ই-পেপার বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৩
বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৩

শেকৃবি শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ
শেকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:০৮ পিএম আপডেট: ২৯.০৯.২০২২ ৫:১০ পিএম  (ভিজিট : ১৫৫৬)
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে গিয়ে শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসারের মধ্যকার অশোভন আচরণের জেরে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এমএ মান্নানের বিভাগীয় কক্ষে ৩০-৪০ জন কর্মকর্তা শোডাউন দিয়ে প্রবেশ করেন। কর্মকর্তারা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে, মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং টেবিলে রাখা ফাইনাল পরীক্ষার মূল্যায়নপত্র এলোমেলো করে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন, কাউন্সিল অ্যাফেয়ার্স শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার অলিউল আলম টুয়েল ,ভিসি দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার দুলাল মিয়া, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইলিয়াছুর রহমান এবং আওলাদ হোসেন, সীড টেকনোলজি বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইব্রাহিম খলিল খান এবং একই বিভাগের সেকশন অফিসার হিমাংসু মন্ডল, সহকারী রেজিস্ট্রার প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার মোঃ জান্নাতুল হাসান, এস্টেট শাখার সেকশন অফিসার গৌতম চন্দ্র রায়, বহিরাঙ্গন শাখার উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন, রেজিস্ট্রার শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার রাজীব চন্দ্র বসাক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার , প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামরুল হোসেন, কৃষি অর্থনীতি বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুল হামিদ, অর্থ ও হিসাব শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুল হান্নান, একই শাখার সেকশন অফিসার শহিদুজ্জামান শাওন এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার নাজমুল আহসান বেগ, শারীরিক শিক্ষা শাখার সেকশন অফিসার নির্মল চন্দ্র দে এবং উপ-পরিচালক নূর-ই-আলম মামুন, স্টোর শাখার সহকারী স্টোর অফিসার আবুল কালাম আজাদ, ফিসারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের সেকশন অফিসার মাহামুদুল হাসান, সেকশন অফিসার রেজওয়ান জিহাদ।

এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার শিক্ষক এমএ মান্নান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে তার বাচ্চার চিকিৎসা নিতে গেলে মেডিকেল অফিসারের সাথে তর্কাতর্কি হয়। সেই ঘটনার জের ধরে পরদিন কর্মকর্তারা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে ।

শেখ কামাল অনুষদ ভবনে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী কিছু শিক্ষার্থী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সেদিন ৩০-৪০ জন কর্মকর্তা শোডাউন দিয়ে অনুষদে প্রবেশ করে এবং মান্নান স্যারের চেম্বার যায়। পরে চেম্বার থেকে অনেক জোরে জোরে আওয়াজ আসছিলো।

এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক মান্নান বলেন, আমি আমার ছোট বাচ্চাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে রাহাতের (শিক্ষার্থী) সাথে দেখা হয়। যেহেতু মেডিকেল সেন্টার খোলা ছিল আমি আর রাহাত মেডিকেল অফিসে যাই। কিন্তু রুমে ঢোকার সাথে সাথেই ডাক্তার আমাকে তুমি সম্বোধন করে ছুটির দিনে এসেছি বলে খারাপ ব্যবহার করে। ঘটনার এক পর্যায়ে আমার ছাত্র রাহাতের সাথে ডাক্তারের বেশ কথা কাটাকাটি হয় এবং ডাক্তার আমার বাচ্চার জন্যে প্রেসক্রিপশন লিখে দেয়। পরে বিষয়টি সেখানেই সমাপ্ত হয়ে যায়।

কিন্তু পরদিন সোমবার পরীক্ষা শেষে আমার ডিপার্টমেন্টে আসলেই ৩০-৪০ জন অফিসার মারমুখী হয়। পরীক্ষা নেওয়ার ফাইনাল খাতাসহ আমার রুমের আসবাবপত্র উলটপালট করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় আমি প্রক্টরকে কল দিতে চাইলে তারা আমার মোবাইল কেড়ে নেয় এবং যাওয়ার সময় সেটি ছুড়ে মারে। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক বিচার পাওয়ার জন্যে ইতোমধ্যেই আমার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।

মেডিকেল সেন্টারের অফিসার ডা. খন্দকার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মান্নান স্যার এবং আমার মধ্যে ঘটনা ছিল অপ্রত্যাশিত এবং এর কারণ ও ব্যাখা দিতে আমি অপারগ। শনিবার আমার কার্যদিবস না থাকলেও উপাচার্য মহোদয়ের অনুরোধে আমি উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। এমন একটা দিনেই ২৪ সেপ্টেম্বর মান্নান সাহেব আমাদের মেডিকেল সেন্টারে আসেন এবং তার বাচ্চার চিকিৎসার কথা বলেন। “আপনি শনিবার (ছুটির দিন) এসেছেন, সমস্যা নেই আপনার সমস্যার কথা বলেন”- এটাই ছিল আমার পক্ষ থেকে মান্নান সাহেবের সাথে কথা।  এ কথা বলায় মান্নান সাহেব এবং রাহাত নামের তার এক শিক্ষার্থী আমাকে স্টুপিড বলে সম্বোধন করে এবং দু'জনেই জোরে জোরে কথা বলা শুরু করেন। তখন আমি তাদের আর কিছু বলার সুযোগ পাইনি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরে সোমবার রেজিস্ট্রার আমাকে অভিযোগপত্র দিতে বললে আমি ওইদিন বিকালে একটি অভিযোগপত্র রেজিস্ট্রার বরাবর জমা দেই।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম এ কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি তাকে কেনো অভিযোগপত্র জমা দিতে বলবো? তার অভিযোগপত্র আমি পেয়েছি। কিন্তু এমন কিছু জমা দেয়ার জন্য আমি তাকে বলিনি। 

সোমবার কর্মকর্তারা শিক্ষকের রুমে গিয়ে হেনস্তা করার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. খন্দকার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, কর্মকর্তারা ৫-১০ জন আমার কাছে এসেছিলো। আমি তাদেরকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর জন্য নিষেধ করি। পরে কি হয়েছে জানি না।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইলিয়াসুর রহমান বলেন, আমি এ ঘটনা সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। আমার জানা মতে ওইদিন এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

কাউন্সিল অ্যাফেয়ার্স শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. অলিউল আলম টুয়েলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হারুনুর রশীদ বলেন, এরকম একটি বিষয় কখনোই প্রত্যাশিত না। তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলা কঠিন। উপাচার্য স্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর তদন্ত হলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

/এসকে


আরও সংবাদ   বিষয়:  শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com