বায়ুদূষণে আবারও বিশ্বের প্রায় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে ঢাকা। প্রথম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, আর তৃতীয় অবস্থানে আছে দুবাই।
বুধবার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) ইনডেক্সে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ঢাকা। দূষণের মান ১৫৩, যা মাত্রার দিক থেকে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে। এদিকে প্রথম অবস্থানে থাকা পাকিস্তানের লাহোরের মাত্রা ১৬১ ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা দুবাইয়ে একিউআই সূচক ১৫২।
গত কয়েক দিন মৌসুমি বায়ুর কারণে টানা বৃষ্টি হওয়ায় দূষণ কিছুটা কম হলেও বুধবার তা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। আজ আকাশ যেমন মেঘলা, তেমনি দূষণও বেশি।
বৃষ্টি হওয়ার কারণে গত সপ্তাহেও ঢাকা দূষণের দিক দিয়ে অনেক নিচে অবস্থান করছিল। তবে বছরের শুরুর দিকে বেশ কয়েকবারই ঢাকা দূষণের এক নম্বর অবস্থানেও উঠে এসেছিল।
সাধারণত ৫০ থেকে ১০০-এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ বলা হয়। তবে কিছু মানুষের জন্য এটাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে যারা বায়ুদূষণের প্রতি অস্বাভাবিকভাবে সংবেদনশীল। বিশেষ করে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়।
বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘বছরের জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে অন্য সময়ের চেয়ে বাতাসের মান সাধারণত ভালো থাকে। সারা বছরের মাত্র ১৫ ভাগ বায়ুদূষণ হয় এই চার মাসে। তবে এবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেরি করে। ফলে প্রথম দুই মাসের দূষণ আগের চেয়ে বেশি ছিল। এখন মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় দূষণের মাত্রা কমে এসেছে। তবে আগের কয়েক দিন যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, সে তুলনায় এখন বৃষ্টি কম। তাই দূষণ আবারও বাড়ছে। কারণ, দূষণের জন্য দায়ী যেসব বিষয়, যেমন-যানবাহন চলাচল, শিল্প কারখানার দূষণ, ইটভাটা, নির্মাণকাজ কিছুই কিন্তু থেমে নেই।
তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদফতর অভিযান পরিচালনা করছে ঠিকই, কিন্ত তা অপ্রতুল। দূষণ কমাতে হলে আরও বেশি অভিযানের প্রয়োজন।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এর পাশাপাশি আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের পরিবেশ সম্পর্কিত যেসব আইন রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণত ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। এরমধ্যে দ্রুাতি ক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫ -কে ঢাকায় দূষণের জন্য বেশি দায়ী করা হয়।
ক্ষতিকর ছয় ধরনের পদার্থের মধ্যে প্রথমেই আছে পিএম (পার্টিকুলেটেড ম্যাটার) ২.৫ অথবা ২ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রাম সাইজের ক্ষুদ্র কণা। এরপর পিএম-১০ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বাকি চারটির মধ্যে আছে সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন, কার্বন মনোক্সাইড ও সিসা। এই ছয় পদার্থ ও গ্যাসের ভগ্নাংশ গড় করেই বায়ুর সূচক নির্ধারণ করা হয়। সেই সূচককে বলা হয় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স।
এফএইচ