স্মৃতি সতত সুখের আবার দুঃখের। স্মৃতির জানালা খুলে চোখ মেলে দেখলে মনের গভীরে একধরনের আড়োলন তোলে। সেই আলোড়নে কেউ কেউ স্মৃতির ভেলায় চড়তে পছন্দ করেন। এমনি এক লেখক জাফর আলম। বাংলাদেশে একই নামের এক লেখক ছিলেন, যিনি অনুবাদে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। আর এই জাফর আলম একজন ব্যাংকার।
স্মৃতির ভগ্নাংশ ১৫৫ পৃষ্ঠার বইয়ে লেখক জাফর আলম আত্মপ্রতিকৃতি হয়ে স্মৃতির ভেলায় চড়ে সেই যৌবনজীবনে যেমন ফিরে গেছেন। তেমনি চলে এসেছেন একেবারে পেশাগত জীবনের নানা ঘটনার বৃত্তে। যৌবনে তিনি ছিলেন একজন কলমপেশা মজুর। যে কারণে তিনি অনায়াসে বলতে পেরেছেন সৃজনশীলতা, দক্ষতা আর দায়িত্ববোধ যথেষ্ট দরকার একটি তথ্যনির্ভর রিপোর্টের জন্য।
পেশাবদলের বাঁকে তিনি নিজেই উপলব্ধি করেছেন ব্যাংকিং পেশা ছিল চ্যালেঞ্জিং। তবে সুন্দরভাবে কাজ শেখার জন্য প্রয়োজন উৎসাহ-উদ্দীপনা আর অনুকূল পরিবেশ। প্রত্যেক মানুষের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর কর্মসাধন প্রক্রিয়া ভিন্নতর। তা পেশাগত জীবনে বুঝেছেন। ব্যাংকিং পেশায় এসে লেখক বিভিন্ন পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছেন, যা বর্তমান ব্যাংকার কিংবা যারা এই পেশায় আসবেন তাদের জন্য পথরেখা হতে পারে। তিনি উপমা দিয়ে উল্লেখ করেছেন, হারানো খেলাপি গ্রাহকের হদিস পাওয়া অমাবস্যার রজনীতে চাঁদ দেখা পাওয়ার মতো।
ব্যাংকিং জীবনে পথ চলায় তিনি উপলব্ধি করেন, আসলে উদ্দাম, উদ্দীপনা অব্যাহত থাকলে প্রতিষ্ঠানে মূল্যায়ন হবেই। কারণ জীবনের গতিপ্রবাহে ছন্দপতন ঘটতে পারে। বর্তমান সময়ে খেলাপি ঋণ বাক্যটি বহুল প্রচলিত। তিনি তার দৃষ্টিতে দেখেছেন, এই ধরনের বৈশিষ্ট্যের লোক সাধারণত অতি স্মার্ট প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর গ্রাহক সিলেকশন যে ব্যাংকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা পেশাগত জীবনে বুঝেছেন।
তিনি টিম স্পিরিটে বিশ্বাসী। তার এই বিশ্বাস থেকে লিখেছেন, একটি ফুটবল বা ক্রিকেট টিমকে জিততে হলে কিছু সদস্যকে পারফর্ম করতে হয়। বিনিয়োগ খাত সৃষ্টি, বিনিয়োগ নিরাপদকরণ, চাকরিতে প্রমোশন নিয়ে বলতে গিয়ে বাস্তববাদী বেশ কিছু কথা বলেছেন, যা সবার জীবনে কমবেশি গ্রহণযোগ্যতা রাখে। পাশাপাশি স্মার্ট থাকলে যে মন ভালো থাকে তা নতুন করে পাঠক উপলব্ধি করবে।
এই বইয়ে ব্যাংক গ্রাহক, ব্যাংকারদের জন্য বেশকিছু বার্তা রয়েছে, যা অনেকের অজানা। ক্লিয়ারিং চেকের সতর্কতা জরুরি। ক্লিয়ারিং চেক হারানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য অনেক সময় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন তা আবারও নতুন করে ব্যবসায়ীদের মনে করিয়ে দেয়।
লেখক একজন ব্যাংকার হিসেবে কোথায় কোথায় বিনিয়োগের জন্য সহায়তা করেছেন তা উৎসাহব্যঞ্জক। আবার কোনো কোনো সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে সে ব্যাপারেও সতর্কতার বাণী দিয়েছেন এই বইয়ে। পুরনো গ্রাহক নতুন গ্রাহকের জন্য সোর্স হতে পারে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। পাশাপাশি নতুন শিল্প সম্ভাবনা বনাম ঝুঁকির আভাসও দেওয়া হয়েছে, যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পথনকশা হতে পারে।
সর্বত্র চ্যালেঞ্জিং-সে কথা আর অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ব্যাংকিং পেশায় যারা আসবেন তাদের জন্য যেমন বার্তা রয়েছে, তেমনি রয়েছে নবাগত ব্যাংকারদের জন্য। জাফর আলমের এই বইটি ব্যাংকার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। কারণ কম বিনিয়োগে বেশি মুনাফা করা যায় তার একটি কৌশলপত্র এই বইয়ে আভাস দেওয়া হয়েছে। এই বইটি ব্যাংকারদের জন্য সংরক্ষণ করার মতো।
/জেডও