প্রকাশ: বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৯:১৪ পিএম আপডেট: ২৮.০৯.২০২২ ৯:১৬ পিএম (ভিজিট : ২০৯)
সংঘর্ষে জড়িয়ে বহিষ্কৃত হওয়া ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের ১৬ নেত্রী নতুন করে কোনো কর্মসূচির কথা ভাবছেন না। মঙ্গলবার রাতে কৃষি মন্ত্রীর সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করলেও বিষয়টি নিয়ে লুকোচুরি করতে দেখা যায় তাদের। তবে নতুন করে আর কারও কাছে ধরণা দিতে চাইছেন না তারা। বহিষ্কৃত একাধিক নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তাদের কথা শুনেছে। শিগগিরই সুখবর পাওয়ার আশায় আপাতত অপেক্ষা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার নেই। তবে তারা মূলত অপেক্ষা করছেন ছাত্রলীগের ‘সর্বোচ্চ অভিভাবক’ শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তনের। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করা হলে দলীয় সূত্র ধরে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জোর চেষ্টা করবেন। তবে সে সমীকরণে এখনই যেতে চাচ্ছেন না তারা। আপাতত তারা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। অন্যদিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে যা সহসাই স্বাভাবিক হচ্ছে না। শীর্ষ দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে জান্নাতুল ফেরদৌসের মামলা বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রমও কবে নাগাদ শুরু হতে পারে সে বিষয়ে ধারণা দিতে পারেননি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারাও। কমিটির কার্যক্রম না থাকায় ক্যাম্পাসে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না সুলতানা রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার দেখা মিলছে না খুব একটা। গণমাধ্যমকেও অনেকটা এড়িয়ে চলছেন তারা। তবে নিজস্ব সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে মরিয়া রিভা-রাজিয়া। সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে তাদের অনুসারীরাই এখন তাদের কাজগুলো দেখভাল করছেন। গত মঙ্গলবার কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত মানববন্ধনও রিভা-রাজিয়ার নির্দেশে তাদের অনুসারীরাই করেছেন। মানববন্ধন চলাকালীনই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন সংঘর্ষের পর থেকে বাইরে থাকা এ দুই নেত্রী। এর পর হাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্যাম্পাসেই অবস্থান করছেন তারা। এভাবে কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে কমিটি সচল করার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস আদালতে মামলা করায় আইনী পদক্ষেপ নিয়েও কিছুটা বিড়ম্বনায় আছেন শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেত্রী। ফলে কমিটি সচল করার বিষয়টি অত সহজ হবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, ছাত্রলীগের জন্য একই সঙ্গে ১৬ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও কমিটি সচল করা সহজ হবে না। এজন্য প্রয়োজন উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার মনোভাবের। তাদের দু’পক্ষকে একসঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসিয়ে সমঝোতা করানোর সামর্থ্য ছাত্রলীগের বর্তমান শীর্ষ দুই নেতার কারওই নেই। তবে দলীয় হাইকমান্ড ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আসলেই এটি সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে আরও সময়ের প্রয়োজন।
নিজেদের অবস্থানের বিষয়ে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি সোনালী আক্তার সময়ের আলোকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি আমাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। বিষয়টি নিয়ে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন বহিষ্কার প্রত্যাহার করার। আপাতত আমরা অপেক্ষা করতে চাই। নতুন করে কোনো কর্মসূচি বা দলীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা নেই বলেও তিনি জানান।
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করি না। তারা শুরু থেকেই আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করছে। তাই আমরা তাদের কাছে যাইনি।
অন্যদিকে আরেক বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈ বলেন, আমরা আমাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমরা কার কাছে যাব বা কি করব সেটি আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। উপরের মানুষজন আমাদের বিষয়টি নিয়ে অবগত, তারা বিষয়টি নিয়ে বসবেন। এর বেশি কিছু আমার বলার নেই।
এদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তদন্ত কমিটির বিষয়ে অধ্যক্ষ লুকোচুরি করছেন বলেও অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন কমিটি গঠিত হওয়ার দু’দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তারপরও তিনি জানাননি তদন্ত কমিটিতে কারা আছেন কিংবা কতদিনের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে। এর আগেও অনেক ঘটনায় ইডেন কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হলেও আলোর মুখ দেখেনি কোনোটিই।
/এসকে