ই-পেপার বুধবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
বুধবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

মিরাজ ম্যাজিকে সিরিজ জয়
রাজু আহাম্মেদ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫৯ এএম  (ভিজিট : ৯৬)
প্রাণপণ চেষ্টাই চালালেন রোহিত শর্মা, আঙুলের চোট নিয়ে হাসপাতাল ঘুরে আসা ভারতীয় অধিনায়ক তুলির শেষ আঁচড়টা টানতে পারলেন না। বলা ভালো, তাকে টানতে দেননি মোস্তাফিজুর রহমান। শেষ বলে সমীকরণ ছিল ৬ রান, দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে রোহিতকে ওই সমীকরণ মেলাতে দেননি কাটার মাস্টার। তাতেই ৫ রানের জয়, স্মরণীয় এই জয়েই ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার সিরিজ জয়ের উন্মাদনায় ভাসল বাংলাদেশ, সেটাও এক ম্যাচ হাতে রেখে।

শেষ বলে মোস্তাফিজ ম্যাচ জয় নিশ্চিত করলেন বটে, তবে জয়টা মূলত মেহেদী হাসান মিরাজের ম্যাজিক পারফরম্যান্সেই পাওয়া। ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারালেও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে এই ডানহাতি দলকে এনে দেন ২৭১ রানের লড়াকু সংগ্রহ। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই খেই হারানো ভারত শ্রেয়াস আইয়ার এবং প্যাটেলের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায়। এর পর নয় নম্বরে নেমে তাণ্ডব চালান রোহিত, ভারতীয় অধিনায়ক শেষ দুই ওভারে ৪০ রানের সীমকরণও মিলিয়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছিলেন, কিন্তু পেরে ওঠেননি। ২৬৬ রানে অতিথিদের থামিয়ে সিরিজ জয়ের উৎসবে মাতে স্বাগতিক শিবির।

৩৮ রানের দুর্ধর্ষ এক ইনিংস খেলে প্রথম ম্যাচে অভাবনীয় এক জয় এনে দিয়েছিলেন মিরাজ। হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। এ দিনও ম্যাচসেরার খেতাব উঠেছে তরুণ এই অলরাউন্ডারের হাতে। ব্যাটে এবং বলে এ দিনের জয় তথা সিরিজ জয়ের রূপকারও যে তিনিই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বাগতিকরা ছিল ছন্নছাড়া। টপঅর্ডার ব্যাটাররা বন্দি থাকেন ব্যর্থতার বৃত্তে। মোহাম্মদ সিরাজ এবং উমরান মালিকের গতিঝড়ে ছত্রখান হয় অধিনায়ক লিটন দাস এবং নাজমুল হোসেন শান্তর স্টাম্প। এর আগেই সিরাজের শিকার হয়েই ফেরেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়।

টপ অর্ডার ব্যর্থ হওয়ার পর মিডল অর্ডার ধসে পড়ে অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের ঘূর্ণিতে। তার শিকার হয়ে সাত বলের ব্যবধানে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এবং আফিফ হোসেন সাজঘরের পথ ধরলে ৬৯ রানেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দল ১০০ পেরুতে পারবে কি না, সেটা নিয়েও ছিল সংশয়। মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গী করে সেই শঙ্কা দূর করেন মিরাজ। সপ্তম উইকেটে গড়েন ১৪৮ রানের অনবদ্য এক জুটি, ভারতের বিপক্ষে যেকোনো উইকেট জুটিতেই এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। উমরানের শিকার হয়ে ৭৭ রান করা মাহমুদউল্লাহ যখন ফেরেন, দলের রান ততক্ষণে ২০০ পেরিয়ে গেছে।

নির্দিষ্ট করে বললে, ৪৬.১ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ২১৭। সেখান থেকে পুঁজিটা আড়াইশ হলেই বেজায় খুশি থাকত স্বাগতিকরা। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরিতেই যে খুশি হতে পারছিলেন না মিরাজ। সিরাজ-উমরান-শার্দুলদের ওপর তাণ্ডব চালান এই ডানহাতি। ১১ বলে ১৮ রান করার পথে নাসুম আহমেদও ব্যাট চালাতে থাকেন সমানতালে। তাতে শেষ ২৩ বলে টাইগারদের ঝুলিতে যোগ হয় ৫৪ রান। শেষ পাঁচ বল থেকে ১৫ রানের দূরত্ব ঘুচিয়ে সেঞ্চুরির উল্লাসে মাতেন মিরাজ। ৮৩ বলে কাঁটায় কাঁটায় ১০০ রানের ইনিংসটি তিনি সাজান ৮টি চার এবং চারটি ছক্কার মারে।

পরে বল হাতেও ভেলকি দেখান মিরাজ। তার অফস্পিনেই বোকা বনে যান লোকেশ রাহুল। ৮২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে ভীতি ছড়ানো শ্রেয়াস আইয়ার পথ হারান। তবে শুরুর বোলিংয়ে ভারতকে চেপে ধরেন দুই পেসার ইবাদত হোসেন এবং মোস্তাফিজ। দ্বিতীয় ওভারেই বিরাট কোহলিকে বোল্ড করেন ইবাদত। শিখর ধাওয়ানকে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন মোস্তাফিজ। পরে সাকিবও যোগ দেন উইকেট শিকারের উৎসবে। সুন্দর এবং শার্দুলকে ফেরান তিনি। তবে ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারানো ভারত শ্রেয়াস এবং অক্ষরের ১০৭ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায়। মিরাজের ঘূর্ণিতে জুটি ভাঙার পর ইবাদতের জোড়া আঘাত-৫৬ রান করা অক্ষরের পর ফেরেন দিপক চাহার।

২১৩ রানে যখন ৮ উইকেট হারায় ভারত, জয়টা তখন খুব কাছেই দেখতে পাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচের শেষ নাটকীয়তা তখনও বাকি ছিল। ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ নেওয়ার সময় আঙুলে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া ভারতীয় অধিনায়ক ফেরেন দলের সিরিজ হার ঠেকাতে। ক্যারিয়ারে প্রথমবার নয়ে নেমে শুরু করেন তাণ্ডব। তাতে ভয় ধরেছিল, রোহিতের তিনটি চার এবং পাঁচটি ছক্কায় ২৮ বলে ৫১ রানের ইনিংসে ম্যাচটা হয়ে উঠেছিল রোমাঞ্চকর, সেই রোমাঞ্চের ভেলায় ভেসে শেষ হাসিটা হেসেছে বাংলাদেশ। করেছে উৎসব, অনুমিতভাবেই সেই উৎসবের মধ্যমণি ‘ম্যাজিকম্যান’ মিরাজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৭১/৭ (এনামুল ১১, লিটন ৭, শান্ত ২১, সাকিব ৮, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৭৭, মিরাজ ১০০*, নাসুম ১৮*; সিরাজ ২/৭৩, উমরান ২/৫৮, সুন্দর ৩/৩৭)

ভারত : ৫০ ওভারে ২৬৬/৯ (কোহলি ৫, ধাওয়ান ৮, শ্রেয়াস ৮২, সুন্দর ১১, রাহুল ১৪, অক্ষর ৫৬, রোহিত ৫১*; মিরাজ ২/৪৬, ইবাদত ৩/৪৫, মোস্তাফিজ ১/৪৩, সাকিব ২/৩৯, মাহমুদউল্লাহ ১/৩৩)

ফল : বাংলাদেশ ৫ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা : মেহেদী হাসান মিরাজ




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close
https://www.shomoyeralo.com/ad/1698384544SA-Live-Update.jpg