কয়েক দিন হলো গ্রাম থেকে এসেছেন দাদু। মাঝেমধ্যে শহরের বাসায় আসেন তিনি। এবার এসেছেন ডাক্তার দেখাবেন উদ্দেশ্য করে। দাদু শহরে এলে সবচেয়ে ভালো সময় কাটে রাহাতের। দাদুর কাছে গল্প শোনা যায়। বিকাল হলে কলোনির রোড ধরে হাঁটতে যাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের কাহিনি শোনা যায়। খুশির অন্ত থাকে না রাহাতের। সে এবার চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে।
শীতের রাত। চেয়ারে বসে বসে নামাজ পড়লেন দাদু। ওখানেই বসে তসবিহ টিপছেন তিনি। বিছানায় লেপ জড়িয়ে শুয়ে আছে রাহাত। হঠাৎ কী যেন মনে হলো রাহাতের। দাদুকে উদ্দেশ করে বলে উঠল সে, জানো দাদু? আমার একটি পোষা দৈত্য আছে।
কী!
হ্যাঁ, আমার একটি পোষা দৈত্য আছে।
আবার পোষা যায় নাকি?
হ্যাঁ পোষা যায়, একশবার যায়। ওই দৈত্য আমার অনেক উপকার করে, অনেক অজানা বিষয় বলে দেয়।
তাই! অবাক হলেন দাদু।
তুমি আমাকে যেকোনো প্রশ্ন করতে পারো, দেখো ঠিকঠাক উত্তর দিয়ে দেবে আমার দৈত্য। খুশিতে হাসি হাসি মুখ রাহাতের।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে কিছু একটা বুঝতে চেষ্টা করলেন দাদু, কিছুই বুঝতে পারলেন না তিনি। এবার বললেন, ঠিক আছে দাদু, তাহলে প্রশ্ন করি, কেমন উত্তর দেয় তোমার পোষা দৈত্য।
আচ্ছা। রাহাত উত্তর দেয়।
বলো তো বাংলাদেশের জাতীয় পাখি, ফুল, ফল, মাছ ও পশুর নাম কী?
এক্ষুনি বলছি। বলেই লেপের ভেতরে গিয়ে ছড়া কাটতে থাকে রাহাত,
‘আমার পোষা দৈত্যের ছানা এসো আমার কাছে
তোমার কাছে আমার দাদুর জানার কিছু আছে।’
একটু বাদেই ঠিক ঠিক উত্তর দিতে পারে রাহাত, বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল, জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় ফল কাঁঠাল, জাতীয় মাছ ইলিশ ও জাতীয় পশুর নাম রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
ঠিকঠাক উত্তর পেয়ে খুশি হয় দাদু। তবে এটার উত্তর রাহাতের জানাটাই স্বাভাবিক। এবার প্রশ্ন করে দাদু, বলো তো মহাপ্রাচীর কোথায় অবস্থিত?
এক্ষুনি বলছি। বলেই ছড়া কাটতে থাকে রাহাত,
‘আমার পোষা দৈত্যের ছানা এসো আমার কাছে
তোমার কাছে আমার দাদুর জানার কিছু আছে।’
চীন দেশে। রাহাতের উত্তর।
হুমম্। এবার বলো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন কোন তারিখে।
এক্ষুনি বলছি। বলেই আবার ছড়া কাটতে থাকে রাহাত। এরপর বলে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তারিখে।
এবার সত্যি সত্যিই অবাক হলেন দাদু। সবকিছুর উত্তর দিয়ে দিচ্ছে রাহাত! এভাবে আরও কিছু প্রশ্ন করে উত্তর পেলেন দাদু, যেমন আতিয়া মসজিদ কোথায় অবস্থিত, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও লালবাগ কেল্লা কোথায় ইত্যাদি। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? কিছুই বুঝলেন না তিনি।
হঠাৎ আম্মু এলেন রুমে। মোবাইলে কথা বলবেন কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি! পোষা দৈত্যের রহস্যের জট খুলে গেল তখনই। রাহাতের গায়ের ওপরে থাকা লেপ টান দিতেই বেরিয়ে এলো স্মার্টফোন সেটটি। এতক্ষণে গুগলে সার্চ দিয়ে দিয়ে সবকিছু বলে যাচ্ছিল রাহাত! গুগলই তাহলে সেই পোষা দৈত্য! গুগল দৈত্যের কথা বলতেই হো হো হো করে হেসে উঠলেন দাদু।