ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৭ আশ্বিন ১৪৩০
ই-পেপার শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin Mohammad City (Online AD).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/780-90.jpg
মানুষ হওয়ার কত বাকি?
শাকিরুল আলম শাকিল
প্রকাশ: বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১১:৪৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 489

পশু হয়ে জন্মানোর বড় সুবিধা হলো জন্মসূত্রে পশু হওয়া যায়। পশুদের ধর্ম পশুত্ব। তারা জন্ম থেকেই এই সত্তার সব বৈশিষ্ট্যই পেয়ে থাকে, আলাদাভাবে অর্জন করে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে জন্মসূত্রে মানুষ হওয়া যায় না বা মানুষের পেটে জন্ম নিলেই মানবীয় সত্তাকে ধারণ করা যায় না। মানুষ হতে হয় কর্মসূত্রে। 

মনুষ্যসত্তা এমনিতেই আসে না, তাকে অর্জন করে নিতে হয়। মানুষ তার দীর্ঘ জীবন-পরিক্রমায় যত জ্ঞান, গরিমা, শিক্ষা, তত্ত্ব, দর্শনের সম্মুখীন হন, এসবের মুখ্য প্রয়াস থাকে এই মানবীয় সত্তা তথা মনুষ্যত্বকে অর্জন করিয়ে দেওয়া। 

সহজ কথায় মানুষের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মনুষ্যত্বকে অর্জন করে মানুষ হয়ে ওঠা। আরও সহজভাবে বলতে গেলে ‘আন্তরিক’ মানুষের জন্ম হয় ‘বাস্তবিক’ মানুষ হয়ে ওঠার জন্য। কিন্তু এই সহজ ব্যাপারটিকে আমরা আন্তরিক অর্থেই বিশ্বাস করি, বাস্তবিকে নয়।

‘আন্তরিক’ ও ‘বাস্তবিক’ মানুষের মাঝামাঝিতে অবস্থান করে প্রেম, মমতা, ভালোবাসা, বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, সদাচার, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা-এক কথায় জগতের সব মহৎ গুণ। আর এ সবই মনুষ্যত্বের একেকটি স্তর। মনুষ্যত্ব আত্মার সঙ্গে সম্পর্কিত। আত্মা হলো পবিত্রতম। অন্তরের পবিত্রতা অর্জন করলেই মনুষ্যত্ব অর্জন হয়। মনুষ্যত্ববিবর্জিত মানুষেরা কেবল আন্তরিক অর্থেই মানুষ হয়, বাস্তবিক মানুষের গুণাবলি ধারণ করে না। এই শ্রেণির মানুষেরা সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব, এমনকি নিজের জন্যও ভয়ংকর হয়ে ওঠে।

মানুষের বেলায় মনুষ্যত্বহীন শব্দটি শুনতে পাওয়া গেলেও পশুর ক্ষেত্রে পশুত্বহীন শব্দের ব্যবহার নেই। যেহেতু জন্ম থেকেই পশুরা তাদের স্ব-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলো পেয়ে থাকে, তাই কখনোই তাদের সত্তার বৈশিষ্ট্যের রদবদল ঘটে না। এ জন্য তাদের ক্ষেত্রে এ শব্দেরও প্রয়োজন পড়ে না। পশুরা জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি তাদের পশুত্ব সত্তার ওপরেই প্রতিষ্ঠিত, তাহলে পশুদেরকেই তো জগতের শ্রেষ্ঠ জীব বলা উচিত ছিল। 

তবে মানুষকে কেন বলা হয়? কারণটা হলো মানুষকে সত্তার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, পশুকে দেওয়া হয়নি। পশুর জন্য তার সত্তা নির্দিষ্ট, সে ইচ্ছা করলেই তা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারে না। ফলে তার জীবন থাকে নিয়মতান্ত্রিক এবং একটি গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু মানুষকে কোনো গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করা হয়নি। মানুষ চাইলেই যেকোনো সত্তার বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারে- মনুষ্যত্বের আবার পশুত্বেরও। 

পাশাপাশি কঠোর সাধনার মাধ্যমে ধারণকৃত সত্তার পরিবর্তন ঘটিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়েও যেতে পারে। অর্থাৎ মানুষের পক্ষে যেমন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ভালো কাজটি করা সম্ভব, তেমনি সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট কাজটি করাও সম্ভব, নিজেকে জাগতিক ও মহাজাগতিক কল্যাণের কাজে নিযুক্ত করা যেমন সম্ভব, তেমনি ধ্বংসাত্মক কাজে প্রলুব্ধ হওয়াও সম্ভব, যা পশুদের মধ্যে নেই। এই ভালো বা খারাপ কাজ নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে থাকে বিবেক। 

বিবেক আন্তরিক মানুষকে বাস্তবিকে পরিণত করে। আর এই বিবেককে পরিশীলিত করে মনুষ্যত্ব। এ জন্য মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীব বলা হয়। এখন বিবেকের দরজায় টোকা দিয়ে যদি প্রশ্ন করা হয় সত্তা নির্বাচনের স্বাধীনতা পেয়ে আমরা স্বীয় সত্তায় প্রতিষ্ঠিত কি? বিবেক জবাব দেওয়ার আগে জবাব দেবে আমাদের সমাজ, সামাজিকতা, পারিপাশির্^কতা। তারা জানাবে এ সমাজে, এ সভ্যতায় হত্যা, খুন, গুম, ধর্ষণ, রাহাজানি, মিথ্যাচার, অনাচার, অবিচার, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির যে বিকৃত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা প্রমাণ করে মনুষ্যসত্তা বিলুপ্তির পথে। 

আর বিবেক বলবে অর্থ, ক্ষমতা, লোভের সম্ভার এতই শক্তিমান হয়ে উঠছে যে, বিবেকের বোধ পরাস্ত হচ্ছে, থমকে দাঁড়াচ্ছে। তাদের এমন মন্তব্য প্রমাণ করে আমাদের মানসিকতা এখনও আটকে আছে সেই আন্তরিক মানুষের চাকাতেই। ম্রিয়মাণ হয়ে আছে আমাদের মানুষ হয়ে ওঠার সব প্রচেষ্টা। আমরা জন্মসূত্রেও মানুষ হচ্ছি না, কর্মসূত্রেও নয়। মানুষ শুধু আকৃতিতে হলেই হবে না, মানুষের ভেতর মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তুলতে হয়। 

যেখানে তর্ক নেই, হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই, হানাহানি নেই, রক্তপাত নেই, সেখানে যেতে এত অসুবিধা কোথায়? বলতে পারেন, এমন পরিবেশ পাওয়াও তো কঠিন। আমিও একমত। চলমান সমাজে যেখানে অনাচার, অপরাধের ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, সেখানে হয়তো ইতিবাচক চিন্তার বাস্তবায়ন করা কঠিন। কিন্তু চলমান এই পথে কি ইতিবাচকতার কোনো স্থান নেই?

সবার সঙ্গে মিলেমিশে জীবনধারণ এবং সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ানোর মধ্যেই জীবনের যথার্থ সার্থকতা। নিজের স্বার্থের জন্যই কেবল জীবন নয়। মানুষ সমাজের সহানুভূতিশীল জীব বলেই আত্মস্বার্থে মগ্ন থাকা তার স্বভাববিরুদ্ধ। মানুষ হয়ে জন্মালেই মানুষ হওয়া যায় না। চাই মনুষ্যত্ব অর্জনের দীক্ষা। জনসেবা সামাজিক মানুষের সেই দীক্ষার যথার্থ মন্ত্র। 

সমাজের সহায়-সাহায্যহীন, সর্বহারা, হতাশাগ্রস্তকে প্রাণবন্ত করে তোলাই মানুষের ধর্ম। স্বার্থপর ব্যক্তি বৃহত্তর জীবনাঙ্গন থেকে স্বেচ্ছানির্বাসিত। পৃথিবীর ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, মঙ্গল-অমঙ্গল তার হৃদয়-মন স্পর্শ করে না। এ ধরনের স্বার্থপর মানুষ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং সমাজের কোনো উপকারে আসে না। সেই মানুষ মহৎ, যে নিজের জন্য নয়, অন্যর জন্য নিবেদিত।

এ পৃথিবীতে ‘আন্তরিক’ মানুষের সংখ্যা ঢের বেশি বাস্তবিকদের তুলনায়। পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন অনেক বাস্তবিক মানুষের। যাদের প্রেম, মায়া, মমতা, ভালোবাসায় সিক্ত হবে ধরণী, পরিশীলিত হবে হৃদয়। অনেক মানুষের সম্মিলিত পরিশ্রমে গড়ে ওঠা সভ্যতায় আমরা সভ্য হয়েছি। এই সভ্যতার প্রতিদান দিতে ‘আমি’ থেকে ‘আমাদের’ হয়ে উঠতে হবে। ‘আমার’ থেকে ‘সবার’। ‘আত্মকেন্দ্রিকতা’ পরিহার করে চিন্তা করতে হবে ‘সামগ্রিকতার’। আমাদের কণ্ঠ রোধ হয়েছে, বিবেক বধ হয়েছে। এই রোধ আর বধ থেকে মুক্তি পেতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে, একযোগে।

লেখখ-  ফিচার রাইটার।

https://www.shomoyeralo.com/ad/Local-Portal_728-X-90 (1).gif



https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com