বায়ুদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত জিডিপি
পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে
|
![]() রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ব্রিদিং হেভি : নিউ অ্যাভিডেন্স অন এয়ার পলিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব ব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি। এ ছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার ঝুঁকি বাড়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু, বয়স্ক এবং সহজাত রোগে আক্রান্তরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এদের মধ্যে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্তরা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। গবেষণায় দেখা যায়, পুরুষ থেকে নারীরা বেশি ডিপ্রেশনে ভোগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত দূষণের মাত্রা থেকে এক শতাংশ দূষণ বাড়লে ডিপ্রেশনের আশঙ্কা ২০ গুণ বেড়ে যায়। এতে আরও বলা হয়, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছর বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ এবং ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে। বায়ুদূষণকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মৃত্যু এবং অক্ষমতার দিকে নিয়ে যাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুঁকির কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। দেশে আনুমানিক ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণ দায়ী। বায়ুদূষণের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, যার প্রভাব দেশের জিডিপিতে পড়ে। এ বিষয়ে সোমবার সময়ের আলোতে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে, বায়ুদূষণে বছরে জিডিপির ক্ষতি ৪ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ বায়ুদূষণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। তাই বায়ুদূষণকে নিছক পরিবেশগত ইস্যু হিসেবে দেখলে চলবে না। এর সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সরাসরি সম্পর্ক আছে। শীতের শুরুতে যখন প্রকৃতি শুষ্ক হয়ে উঠতে শুরু করে, সে সময়টায় ঢাকায় বাড়ে ধুলার অত্যাচার। রাজধানীর আশপাশে গড়ে উঠেছে সারি সারি ইটভাঁটা। প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া। এদিকে চলছে মেট্রোরেলসহ নানা নির্মাণকাজ। আর যানজট তো নিত্যদিনের সঙ্গী। এসব কারণেই রাজধানীর বায়ুদূষণ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক সংগঠন গ্রিনপিস ও এয়ার ভিজুয়ালের গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকার তথ্য এলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে ধুলোপ্রবণ এলাকাগুলোতে দিনে দুবার পানি ছিটানোসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও পরিস্থিতির খুব বেশি হেরফের হয়নি বলে জানা গেছে। বায়ুদূষণ একই সঙ্গে শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে যাচ্ছে, অথচ তা নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনও দেখা যাচ্ছে না। মানুষ প্রকৃতির অংশ, প্রাকৃতিক পরিবেশকে দূষিত করে মানুষ ভালো থাকতে পারবে না। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন- এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। |