সুশীল সমাচার আসাদ মান্নান
কে বলে সুশীল ওরা! লোকে বেশ ভালো করে জানে
জন্মগতভাবে ওরা বঙ্গবন্ধু মুজিববিরোধী,
মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে স্বাধীনতা আনয়নে যাঁর
অনন্য অপার ত্যাগ, তারা কি স্বীকার করে তাঁকে?
না না; স্বীকার করে না ওরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-
অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা;
স্বীকার করে না ওরা বাঙালির সেরা কীর্তিগাথা-
হাজার বছর ধরে বিদেশি দস্যুর কররাজ্যে
মুজিবের হাত ধরে নিপীড়িত মানুষ জনতা
একদিন উড়িয়েছে রক্তমাখা সবুজ পতাকা-
এ সত্য স্বীকার করে নিতে মনে বড় কষ্ট লাগে।
কী করে স্বীকার করবে! তাহলে যে ইতিহাস খুঁড়ে
একান্ত নিজের মাটি বলে দেশদ্রোহী মুজিবঘাতক
খুনিদের পায়ের তলায় দেখা যায়, সাধারণ
মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাপাত্র হাতে দাঁড়াবার
অন্য কোনো পুঁজি নেই, ক্ষমতা এমন এক মধু
একবার স্বাদ পেলে বারবার পেতে ইচ্ছে হয়
অনেকটা নেশার মতন বলা যায়, মতান্তরে
ওরা কেউ কেউ নেশাখোর, মতাদর্শে বহুগামী
কেউ কেউ দেখি দর্শকবিহীন রঙ্গমঞ্চে কিংবা
টেলিভিশনের রঙিলা পর্দায় বেশ কথা বলে
প্রায়দিন আবোল-তাবোল, কেউ আছে কথাবাজ,
পাড়ার মাসির কাছে কেউ কেউ ভাড়াটে নাপিত।
হরেক রকম পেশা আর নেশায় চণ্ডাল ওরা,
মাঝেমধ্যে আমার নরসুন্দর বন্ধু নারায়ণ
ওদের অশ্লীল আর দেশের সুনামনাশি মন্দ
আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে পরনের ছেঁড়া ধুতি খুলে
ক্ষুরটাকে শানাতে থাকে-আর চিৎকার করে বলে,
ষড়যন্ত্রী বাবুগণ! কোথায় পালাবে? সাবধান
ওটা কিন্তু গোড়া থেকে আস্ত কেটে নেব নির্দ্বিধায়,
ভয় নেই কারও কাছ থেকে একটা পয়সাও নেব না।
রেখাপাত
মাঈন উদ্দিন আহমেদ
খয়েরি বৃত্তে আবদ্ধ অতীতের দিন,
চার পায়ে পিষে দিয়ে শিশির বিলীন।
ভেজা মাটি ভেদ করে মিছিল কেঁচোর,
রাতের আঁধারে ওড়ে প্রেমিক খেচর।
হাতে হাত রেখে চলা রোদের দুপুর,
দূর থেকে কানে আসে ঝুমুর নূপুর।
ঝুম তালে নেচে ওঠা মনের মালিক,
সব শেষ সব আজ খোয়াব অলীক।
ভেবে ভেবে কেটে যায় প্রতিটি দিবস,
ফেলে আসা স্মৃতি মানে শরীর অবশ।
দিশেহারা মন নিয়ে পথে পথে ঘুরি,
ফেলে আসা স্মৃতি নিয়ে মিছে বাহাদুরি।
বাহাদুরি উবে যায় ভোরের রবিতে,
সবকিছুই আঁকা আছে মনের ছবিতে।
পারিপার্শ্বিকতা
সাইয়্যিদ মঞ্জু
যদি বলি পাখিদের নিয়ে কোনো কথা
সব পাখি উড়ে যায় ফেরত ডানায়
মাছরাঙা জলে-চোখ অবিচল আস্থা
পরিযায়ী ছুটে চলে, কত ঠিকানায়।
উড়ুক্কু উড়ুক যত, মাছ তার নাম
ওড়া মানে পাখি নয়, জানে কয়জন
আকাশ হাওয়া ছুঁয়ে, ছুটে অবিশ্রাম
প্রকৃতির নিমন্ত্রণে, দূরত্ব যোজন।
বিরল প্রজাতি বলে, যত নাম আসে
প্রজনন অক্ষম নাকি, পারিপাশির্^কতা
জেনেছ-কি কেউ কিছু বিয়োগ উৎসে
ঘর সব মুছে যায়, কাল যান্ত্রিকতা।
বৃক্ষ ডালে সুর নৃত্য, মিষ্ট ঐকতান
নেই কিছু নেই দেখ, শিতান পৈতান।
জলহীন বর্ষার উৎসব
বাবুল আনোয়ার
তোমার শরীরে এখন খেলা করে
ফেরারী শ্রাবণ তৃষ্ণার জল
হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে আসে
বিষণ্ন ফুলের ঘ্রাণ
ধূপখোলা মাঠের কোলাহল
তোমার বিছানায় দোল খায়
বৃষ্টির আবাহন নীলগিরির আকাশ
বারোমাস জুড়ে তেরো পার্বণ
আমার গন্তব্যে জলহীন বর্ষার উৎসব।
মেঘজলে ভেজা অনিকেত পাখি
আসাদ উল্লাহ
আপনি বলেছিলেন-
মুখোমুখি ধূমায়িত চায়ের কাপে ফোটে জগতের সব ফুল
আপনি বলেছিলেন-
আমরা আমৃত্যু বসে থাকব মুখোমুখি চায়ের কাপে ধূমায়িত ফুলে।
আপনি বলেছিলেন-
‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল’
ধূমায়িত যুগল কাপে-‘কুসুমকলি সকলি ফুটিল’
আপনি কেন গাঁথলেন তবে ফাগুনের বদলে নানা রঙ ফুলে বৈশাখী ঝড়
আপনি দেখুন সেই থেকে মেঘজলে ভেজা অনিকেত পাখি এক-ভাঙা তার ঘর!
সে চোখে কী আছে কেউ জানে না
রোখসানা ইয়াসমিন মণি
পৃথিবী ছিল রাতের বুকে দাঁড়িয়ে
আঁধার মিছিলে নক্ষত্রের আনাগোনা
বাতাসেরা তখন ঘুম ভাঙতে যায়
একটি সোনালি চোখের, প্রিয় প্রাণের।
দূর ছায়াপথে এক নক্ষত্র পুরুষ
অগ্নিগ্রহের বুকে শীতল হতে হতে
শতাব্দী পার হয়ে আজ তরুণ হাঙর
আলো সাঁতরে হয়েছে অজেয় অমর।
বিচিত্র শূন্যতারা ঝরে প্রেমের শবে
প্রাণের ভেতর চেনাপথ অচেনা হলেও
মৃত্যু, ভয়, লাভ, ক্ষতি রোদবৃষ্টি ভেঙে
তবুও জেগে ওঠে সে প্রপাতের ভেতর।
জাগ্রত পৃথিবীর মাঝে আইবুড়ো রাত
নিকেল রঙে ঝলসে দেয় ছিমছাম শহর
প্রকৃতি ঘুমিয়েছে কখন সেই চোখ ছুঁয়ে
তাই জেনে আমি তার কাছেই এসেছি।
আমাকে জাগাতে বিছানার মঞ্জিলে
আকাশ হয়েছ অর্ধেক ছায়ার ভেতর
বাকি অর্ধেক লালনীল আলোতে সেজে
চোখের ভেতর আমাকে এনে রেখেছ।
সে চোখে কী আছে কেউ জানে না
স্বর্গচ্যুত আদিম মানবী আমি
সে চোখের গভীরতা মাপতে গিয়ে
পৃথিবীর গভীরতা হারিয়ে ফেলেছি যুবরাজ।
/জেডও