ড. মিল্টন বিশ্বাস
সুন্দর ও মুক্ত পরিবেশের মধ্য দিয়ে পালন হয়েছে ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস। দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীর অবদান মূল্যায়ন করলে এই দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করা সম্ভব। ওপরন্তু গত ১৩ বছরে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও তাদের কার্যক্রমের সাফল্যগাথা বিশ্লেষণ করলেও স্পষ্ট হবে এই দিবসটি উদযাপনের তাৎপর্য। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করে। ’৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে সম্মিলিতভাবে ২১ নভেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগে ২৫ মার্চ সেনা, ১০ ডিসেম্বর নৌ এবং বিমান বাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর আলাদাভাবে দিবসগুলো পালন করা হতো। পরে ২১ নভেম্বরের তাৎপর্য সমুন্নত রাখতে সম্মিলিত দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালনের পেছনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সক্রিয়। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর অবদানকে সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয় এ দিবসটিতে।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবলীলার জবাবে অস্ত্র তুলে নেয় বিপ্লবী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার এবং অন্য সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে এগিয়ে আসে পূর্ব পাকিস্তানের কর্মরত বাঙালি নাবিক ও নৌ অফিসার, সেনা ও বিমান কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল হাজার হাজার যুবক। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ধারণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে পাকিস্তানি শাসকদের স্বপ্ন নস্যাৎ ও তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর। মুজিবনগরে গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার কর্নেল এমএজি ওসমানীকে (পরবর্তী সময়ে জেনারেল) মুক্তিবাহিনীর প্রধান নিয়োগ করে। তার ওপর মুক্তিবাহিনীকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকরা দ্রুত নিজেদের সুসংগঠিত করে পাল্টা আক্রমণ করে। সারা দেশকে বিভক্ত করা হয় ১১টি সেক্টরে, যার নেতৃত্ব প্রদান করা হয় একেকজন সুশিক্ষিত পেশাদার সেনা কর্মকর্তাকে। আট মাস পর ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর চূড়ান্তভাবে সম্মিলিত আক্রমণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। সেদিন স্থল, নৌ ও আকাশপথে কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে চালানো হয় ত্রিমুখী আক্রমণ। উন্মুক্ত হয় বিজয়ের পথ। এই আক্রমণ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সফলতা লাভ করে জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে। তারা বাধ্য হয় পশ্চাদপসারণে। সুশিক্ষিত একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে সূচিত হয় মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের ইতিহাস। তারপর মিত্র বাহিনীর সহযোগে ঘোষিত হয় সার্বিক যুদ্ধ। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে আনে চূড়ান্ত বিজয়। বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ পরিচ্ছেদের ৬১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের সর্বাধিনায়কতা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে এবং আইনের দ্বারা তার প্রয়োগ নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
২.
বিভিন্ন সংকটে-বিপদে সশস্ত্র বাহিনী এ দেশের মানুষের পাশে থেকেছে সব সময়। ঝড়-তুফান, বন্যা তো আছেই, এর ওপর বৈশি^ক পরিস্থিতির উত্তাপও এসে লাগে, আর তখন আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। যেমন-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের মহামারিতে সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিয়োজিত ছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নিজের কাঁধে বহন করে গরিব জনগোষ্ঠীর কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন সেনা সদস্যরা। সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সে সময় পহেলা এপ্রিল (২০২০) সচিবালয়ের একটি সভা শেষে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে সেনাবাহিনী যথাসম্ভব কাজ করছে।’ তার বাহিনী এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনী যতক্ষণ সরকার চাইবে ততক্ষণ নাগরিক সেবায় সহায়তা প্রদান করবে।’ করোনার ধাক্কায় গোটা বিশ্ব যখন দিশেহারা তখন বাংলাদেশ পরিস্থিতি সামলে চলেছে দৃঢ়চিত্তে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ২৪ মার্চ থেকে দিনরাত কাজ করেছেন। দেশের মানুষকে বাসায় ঢুকিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সচেতনতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তারা। বাংলাদেশে ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংবাদ পাওয়ার পর শেখ হাসিনা দ্রুত নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি দেওয়া, দেশের বিভিন্ন স্থান লকডাউন করা, একাধিক দফায় সরকারি ছুটি বাড়িয়ে ২০২১ সালের অক্টোবর মাস অবধি করা, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য টেস্টের আওতা বৃদ্ধি, সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি, লোকজনকে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করানো, কোয়ারেন্টিনে রাখতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ত্রাণ বিতরণ-এসব পদক্ষেপ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরি ছিল। কিন্তু এসব ব্যবস্থার সঙ্গে ২৪ মার্চ থেকে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য সেনাবাহিনী নামানো ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেনাবাহিনীর প্রায় তিন হাজার এবং নৌবাহিনীর ৪০০ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়। অন্যদিকে বিমান বাহিনী মেডিকেল এইডের কাজ করে। সে সময় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়, ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে সেনাবাহিনী করোনাভাইরাস সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে। বিশেষ করে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের কেউ নির্ধারিত কোয়ারেন্টিনের বাধ্যতামূলক সময় পালনে ত্রুটি/অবহেলা করছে কি না, তা পর্যালোচনা করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা স্থানীয় আর্মি কমান্ডারের কাছে অবস্থা পর্যালোচনার জন্য আইন অনুসারে সেনাবাহিনীর কাছে অনুরোধ জানাবেন। নৌবাহিনী উপকূলীয় এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কাজ করবে। বিমান বাহিনী হাসপাতালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী ও জরুরি পরিবহন কাজে নিয়োজিত থাকবে।’ অস্ত্র উঁচিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নয়, বরং নিজের জীবন বাজি রেখে অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে মানুষের জীবন বাঁচাতে দায়িত্ব পালন করেছেন।
৩.
শেখ হাসিনা সরকারের ১৩ বছরে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে আন্তরিক কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। ইতিপূর্বে ১৯৯৬ সালে এই আওয়ামী লীগ সরকারই তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এপিসি বা ২৯ যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক ঈষধংং-৪ ফ্রিগেট ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে। পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, ওয়ার কলেজ, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, ইওচঝঙঞ বা চবধপব কববঢ়রহম ইনস্টিটিউট, ইটচ বা ঝপরবহপব ্ ঞবপযহড়ষড়মু ইনস্টিটিউট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জনবল বাড়ানোর জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, একটি পদাতিক ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস ব্রিগেড ও বেশ কয়েকটি বিভিন্ন ধরনের ব্যাটলিয়নসহ অন্যান্য উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নতুন অৎসড়ঁৎবফ চবৎংড়হহবষ ঈধৎৎরবৎ কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ফোর্স কমান্ডার বা নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের পদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সৈনিকদের কল্যাণের জন্য গ্যারিসনে বা তার আশপাশে পরিবারের সঙ্গে বসবাসের কোটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অফিসারদেরকে হাউজিং প্লট দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ২০০৯ সালে বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় জঘন্যতম ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে যেসব সেনা কর্মকর্তা শহিদ হয়েছেন তাদের পরিবারের জন্য সরকারের নানাবিধ প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। অন্যদিকে হত্যাকারীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ‘দ্রুত বিচার আইনে’ বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে মেধাবী ও কর্মে নিযুক্ত সেনা কর্মকর্তার প্রতি বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নকল্পে আওয়ামী লীগ সরকার রাশিয়ার সঙ্গে ঋণ চুক্তি অনুযায়ী সমরাস্ত্র ক্রয় করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বৈশি^ক মানে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে জুলাই ২০১৩ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে মেডিকেল কোরে মহিলা সৈনিক ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সিলেটে একটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়নকে রূপান্তর করে একটি ম্যাকানাইজড পদাতিক ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
৪.
জাতিসংঘ সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং সপ্তম অধ্যায়ে শান্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংঘর্ষে লিপ্ত দুপক্ষের সম্মতি এবং মতৈক্যের ওপর ভিত্তি করে শুরু হয়। শান্তিরক্ষা বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো কর্তৃক অনুমোদিত একটি শান্তি চুক্তি বা শান্তি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৫৪টিতে ১,১৮,৯৮৫ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান শান্তি মিশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে এ দেশের সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্য জাতিসংঘের পতাকাতলে একত্র হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী শান্তি মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয় নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা মিশন এলাকায় বিবদমান দলকে নিরস্ত্রীকরণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা প্রদান, সড়ক ও জনপথ এবং স্থাপনা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। কঙ্গো, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা/রুয়ান্ডা, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্ততান, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর প্রভৃতি স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল নাম। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর শতাধিক সদস্য শহিদ হয়েছেন; পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন ১৪ জন। অন্যদিকে ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আয় হয়েছে ২৭ হাজার ৪৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে জাতিসংঘের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কারণ বিশ্বে সব প্রান্তের দুর্গত, নিপীড়িত ও নিরীহ মানুষের সেবায় এ শান্তিরক্ষীদের হাত সর্বদা প্রসারিত। সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও তারা আর্তমানবতার সেবা করে চলেছে।
৫.
জাতির প্রয়োজনে অর্পণ করা কঠিন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অনন্য। দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসা এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর দেশপ্রেম। শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে-‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়।’ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক এ জন্য প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সুশিক্ষিত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী থাকাটা অন্যতম শর্ত। আজকের পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিন বাহিনীর ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনার আধুনিকায়ন করে যেতে হবে। কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছে। এই ধারা অব্যাহত রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমুন্নত বিধান এবং সর্বোপরি দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপনের গুরুত্ব অপরিসীম।
লেখক:
অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়