ই-পেপার বুধবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
বুধবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার রোধে দরকার কমোডিটি এক্সচেঞ্জ: বিএসইসির চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৪১ এএম  (ভিজিট : ৮১)
আমদানি-রফতানির আড়ালে অর্থ পাচার রোধে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর লক্ষ্যে কাজ চলছে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে বিশ্ববাজার এবং নিজেদের বাজার পরিস্থিতি দেশের ভেতরে বসেই দেখা যাবে। এতে আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিংয়ের সুযোগ থাকবে না।’ 

সোমবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ইআরএফ মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। পণ্য আমদানিতে ‘ওভার ইনভয়েসিং’ মানে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলেই বিদেশে পাচার হচ্ছে। পণ্যের মূল্যের নামে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরবর্তী সময়ে বিদেশেই আমদানিকারকের পক্ষে কেউ গ্রহণ করছে এবং ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ ব্যবহার করা হয় পণ্য রফতানিতে। পণ্য রফতানির সময়ে যে পরিমাণ অর্থ কম দেখানো হয়, তা বিদেশে রফতানিকারকের পক্ষে বুঝে নেওয়া হয়। এই দুই মাধ্যমেই দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অর্থনীতিবিদদের। 

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের নিজেদের যদি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হয়ে যায়, তখন আপনারা এখানে বসেই দেখতে পারবেন ঘানায় আজকে চালের দাম কত বা আমাদের গার্মেন্টস পণ্য কোন দেশ কত দামে নিতে চায়। আমরা এখানে বসেই সারা পৃথিবীর বাজার এবং নিজেদের বাজার দেখতে পারব। তখন আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিংয়ের সুযোগ থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা কর্মসংস্থান। ভালো লোককে, ভালো বেতন দিয়ে ভালো কর্ম ঠিক করে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছিলাম। ঠিক সে সময় এমন এক জায়গায় যুদ্ধ বেধে গেল, সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়ল। যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস ও জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যেখান থেকে বেসিক ফুডগুলো বিভিন্ন দেশে যায়, সেই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে গেল। তার সঙ্গে ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রভাব পড়তে শুরু করল।’

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘জ্বালানির ওপর যখন প্রভাব পড়ে, তখন সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে। যুদ্ধ শুরুর পর যে ধাক্কা এলো তাতে আমাদের সবকিছু অন্যরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। যেখানে আমাদের বিদ্যুতের সারপ্লাস, সেখানে লোডশেডিংয়ের ধাক্কা এলো। যে দেশের মানুষ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেই দেশে আমাদেরকে সরকারিভাবে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এত বড় ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে গেছে, যা আমাদের কোনো রকমের বিচার-বিশ্লেষণ, ক্ষমতা বা আমাদের কোনো রকম কিছু করার বাইরে। এই ধাক্কায় যুক্তরাজ্যে তিন প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে। চার-পাঁচটা দেশের লিডারশিপ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। সে রকম পরিস্থিতিতে আমরা পড়িনি।

শিবলী বলেন, যে ধাক্কা আমাদের লাগার কথা ছিল, তার থেকে কম লেগেছে। পৃথিবীতে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৮০-৯০ শতাংশ। আমাদের দেশে ঠিক উল্টো। যেখানে ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, সেখানে আমাদেরকে প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিতেই হবে। সে কারণে আমরা ফ্লোর প্রাইস দিয়ে সাময়িক একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না।

ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সাবেক সভাপতি আজম যে চৌধুরী এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সহ-সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান।

সেমিনারে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের বাজারে জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম। আমরা মোটামুটিভাবে মানুষের কথা শুনে বিনিয়োগ করে। এটা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং দক্ষ জনবলের সংখ্যা কম।

তিনি বলেন, আমাদের বাজারে অপর্যাপ্ত পলিসি সাপোর্ট। ব্যাংকের ৬-৯ যে সুদের হার আছে। এর অর্থ হলো আমি ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারব। কিন্তু বড় কোম্পানিগুলো ব্যাংকের কাছে গেলে ৮ শতাংশ সুদেও ঋণ দেবে। তখন কি তারা পুঁজিবাজারে যাবে। পুঁজিবাজারে এলে তাকে এর থেকে বেশি হারে লভ্যাংশ দিতে হবে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নেই। খুব তাড়াতাড়ি আমরা ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হব। আমরা ইতিমধ্যে রুলস করে বিএসইসির কাছে পাঠিয়েছি। বিএসইসি অনুমোদন দিলে আমরা আশা করছি শিগগিরই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে পারব।

সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে ইআরএফের সাবেক সভাপতি সুলতান মাহমুদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বক্তব্য রাখেন।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close
https://www.shomoyeralo.com/ad/1698384544SA-Live-Update.jpg