ই-পেপার বুধবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
বুধবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্মাণসামগ্রীর মূলবৃদ্ধি
রাজশাহীতে সঙ্কটে আবাসন খাত
ফয়সাল আহমেদ, রাজশাহী
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৪:০৮ এএম  (ভিজিট : ১৭০)
প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে আবাসন খাতের জিনিসপত্রের দাম। নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন রাজশাহীর আবাসন ব্যবসায়ীরা। দুই থেকে তিন বছর আগে ফ্ল্যাটপ্রতি যে মূল্য তারা ক্রেতাদের কাছে নির্ধারণ করেছিলেন, সেই তুলনায় সময়ের ব্যবধানে ভবনে ব্যয় হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। এ কারণে আবাসন শিল্পে অশনি সঙ্কেত দেখা দিয়েছে বলে জানান আবাসন ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী আবাসন ব্যবসায়ী সংগঠন (রেডার) নেতাদের অনেকেই সময়ের আলোর প্রতিবেদককে জানিয়েছেন হতাশার কথা। তাদের দাবি-বর্তমান অবস্থায় আবাসন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। অন্যথায়, এ শিল্প চরম ঝুঁকির মধ্য পড়বে। এক বছরের ব্যবধানে আবাসন শিল্পে নির্মাণসামগ্রীর দামের তারতম্য দেখিয়ে রেডার নেতারা জানান, গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যে রড পাওয়া যেত প্রতি কেজি ৭৬ টাকা ৫০ পঁয়সা দরে, তা বর্তমানে ৯৬ টাকা ৫০ পঁয়সায় কিনতে হচ্ছে। ২০% দাম বাড়তি। যে সিমেন্টের বস্তা ছিল ৪২৫ টাকা, সেটি বর্তমানে শতকরা ২২% থেকে ২৫% বেড়ে হয়েছে ৫৩০-৬৫০ টাকা। ঢালাইয়ের জন্য ব্যবহৃত ডোমার বালু ছিল ৩৮ টাকা সিএফটি, বর্তমানে ২২% দাম বেড়ে হয়েছে ৫২ টাকা। সাধারণ ভরাট বালুর দাম ট্রাকপ্রতি ৩১০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪০০০ টাকা। দাম বেড়েছে ২২%। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এক হাজার ইট খরচসহ পাওয়া যেত ৯০০০ টাকায়, কিন্তু এখন কিনতে হচ্ছে ১২০০০ টাকা দরে। নির্মাণসামগ্রীর সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকদেরও মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, ৪০০-৫০০ টাকায় কাজ করা শ্রমিকদের বর্তমানে দিনপ্রতি মজুরি গুনতে হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকা। 

রেডার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান কাজী। রাজশাহীর আবাসন প্রতিষ্ঠান আল-আকসা প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। তিনি বলেন, ‘২০১২ সালের দিকে রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসা শুরু হয় বলা যায়। এর আগে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কিছু ব্যবসা হতো। তবে ২০১৫ সালের দিক থেকে শুরু করে গত বছরের শেষ পর্যন্ত ভালোই চলছিল আবাসনের ব্যবসা। কিন্তু এ বছর থেকে আবাসন ব্যবসা চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গৃহনির্মাণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
 
তিনি বলেন, ‘মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যেই খুব অল্প লাভে আবাসনের ব্যবস্থা করে আসছিলাম। কিন্তু গত আট মাস থেকে আবাসন খাতের জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে অনেকেই কাজ থামিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। নির্মাণসামগ্রীর ঊর্ধ্বগতির কারণে ক্রেতাদের আস্থা ও নিজ প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখতে পারছি না। অনেক সময় নিজের ক্ষতি স্বীকার করেও কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আর কাজ থেমে গেলে এই সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ দায়বদ্ধতার ব্যাপারে মিজানুর রহমান বলেন, ‘যদিও অনেক প্রজেক্ট আমরা ক্রেতাদের কাছে আগে বিক্রি করে থাকি সেক্ষেত্রে বর্তমানে একটি ভবন তৈরি করতে যে উৎপাদন খরচ হচ্ছে তাতে ইতোমধ্যে ৩০% থেকে ৪০% লসে আছি। তারপরেও এটি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা ধরে রেখেছি।’ মেসার্স রহমান ডেভেলপার্সের ম্যানেজিং পার্টনার ও রেডার সভাপতি তৌফিকুর রহমান লাভলু বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় খুব অস্বস্তিতে রয়েছি। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে সেটি আবাসন খাতের জন্য ভালো না। গত আট মাসের ব্যবধানে যে হারে দাম বেড়েছে তাতে নিজেদের ক্ষতি মেনে নিতে হচ্ছে। সরকার কৃষির মতো আবাসন শিল্পেও যদি প্রণোদনা না দেয় তবে ছোট ছোট ব্যবসায়ী হারিয়ে যাবে। আর বড় ব্যবসায়ীরা লস টানতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন।
যদি জিনিসপত্রের দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে, তবে নিরুপায় হয়ে আমরা কাজ  বন্ধ করে দেব। তখন এ খাতের সঙ্গে যুক্ত তিন লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিপদগ্রস্ত হবে।’ তাই এই সেক্টরকে বাঁচাতে নির্মাণসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কঠোর মনিটরিংয়ের দাবি জানান রেডার সভাপতি তৌফিকুর রহমান। 

নির্মাণসামগ্রীর দিন দিন ঊর্ধ্বগতির ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার ভর্তুকি এবং কঠোর মনিটরিং হবে কি না তা জানার জন্য একাধিকবার রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিলকে তার মুঠোফোনে কল করা হয়। তিনি ফোন না ধরায় এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।


আরও সংবাদ   বিষয়:  আবাসন   রাজশাহী  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close
https://www.shomoyeralo.com/ad/1698384544SA-Live-Update.jpg