
কোনো মহাসড়ক নয়, খোদ রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কে যেখানে যানজটের কারণে যানবাহন চলে অতি ধীরগতিতে, কখনো থেমে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই রকম একটি সড়কে কী করে চালক একজন পথচারীকে গাড়িচাপা দিয়ে মেরে ফেলেন? গত ১১ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বিজি প্রেসের সামনের রাস্তা পারাপারের সময় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় গভর্নমেন্ট সায়েন্স স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আলী হোসেন গুরুতর আহত হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সহপাঠীর মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নামল শিক্ষার্থীরা।
১২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় ফার্মগেটের মূল সড়ক অবরোধ করে গভর্নমেন্ট সায়েন্স হাই স্কুল ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একদল শিক্ষার্থী। পরে তাদের সঙ্গে অন্যান্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেওয়ায় স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানীর বিশাল এলাকা। সহপাঠীর এ ধরনের অপঘাতে মৃত্যুর খবর পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পরে তা বিক্ষোভে রূপ নেয়। এ পর্যন্ত আলী হোসেনের মতো অনেক স্কুল-কলেজপড়ুয়া সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী বাসের তলায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ দিয়েছে। অপমৃত্যু ঘটেছে অনেক সম্ভাবনাময় জীবনের। শুধু কলেজ ছাত্রই নয়, ওই একই দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ১২ জন নিহত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধুর অকালমৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে শিক্ষার্থীরা, সড়ক অবরোধ করে রেখেছে দীর্ঘ সময়।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশের আপামর জনগণও তাদের সমর্থন দিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালে ঢাকার বিমানবন্দর সড়ক এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া খানমের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এক নজিরবিহীন প্রবল আন্দোলনে নেমেছিল। আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল সারা দেশ। মিছিলে মিছিলে ছেয়েছিল রাজধানী ঢাকার রাজপথ। এমনকি নিরাপদ সড়কের দাবিতে ফুঁসে উঠেছিল সারা দেশ, দেশের আপামর জনগণ।
ঢাকার বাইরেও হয়েছিল মিছিল-সমাবেশ। সড়কে দেখা দিয়েছিল তীব্র যানজট। এক কথায় স্থবির হয়ে পড়েছিল পুরো রাজধানী শহর। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস করে। দীর্ঘ আট বছর ধরে ঝুলে থাকা সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া তড়িঘড়ি করে মাত্র সাত দিনের মাথায় মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত হয়। মানুষ আশার আলো দেখতে থাকে, হয়তো বা হবে সড়কে মৃত্যুর সমাধান। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় সড়কে প্রাণহানি রোধ সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের মতো দ্রুতগামী যানবাহনের চালকের বেপরোয়া গতির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ক্রমে বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে। পরিসংখ্যান মতে, যাত্রী বহনকারী বাসের চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে। সড়ক দুর্ঘটনার ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে অথবা চাপা মেরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এই তো গেল ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় মারা গেলেন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চারজন মানুষ।
কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে পথচারী! ফুটপাথে, আইল্যান্ডে দাঁড়াবেন, দ্রুতবেগে যমদূত এসে আপনাকে পিষে মেরে দেবে। আপনি টুঁ শব্দটি করতে পারবেন না। যানবাহনে চড়বেন, তাও নিরাপদ নয়। কখন চালক লাগামহীন দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে, বেআইনিভাবে ওভারটেক করে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধিয়ে আপনার পৈতৃক প্রাণটি কেড়ে নেবে! এসব প্রাণহানিকে কি ‘মৃত্যু’ বলে মেনে নেওয়া যায়? এ তো স্পষ্ট হত্যারই শামিল। যাত্রী কল্যাণ সমিতি জরিপ করে এক তথ্য দিয়েছে। সে মতে, সড়কে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ কাভার্ড ভ্যান, ২০ দশমিক ৯৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৭ শতাংশ অটোরিকশা, ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাস, ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ করিমন-নসিমন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
পরিসংখ্যানে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া যানবাহন চালানো সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। তাই যদি হয়, তাহলে এসব অপকর্ম থেকে চালকদের বিরত রাখা যাচ্ছে না কেন? গণপরিবহনে বাড়তি যাত্রী সামাল দিতে গতিসীমার বাইরে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে বেশি ট্রিপ দেওয়ার অশুভ প্রতিযোগিতায় পরিবহন সংস্থাগুলো চালকদের অনেক বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করে, তা সত্য। ফলে চালকের ওপর একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ পড়ে, তাকে বেসামাল হয়ে গাড়ি চালাতে হয়, যা প্রকারান্তরে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বেশি মুনাফার আশা যদি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় তাহলে বাস মালিকরা কেন একটু কম লাভে সন্তুষ্ট থাকছেন না! ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ফিটনেসবিহীন যান, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, মহাসড়কে অটোরিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল এবং ব্যস্ত সড়কে ওভারটেকিং, ওভারলোডিং, সড়কে যানবাহনের গতিসীমা মনিটরিং না করা-এগুলো সবই সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। গাড়িচালকরা তাদের খেয়াল-খুশিমতো যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড় করান, যাত্রী নামান। কোনো স্টপেজের ধার ধারেন না তারা।
যাত্রী না নামতেই গাড়ি স্টার্ট দেন, ছিটকে পড়ে যান যাত্রী। কখনো আহত হন, কখনো বা বাসের তলায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ দেন। ঠিক যেমনটি হয়েছিল দেশের বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক, সমালোচক জগলুল আহমদ চৌধুরীর বেলায়। চালকের কাছে যাত্রীর প্রাণ এত তুচ্ছ কেন মনে হয়? সড়কে যানবাহন চলাচলের বেলায় এতসব অনিয়ম, অব্যবস্থা চলতে থাকলে দুর্ঘটনা কীভাবে বন্ধ করা যাবে? এসব দেখার দায়িত্বে তো মানুষ রয়েছে। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে তাদের বছরের পর বছর বেতন দেওয়া হচ্ছে।
দেখা গেছে, বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা হলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। তাও কয়েক দিনের জন্য। হয়তো সাময়িক কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়। চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক-চিত্রগ্রাহক মিশুক মনিরের মৃত্যুর পর সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কিছু তোড়জোড় দেখা গেছে। কিন্তু ক’দিন যেতে সবকিছু আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। সড়ক দুর্ঘটনা আর রোধ হয় না। একটু কমেও না। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, নিয়েছেন বেশ কিছু পদক্ষেপ। সড়ক-মহাসড়কে অব্যাহত দুর্ঘটনায় বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কারণে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
সেগুলো ছিল-চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, দূরপাল্লার বাসযাত্রায় বিকল্প চালক রাখা ও পাঁচ ঘণ্টা পরপর চালক পরিবর্তন করা, চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা বাধ্যতামূলক করা, চালকদের জন্য মহাসড়কে বিশ্রামাগার নির্মাণ এবং সিগন্যাল মেনে যানবাহন চালানোর ওপর কড়াকড়ি আরোপ। আর সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১৯টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। তাতে রাজধানীতে লক্করঝক্কর গাড়ি চলাচল বন্ধ করা এবং মহানগরীতে মালিক ও চালকদের মধ্যে চুক্তিভিত্তিক বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও পরিবহন মালিক, শ্রমিকরা তা মানেননি।
সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন না করে সড়কে শৃঙ্খলা এনে দুর্ঘটনা রোধে কমিটি প্রণীত সুপারিশযুক্ত প্রতিবেদনে আশু করণীয় ৫০টি, স্বল্পমেয়াদি ৩২টি এবং দীর্ঘমেয়াদি ২৯টি প্রস্তাব আনা হয়েছিল। এসব সুপারিশ দীর্ঘ সময়েও বাস্তবায়ন করা যায়নি। আধুনিক, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব এবং প্রযুক্তিনির্ভর সড়ক পরিবহন ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ অনুসমর্থনকারী হিসেবে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহত মানুষের সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারের সিদ্ধান্ত যদি প্রতিপালন না হয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কী করে কমবে!
সড়ক পরিবহন আইন-১৯১৮ বাস্তবায়নের শুরুতেই আন্দোলনে নামে মালিক শ্রমিক সমিতি। বন্ধ করে দেয় সড়কপথে যানবাহন চলাচল। তাদের চাপের মুখে সড়ক আইন-২০১৮ কার্যকর শিথিল করা হয়। সড়কে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত অভিযানে মামলা করা স্থগিত করা হয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এরপর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিআইটিএ মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় নামলে পাঁচ দিন খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট পালন করেন সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
এ ছাড়া পরিবহন আইন সংশোধনসহ ৯ দফা দাবিতে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করে পরিবহন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন দেশের সাধারণ মানুষ। দেশের মানুষকে জিম্মি করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারের শুভ উদ্যোগকে বারবার ব্যাহত করা হয়। সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা। জাবলে নূর পরিবহনের বাসচাপায় রাজীব ও দিয়া খানমের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর দায়েরকৃত মামলার ঘোষিত রায়ে বাস জাবলে নূর পরিবহনের দুই চালক এবং এক সহকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। চালক ও হেলপারের খামখেয়ালিপনার কারণে রাজীব ও দিয়ার মতো অনেককে সড়কে প্রাণ দিতে হচ্ছে-এমন পর্যবেক্ষণ আদালতের। তবে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এ ধরনের শাস্তির নজির খুব কম। সড়ক দুর্ঘটনার পরপরই চালক ও হেলপারকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা অল্প দিনের মধ্যে ধরাও পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হতেও শোনা যায়। কিন্তু সেসব মামলার তদন্তের ফলাফল বা দোষী সাব্যস্ত হলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির খবর জনগণের কাছে অজানা থেকে যায়। গাড়ির চালক বা হেলপার হয়তো ধরেও নেন, সড়ক দুর্ঘটনা মামলায় আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে তারা একদিন বেরিয়ে আসতে পারবেন। তাই হয়তো গাড়ি চালাতে তারা এত বেপরোয়া।
সরকারি-বেসরকারি ও নিজস্ব সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রণীত রিপোর্টে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। গবেষণা তো এই কথাই বলছে, মোট দুর্ঘটনার মধ্যে ৫৩ শতাংশ ঘটে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানোর জন্য। মহাসড়কে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে গাড়িচালক যেন হুঁশ হারিয়ে ফেলেন, গাড়ির গতির কোনো সীমারেখা থাকে না। দেশের হাইওয়েগুলোতে রয়েছে বেশ কিছু বিপজ্জনক বাঁক। এসব স্থানে গাড়ি চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় দৃশ্যমান দূরত্ব (পাসিং সাইট ডিসট্যান্স) কম থাকে। তাই দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়ি একটি অন্যটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীতমুখী গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধিয়ে দেয়।
সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগের স্পিডমিটার ব্যবহারসহ নজরদারি বাড়িয়ে যানবাহন চালকের বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং বন্ধ করার তো কোনো প্রক্রিয়া চালু নেই। যানবাহনে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেওয়ার বিধি-নিষেধ কোথায়! মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো ১০ লাখ থ্রি-হুইলার, নসিমন, ভটভটি চলাচল তো বন্ধ হচ্ছে না। এ ছাড়া সড়কের ওপর হাটবাজার বসানো এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে এসব অনিয়ম, অব্যবস্থা অচিরে বন্ধ করতে হবে।
বাড়াতে হবে হাইওয়ে পুলিশের কর্মদক্ষতা ও নজরদারি। অপেশাদার চালক যেন কোনোভাবে গণপরিবহন চালাতে না পারে সেই ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থের বিনিময়ে ভুয়া লাইসেন্স প্রদানকারী বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক পরিবহন খাতকে রাখতে হবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। সারা দেশে পাঁচ লাখ ফিটনেসবিহীন ট্রাক, বাস, কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ করতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হয়ে গেলে তাকে ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে আইনানুগ শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোসহ পথচারীবান্ধব ফুটপাথ, ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। সঠিক লাইনে প্রতিটি গাড়ি চলাচল, ফুটপাথ দখল-উচ্ছেদসহ সড়কের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের ‘ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নসহ সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে সব প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে।
লেখক- অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও শিক্ষক।