়েছে।

মালিবাগের ডিম ব্যবসায়ী আলম জানান, খামার থেকেই বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। সামনে দাম কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি জানান, শুধু যে মুরগির খাদ্যসামগ্রী বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়, পরিবহন ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে ভোক্তাদের আগের দামে ডিম সরবরাহ করা সম্ভব নয়।

/জেডও




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close