ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

যতদিন ১০ নম্বর ততদিন পেলে
প্রকাশ: শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:৪০ এএম  (ভিজিট : ৪৪১)
ফুটবলে সবচেয়ে আরাধ্য ১০ নম্বর জার্সি। দলের সবচেয়ে আলোচিত ফুটবলারের জন্য বরাদ্দ থাকে এই জার্সিটি। ধরা যাক পেলে এই ১০ নম্বর জার্সিটি পরেননি! তাহলে যা ঘটত তা সহজেই অনুমেয়। ১০ নম্বর জার্সিটি তখন কেবলই একটা সংখ্যা। ব্রাজিলকে ফুটবলের দেশ বানিয়েছেন পেলে। লাতিন ফুটবলে যে নান্দনিকতা তার রূপকারও ফুটবলের ‘কালো মানিক’। আর ফুটবলারদের জন্য দিয়েছেন গর্বের প্রতীক ১০ নম্বর জার্সি।

একটা টিভি শো করতেন বিশ্ব ফুটবলের অহংকার দিয়েগো ম্যারাডোনা। এই প্রোগ্রামটির নাম ছিল ‘লা নোচে ডেল’। বাংলা করলে দাঁড়ায় ১০ নম্বরের রাত। সেই টিভি অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন পেলেও। সেটা অন্য প্রসঙ্গ। তবে ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব, গৌরব তথা ঐতিহ্যের প্রতীক ১০ নম্বর জার্সি। গায়ে ১০ নম্বর জার্সি ওঠা মানেই যেন পুরো দলের দায়-দায়িত্ব তার কাঁধে। ১০ নম্বর কীভাবে এতটা বিশেষ হয়ে উঠল, এটা বুঝতে খুব বড় গবেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা এটি পরেছিলেন পেলে। আর এই ১০ পরিণত হলো ফুটবলারদের আকর্ষণের কেন্দ্রে।

এই ১০ নম্বর জার্সিটি প্রজন্ম পরম্পরায় কীভাবে পেলের ছোঁয়ায় গৌরবের শিখরে, এই প্রশ্নের মধ্যেই নিহিত আছে ফুটবলের রূপ-রস সর্বোপরি এক শাশ্বত সৌন্দর্য।  পাশাপাশি দুটো পাথর পড়ে আছে। ঘর্ষণ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এ দুটো শুধুই নিরেট পাথর। পাথরে পাথরে ঘর্ষণে আগুন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে পাল্টে গেল বিশ্ব সভ্যতা। একই অবস্থা ১০ নম্বরের ক্ষেত্রেও। অনেকটা ঘটনাচক্রেই এই ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ১০ নম্বর জার্সি পরেন পেলে। বাকিটা! লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপে কিংবা নেইমার সবাই ১০ নম্বরের মিছিলে।

তাকানো যাক ১৯৫৮-এর বিশ্বকাপের দিকে। সুইডেনের ওই আসরের জন্য জার্সি নম্বর ছাড়াই তাদের দলের স্কোয়াডের নাম ফিফার কাছে জমা দিয়েছিল ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন। পেলের বয়স মোটে ১৭। কৈশোরের লালিত্য চোখে-মুখে। এত বড় আসরে ব্রাজিল জাতীয় দলে পেলে খেলতে পারবেন কি না সেটাও অনিশ্চিত। বিশ্বকাপের আসল লড়াই শুরুর আগেই অনেকটা তড়িঘড়ি করেই বণ্টন করা হলো জার্সি। পেলে পেলেন ১০ নম্বর। গ্রুপ পর্বে সুযোগ পেলেন মাত্র এক ম্যাচ খেলার। নক আউট পর্ব থেকে শুরু হলো ১০ নম্বরের ম্যাজিক। তার গোলে ওয়েলসকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠল ব্রাজিল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পেলে হয়ে উঠলেন আরও ভয়ংকর। ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমির ম্যাচে করলেন হ্যাটট্রিক। ৫-২ ব্যবধানে জিতল ব্রাজিল। ফাইনালে পেলেকে আটকানোর সাধ্য ছিল না স্বাগতিক সুইডেনের। করলেন জোড়া গোল। মাত্র ৪ ম্যাচ খেলে ৬ গোল! আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা। সংখ্যা থেকে ১০ উন্নীত হলো ফুটবলারদের এক চিরস্থায়ী ব্র্যান্ডে।

নিজের ১০ নম্বর জার্সি পরা প্রসঙ্গে পেলের ভাষ্য, ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে এই ১০ নম্বর জার্সি আমাকে দেওয়া হয়। এটা যে গুরুত্বপূর্ণ এমনটা কেউই ভাবেনি। হঠাৎই এটা আমাকে দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে পেলে আর ১০ নম্বর জার্সি হয়ে ওঠে সমার্থক। ক্লাব খেলেছেন ফুটবলেও এই ১০ নম্বর জার্সি পরে।

সারা দুনিয়া ফুটবল বলতে অজ্ঞান। আর এর প্রথম ব্যক্তিটি ফুটবলের কালো মানিক। তাকে অনুসরণ করেই ফুটবলের এই জয়জয়কার। জনপ্রিয় ফুটবল বিশ্লেষক ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক গ্যারি লিনেকার এই ফুটবল সম্রাটকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বলেছেন, ফুটবলকে অমরত্ব দিয়েছেন পেলে। পরিশুদ্ধ ফুটবলের ধারক তিনি। বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি কাফু জানান, পেলে মারা গেছেন এই সংবাদটি সঠিক নয়। পেলে কখনোই মারা যেতে পারেন না। পেলে চিরন্তন।

ফুটবল আর পেলে যে এক সত্ত্বা। যতদিন ফুটবল থাকবে ততদিন থাকবেন পেলে। ১৯৬৬-এর বিশ্বকাপ জয়ী ফাইনালের হ্যাটট্রিকম্যান জিওফ হার্স্ট বলেছেন, পেলের সঙ্গে খেলতে পেরেছি এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব।

পেলের ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলাটা যেমন দেশ-কাল-ভেদে সব ফুটবলারদের গৌরব তথা শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক।

নেইমার

পেলের আগে, ১০ শুধু একটি সংখ্যা ছিল। আমি এটা কোথাও পড়েছি, আমার জীবনের কোনো এক সময়ে। কিন্তু সুন্দর এই বাক্যটি অসম্পূর্ণ। আমি বলব পেলের আগে ফুটবল ছিল শুধু একটি খেলা। পেলে সব বদলে দিয়েছেন। তিন ফুটবলকে শিল্পে পরিণত করেছেন, বিনোদনে পরিণত করেছেন। তিনি দরিদ্র, কালো এবং বিশেষত ব্রাজিলকে দৃশ্যমান করেছেন। সকাল এবং ব্রাজিলের মর্যাদায় বাড়ানোয় ‘দ্য কিং’ কে ধন্যবাদ। তিনি চলে গেছেন কিন্তু তার জাদু রয়ে গেছে। পেলে অমর!

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

অনন্য। শান্ত। প্রযুক্তির দিক থেকে দক্ষ। সৃজনশীল। নিখুঁত। একজন রাজা। পেলে যেখানে পৌঁছেছিলেন, সেখানে থাকছেন। কখনোই শীর্ষস্থান না হারিয়ে তিনি আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ফুটবলের রাজা মাত্র একজন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ। শোকের পৃথিবী। লিখিত ইতিহাসে অপরিসীম গর্বের সঙ্গে মিশে আছে বিচ্ছেদে দুঃখ। তার সঙ্গে যখনই দেখা হয়েছে, তিনি আমার প্রতি যে স্নেহ দেখিয়েছেন তা বলে বোঝানো যাবে না। এমনকি যখন আমরা দূরে থেকেছি তখনও। কোটি মানুষের জন্য তিনি গতকাল ও আজ পর্যন্ত উৎসাহ ছিলেন, আজীবন থাকবেন। তাকে ভুলে যাওয়া হবে না, তার স্মৃতি চিরন্তন 
থাকবে। শান্তিতে থাকুন কিং পেলে।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close