ই-পেপার বুধবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
বুধবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আমাকে পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে: তসলিমা নাসরিন
সময়ের আলো ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১:৪৩ এএম  (ভিজিট : ৩৬৮)
ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সার্জনের ভুল সিদ্ধান্তে তিনি পঙ্গু হতে চলেছেন বলে নিজের ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তাকে ‘বাংলাদেশি মুসলিম রোগী হিসেবে’ দেখা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফেসবুক ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে দেওয়া একাধিক পোস্টে ভুল চিকিৎসা নিয়ে এমন সব অভিযোগ করেছেন এই লেখিকা। 

ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ধিক্কার দিচ্ছি নিজেকে। ধিক্কার দিচ্ছি এতকালের আমার মেডিকেল জ্ঞানকে। আমাকে হাসপাতালে মিথ্যা কথা বলা হয়েছিল যে, আমার হিপ বোন ভেঙেছে। আমার জীবনে কোনো জয়েন্ট পেইন ছিল না, জয়েন্ট ডিজিজ ছিল না। আমাকে মিথ্যা কথা বলে, ফিমার ফ্র্যাকচারের ট্রিটমেন্টের নামে আমার হিপ জয়েন্ট কেটে ফিমার ফেলে দিয়ে আমাকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও লেখেন, ধিক্কার দিচ্ছি আমি কেন ক্রিমিনাল টিমের ট্র্যাপে পড়লাম। আজ আমি এক্সরে রিপোর্ট দেখলাম আমার। আমার কোথাও কোনো ফ্র্যাকচার হয়নি সেদিন। ফ্র্যাকচার হয়নি বলে আমার হিপ জয়েন্টে কোনো ব্যথা ছিল না, কোনো সুয়েলিং ছিল না। আমাকে বাংলাদেশি মুসলিম রোগী হিসেবে দেখা হয়েছে। যার কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে অপারেশন করা হবে। সেই নিরীহ রোগী দেশে ফিরে যাবে এবং ভেবে সুখ পাবে যে তার ট্রিটমেন্ট হয়েছে।

আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, মানুষকে বিশ্বাস করার ফল কী হতে পারে, যারা বন্ধু নয় তাদের বন্ধু ভাবার ফল কী হতে পারে, তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। নিজের জীবন দিয়ে টের পেলাম। হাসপাতালের এক ডাক্তারকে বিশ্বাস করেছিলাম। ভেবেছিলাম সে বোধ হয় বন্ধু, তাকে জানিয়েছিলাম যে পড়ে গিয়েছিলাম ঘরে, হাঁটুতে ব্যথা হচ্ছে, এক্সরে করতে হবে। সেই বন্ধু আমাকে পাঠিয়ে দিল তার হাসপাতালের অর্থপেডিক ডাক্তারের কাছে যিনি আসলে হিপ রিপ্লেসমেন্টের এক্সপার্ট। সেই এক্সপার্ট আমাকে বললেন, আমার নাকি ফিমার বোনে ফ্র্যাকচার হয়েছে, কিন্তু ফ্র্যাকচারের ফিক্সেশন ট্রিটমেন্ট না করে তিনি আমার হিপ রিপ্লেসমেন্ট করার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। আমি বাধা দিয়েছি। তিনি বারবার এসেছেন আমাকে কনভিন্স করতে। তিন-চারজন ডাক্তারকে পাঠিয়েছেন কনভিন্স করতে। আমাকে কোনো সময় দেওয়া হয়নি চিন্তা করতে, কারও সঙ্গে পরামর্শ করতে বা শুভাকাক্সক্ষীদের কারও সঙ্গে কথা বলতে।

যে কারণে হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়, তা হলো যদি জয়েন্ট রোগের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ইত্যাদি শল্যচিকিৎসা ব্যর্থ হয় যখন জয়েন্ট পেইন কোনো রকম ব্যথার ওষুধে সারানো যায় না যখন জয়েন্ট রোগের কারণে মুভমেন্ট করা সম্ভব হয় নয়, যখন একপাও হাঁটা যায় না যখন জয়েন্ট সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে ক্ষয় হয়ে শেষ পর্যায়ে চলে আসে যখন জয়েন্টের তীব্র যন্ত্রণায় মানুষ কোনো কাজ করতে পারে না, ঘুমোতে পারে না।  যখন নানা রকম আর্থ্রাইটিস রোগে জয়েন্ট বাতিল হয়ে যায় যখন জয়েন্টে টিউমার হয় বা ক্যানসার হয়। ওপরের কারণ ছাড়া হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হয় না।

অথচ ওপরের একটি কারণও আমার ছিল না। আমার জয়েন্টে কোনো ধরনের রোগ ছিল না। জয়েন্ট আমার চমৎকার ছিল, কোনোদিন কোনো পেইন ছিল না। যে সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম, সেই সমস্যার ট্রিটমেন্ট না করে ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলে আমার শরীরের সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছে। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, বড় ডাক্তাররা এমন ভয়াবহ ক্রাইম করতে পারেন। আর আমি জানি না আমারও বুদ্ধিসুদ্ধি কোথায় উবে গিয়েছিল যে, এমন ক্রাইমের শিকার হতে নিজেকে দিলাম!

এদিকে নিজের অসুস্থতা নিয়ে আরেক পোস্টে লেখেন, হাসপাতালের বেডে আমার শুয়ে থাকার ছবি দেখে অনেকে ভেবেছে, আমার বোধ হয় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়েছে। না, সেসব কিছুই হয়নি। সেদিন ওভারসাইজ পাজামা পরে হাঁটছিলাম ঘরে, পাজামা চপ্পলে আটকে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম। অগত্যা যা করতে হয়, করেছি। হাঁটুতে ব্যথা হচ্ছিল, আইস্প্যাক দিয়েছি, ভলিনি স্প্রে করেছি। মনে হলো হাঁটুর লিগামেন্টে হয়তো লেগেছে, কোনো হাসপাতালে গিয়ে এক্সরে করে দেখি কী হলো। গেলাম হাসপাতালে। এক্সরে আর সিটিস্ক্যান করে হাড়ের ডাক্তার বলে দিলেন পায়ের ফিমার নামের হাড়টির গলায় একখানা ক্র্যাক হয়েছে। এর চিকিৎসা কী, চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দুটি অপশন দিলেন। প্রথম অপশন ইন্টারনাল ফিক্সেশন, ফাটলের জায়গাটা স্ক্রু লাগিয়ে ফিক্স করে দেবেন। দ্বিতীয় অপশন হিপ রিপ্লেসমেন্ট, আমার হিপ কেটে ফেলে দিয়ে কিছু প্লাস্টিক মেটাল দিয়ে একটা নকল হিপ বানিয়ে দেবেন। কিন্তু ইন্টারনাল ফিক্সেশেনর বিপক্ষে অজস্র বাজে কথা এবং হিপ রিপ্লেসমেন্টের পক্ষে অজস্র ভালো কথা বললেন আমার কানের কাছে।


আরও সংবাদ   বিষয়:  তসলিমা নাসরিন  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close
https://www.shomoyeralo.com/ad/1698384544SA-Live-Update.jpg