জাপান থেকে আসা আলোচিত দুই শিশুর মা সোমবার (২৬ নভেম্বর) গণমাধ্যমে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এদিকে একইদিন শিশু দুটির বাবাও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। শিশু দুটির বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরান শরীফ এবং মা জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানো পারিবারিক আদালতে থাকা এ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চান।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার চেষ্টার সময় এরিকোকে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। সোমবার বেলা দুইটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আইনজীবীর চেম্বারে এরিকো গণমাধ্যমকে ব্রিফিং করেন। পরে বেলা সাড়ে তিনটায় সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গণে ব্রিফিং করেন ইমরান।
গণমাধ্যমকে বাংলা ভাষায় এরিকো নাকানো বলেন, গত বছরের জুলাইতে বাংলাদেশে এসেছি, আমার বাচ্চাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে এসেছিলাম। কারণ, তাদের বাবা ইমরান শরীফ জাপান থেকে আমাকে না বলে পালিয়ে তাদের নিয়ে এসেছে। আপিল বিভাগ আমাকে বাচ্চাদের প্রবেশনাল কাস্টডি দেয়। মামলাটি (পারিবারিক আদালতে থাকা) তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়। তিনটি সন্তানের মধ্যে একটি বাচ্চাকে জাপান ফেলে এসেছি, দুটি বাচ্চার জন্য লড়াই করছি। এই মামলার শেষ দেখতে পাচ্ছি না। তার মধ্যে আমার মা অনেক অসুস্থ; মৃত্যুশয্যায়। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি বিবেচনা করতে আদালতকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমার পেছনে ইমরানের একজন গোয়েন্দা সার্বক্ষণিক থাকে। সব জায়গায় তার ভাড়া করা গোয়েন্দা পেছনে থাকে। এরিকো বলেন, সবচেয়ে ছোট বাচ্চাকে মায়ের কাছে রেখে এসেছিলাম। তবে কয়েক মাস ধরে মা অসুস্থ। ছোট বাচ্চাটি সব সময় ফোন করে কান্নাকাটি করে। মায়ের অসুস্থতার খবরে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম।
এরিকোর লিখিত বক্তব্য পরে গণমাধ্যমে পাঠান তার আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সুপ্রিম কোর্ট ও পারিবারিক আদালতে এখন ছুটি চলছে এবং পারিবারিক আদালতে মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ১১ জানুয়ারি উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে এরিকো বলেছেন, তাই তিনি মৌখিকভাবে ইমরান শরীফের সঙ্গে শেয়ার করেছেন যে তিনি এই ছুটিতে অল্প সময়ের জন্য মেয়েদের সঙ্গে জাপান যেতে চান এবং ১০ জানুয়ারির মধ্যে ফিরে আসতে চান।
এরিকো গণমাধ্যমকে বলেন, আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না যে আমি বাচ্চাদের পালিয়ে নিয়ে যাব। মাকে দেখে চলে আসব, এটি আমার উদ্দেশ্য ছিল। ইমরান শরীফ ২৩ ডিসেম্বর রাতে তার মেঝ মেয়েকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন এরিকো। ব্রিফিংয়ে এরিকোর সঙ্গে তার প্রথম সন্তান ও আইনজীবী শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ইমরান শরীফ গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমি বাচ্চা ছিনতাই করিনি। এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা। ইমরান বলেন, বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে মেয়েকে বলেনি যে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমার মেয়ে শকড হয়ে গিয়েছিল। আমার মেয়ে আমার কাছে আশ্রয়ের জন্য এসেছে। যে মেয়ে আশ্রয় চেয়েছে, তাকে আমি কীভাবে আশ্রয় দেব না।
’অল্প সময়ের জন্য’ মেয়েদের নিয়ে এরিকোর জাপান যেতে চাওয়া এবং ’১০ জানুয়ারির মধ্যে ফিরে আসা’র বিষয়টি জানানো প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, এ বিষয়ে এরিকো কোনো কিছুই তাকে বলেননি। ইমরান শরীফ বলেন, সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে, বিদেশ যেতে পারবে না। আদালতে উনার (এরিকো) পাসপোর্ট জমা দেওয়া আছে। সেই পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার না করে নতুন পাসপোর্ট বানিয়েছেন গুপ্তভাবে।
ইমরান অভিযোগ করে বলেন, উনার (এরিকো) উদ্দেশ্য একটাই, আমাকে নিঃসন্তান করে বাচ্চাদের নিয়ে চলে যাবেন, যেভাবেই হোক না কেন। উনি (এরিকো) আসুক, উনার সঙ্গে ফয়সালা করে একটা কিছু করি।
বাবা- মা শিশুদের সঙ্গে যা করছেন, তা কি তাদের জন্য মঙ্গলজনক—এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান শরীফ বলেন, অবশ্যই না। আমি কী করব? আমি তো ভুক্তভোগী বাবা। আমি উনাকে (এরিকো) বারবার আহ্বান জানিয়েছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইমরান শরীফ বলেন, সমাধান খুবই সাধারণ। উনি যেন আমাকে বাচ্চাদের জীবন থেকে মুছে না দেন। মুছে দেবেন না বলে যদি কথা দেন, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। ছোট মেয়ে জাপানে আছে দেড় বছর, কথা বলতে দেননি। ছোট মেয়ের জীবন থেকে আমাকে মুছে দিয়েছেন। বড় দুই মেয়েকে মুছে দিতে চেষ্টা করেছেন।
ইমরান বলেন, আমার পিতৃত্ব খুন করে ফেলা হচ্ছে। আমার নাম মেয়েদের জীবন থেকে যদি উনি (এরিকো) মুছে দেন, তাহলে আমি অবশ্যই বসে ফয়সালা করব। চাওয়া, পারিবারিক আদালতে গিয়ে তাড়াতাড়ি বিষয়টি মীমাংসার।
প্রসঙ্গত জাপানের নাগরিক এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরানের ২০০৮ সালের ১১ জুলাই বিয়ে হয়। তাদের তিন মেয়েসন্তান রয়েছে। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। এরপর গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। ছোট মেয়ে জাপানে রয়েছে। তবে ইমরানের কাছ থেকে দুই মেয়েশিশুকে ফিরে পেতে ঢাকায় এসে গত ১৯ আগস্ট রিট করেন এরিকো। অন্যদিকে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে আরেকটি রিট করেন ইমরান। পৃথক রিটের ওপর শুনানি নিয়ে দুই শিশু তাদের বাবা ইমরানের
...