ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৭ আশ্বিন ১৪৩০
ই-পেপার শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin Mohammad City (Online AD).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/780-90.jpg
ভালোমন্দের নিচে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত বিষয়ে বাংলা ফিল্মের নায়করা
মুরাদুল ইসলাম
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:৩১ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 120

কিছু বাংলা ফিল্মে দেখা যায় নায়ক গরিব, প্রেম করেন ধনী আহমদ শরীফের মেয়ের সঙ্গে। আহমদ শরীফ স্বাভাবিকভাবেই তা মেনে নেন না। তিনি তখন একবার নায়ককে ডেকে পাঠান আর ব্রিফকেসভর্তি টাকা দিয়ে বলেন, ‘আমার মেয়ের জীবন থেকে চলে যা, কিন্তু বুদ্ধিমান নায়ক তা নেন না। এখন অনেকে বলবেন নায়ক প্রেমের টানে কাজটা করেছে, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাজে সিদ্ধান্ত। খুব সম্ভবত, দেশের অধিকাংশ মানুষ এ অবস্থায় পড়লে টাকাভর্তি ব্রিফকেসই নিতেন।’

আমাদের নায়ক আসলে বাজে সিদ্ধান্ত নয়, ভালো সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে বর্তমানের অল্প লাভের চাইতে ভবিষ্যতের বেশি লাভ তিনি দেখেছেন। তার সঙ্গে ‘লাভ ’ নামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাও আছে, যাকে হিসাবের বাইরে রাখা যায়। এখন যেহেতু আলাপটা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের। 

আমাদের নায়ক এই সিদ্ধান্তের ফলে পরবর্তী সময়ে নায়িকা পান, নায়িকার বাবা আহমদ শরীফের বিশাল বিত্তবৈভব সবই পান। ব্রিফকেসভর্তি টাকা তখন তার কাছে ব্যাপারই নয়। 

নায়কের এই ভবিষ্যৎ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাঙালি বৈশিষ্ট্যের বাইরে। জাতি-স্বভাবের দিক থেকে বাঙালি নগদ লাভের পক্ষে, ইহকালপন্থি, বুদ্ধিজীবী ও চিন্তক অধ্যাপক আহমদ শরীফ কালিক ভাবনায় লিখেছিলেন ‘এই ইহকালপন্থি অবস্থানের কারণেই এই দেশের লোকজন মাজারে যায়, যেখানে হাতে হাতে লাভ, গরু দিব কাজ হবে।’ হয়তো সরলীকরণ। কিন্তু এমনই দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষের সিদ্ধান্ত। শর্ট টার্মে লাভ দেখে সিদ্ধান্ত নেন তারা। 

রেন কাউরে দুটি অপশন দেওয়া হলো। অপশন এক. আজকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। অপশন দুই. এক সপ্তাহ পরে ১২ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এই দুটির মধ্যে একটা চয়েজ করতে হবে।

সাধারণত মানুষেরা এক্ষেত্রে অপশন এক অর্থাৎ আজকে ১০ হাজার চয়েজ করে।

পরীক্ষার টাকার পরিমাণ এক রেখে এবার সময় বাড়ানো হলো। বলা হলো, আগামী এক বছর পর আপনারে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে, এইটা অপশন এক। আর আগামী এক বছর এক সপ্তাহ পর আপনারে ১২ হাজার টাকা দেওয়া হবে, এইটা অপশন দুই।
দুই ক্ষেত্রেই এক বছর করে সময় বাড়ছে।

এক্ষেত্রে সাধারণত মানুষেরা অপশন দুই চয়েজ করে। তার কাছে তখন মনে হয় এক বছর তো গেছে, আর এক সপ্তাহে আর কী!

কিন্তু এখানে আসলে হচ্ছেটা কী? খেয়াল করে দেখেন, যখন বর্তমানে তারে বিচার করতে দেওয়া হচ্ছে তখন সে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে নারাজ, বাড়তি দুই হাজার টাকার জন্য। কিন্তু যখন ভবিষ্যতে বিচার করতে দেওয়া হচ্ছে তখন সে বাড়তি দুই হাজারের জন্য এক সপ্তাহ অপেক্ষা করছে।

এটা মানুষের একটা ইন্টারেস্টিং আচরণ। একই জিনিস বর্তমানের সাপেক্ষে সে একভাবে দেখে, ভবিষ্যতের সাপেক্ষে অন্যভাবে।

ভবিষ্যতের সাপেক্ষে দেখলে সে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে দুই হাজার বেশি পেতে পারে অর্থাৎ ভালো সিদ্ধান্ত সে নিতে পারে। মূল বিন্দু থেকে একজন যখন দেখবেন, তখন তিনি দেখতে পাবেন এল এল অনেক উঁচু। মানে এল এল নেওয়াই ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু এস এস ও এল এল এক জায়গায় মিলিত হয়েছে, তারপরের একটা অংশ স্ট্রাইপ করা আছে, এই জায়গা থেকে তিনি যদি দেখেন তাহলে তার কাছে এস এস উঁচু মনে হবে। তখন তিনি শর্ট টার্মেই লাভ চাইবেন। ‘নগদ যা পাও হাত পাতিয়া লও’ ।

এই জায়গাটার নাম ল্যাপস জোন। অর্থাৎ এই খানেই মানুষেরা ডিজায়ারের সঙ্গে পরাজিত হয়ে লোভে পতিত হন।

ল্যাপস জোনে যে জিনিস কম লাভজনক তা বেশি লাভজনক মনে হয়। আর্কিটেকচারে একটা জিনিস আছে প্যারালাক্স নামে। প্যারালাক্স বলতে বোঝায় কোনো অবজেক্টরে আমরা যেভাবে দেখছি, বাস্তবিকভাবে সে সেই রকম না এমন অবস্থা এবং এর কারণ যেই অ্যাঙ্গেলে বা কোণে আমরা তারে দেখছি তা। 
দুটি বিল্ডিং ধরেন পাশাপাশি, আপনি দূর থেকে দেখছেন একটা উঁচু, আরেকটা নিচু। কিন্তু নিচুটার নিচে গিয়া ওপরে তাকিয়ে দেখলে আপনার মনে হলো নিচুটা উঁচুটার চেয়ে একটু উঁচু আসলে। এই রকম অবস্থা হলো প্যারালাক্স।

ওপরের গ্রাফে তাই হচ্ছে ল্যাপস জোনে। গ্রাফে হচ্ছে মানে আমাদের মাথায় হচ্ছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার কালে। তাই সে শর্ট টার্ম লাভটা দেখছে, লং টার্ম লাভটা দেখছে না।

মানুষের ভেতরে অংশ দুটি আছে ধরেন। একটা বুদ্ধিমান, বিচারবুদ্ধি করে আগায়, আরেকটা অত বিচারের ধার ধারে না, তার মনে খালি সুখ চায়। বিচারবুদ্ধির অংশ ব্যবহার করলে কেউ লং টার্ম লাভটাই দেখবে, সে মূল বিন্দুতে গিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাবে।

যেকোনো ধরনের আসক্তি মানুষের সুখ লোভী অংশের কারণে হয়। যেমনÑকেউ সিগারেট ছাড়তে চায়। তার বিচারবুদ্ধির অংশ তারে বোঝায় সিগারেট খারাপ। খেলে ক্ষতি হয়। হুদাই পয়সা নষ্ট। তাই সে ঠিক করে সিগারেট ছেড়ে দেবে। কিন্তু তার সুখ লোভী অংশে হঠাৎ নিকোটিনের লোভ চাগাড় দিয়ে ওঠে। তখন সে আস্তে আস্তে মূল বিন্দু থেকে সরে ল্যাপস জোনে চলে আসে। সুখ লোভী অংশ বোঝায়, কাল থেকে ছাড়ব, আজ খেয়ে নেই। ‘ভবিষ্যতের বেইল নাই, লিভ ইন বর্তমান।’ সে খায়। এভাবে তার সিগারেট ছাড়া আর হয় না।

তো ওই ব্যক্তির সিগারেট ছাড়তে হলে, প্রথমে ভবিষ্যতের হিসাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি সিগারেট ছাড়বেন। আর দুই তিনি ওডিসি বা ইউলিসিসের মতো বাইন্ধা রাখবেন তার সুখলোভী অংশটারে, সামনে ঝুলে থাকবে ভবিষ্যতের মুলা।

সিগারেট দিয়ে উদাহরণ দিলাম, তা ফেসবুক আসক্তি বা অন্য কোনো আসক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রায় প্রতিটি বাজে আসক্তিই ভবিষ্যতের ক্ষতি করেÑঅর্থনৈতিক, শারীরিক বা মানসিক।

কোনো ছাত্র যদি ভাবেন তার ফেসবুক আসক্তি পড়ালেখায় ক্ষতি করছে তাহলে তিনি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ভাবতে পারেন। তিনি যদি ফেসবুক ব্যবহার করতেই থাকেন পড়ালেখা বাদ দিয়ে, যেটা তার কাছে এখন দারুণ লাগে; ইন দ্য লং রান তিনি বাজে রেজাল্ট করবেন। তার অভিভাবকেরা দুঃখ পাবেন। তার নিজের ক্যারিয়ার পড়বে হুমকির মুখে। ফলে তারে ল্যাপস জোন অর্থাৎ লোভের গর্তে না পড়ে পড়ালেখায় মন দিতে হবে। এটা তার জন্য ভালো সিদ্ধান্ত মূল বিন্দু থেকে দেখলে। আমাদের ফিল্মের নায়কেরা যেমন দেখছিলেন যখন নায়িকার বাবা টাকাভর্তি ব্রিফকেস নিয়ে আসছিলেন। 

লেখক: ছোটগল্পকার, সোশ্যাল ক্রিটিক

https://www.shomoyeralo.com/ad/Local-Portal_728-X-90 (1).gif



https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com