আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানো সংবিধান পরিপন্থি
আরও দায়িত্বশীল ও মানবিক হতে হবে
|
![]() গত বছর পুলিশভ্যান থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আসামি পালিয়ে যায়। চিহ্নিত জঙ্গি আদালত থেকে ফেরার পথে কীভাবে পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যায় সেই প্রশ্নের সুরাহা আজ পর্যন্ত হয়নি। এ ঘটনাটি নিরাপত্তার ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। তবে তার সমাধান ডান্ডাবেড়ি কি না সেই প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে। উল্লেখ্য, বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনের প্রবিধান ৩৩০-এ হাতকড়া-সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। সেখানে শুধু পালিয়ে যাওয়া রোধে যতটুকু প্রয়োজন, তার বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো শক্তিশালী বন্দি সহিংস অপরাধে অভিযুক্ত হয় বা কুখ্যাত হিসেবে পূর্ব পরিচিত হয় বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উন্মুখ থাকে বা রাস্তা দীর্ঘ হয় বা বন্দির সংখ্যা অনেক বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এই প্রবিধানের কোথাও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই। উল্লেখ্য, ডান্ডাবেড়ির ব্যবহার কেবল জেলকোড ও কারা আইনের আওতাধীন। সোমবার সময়ের আলোতে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেলকোড অনুযায়ী কেবল কারাগারের ভেতরে কয়েদির কোনো অপরাধমূলক আচরণের ক্ষেত্রে জেল সুপার কর্তৃক কিছু শাস্তির বিধান থাকলেও বাইরে বা আদালতে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ডান্ডাবেড়ির কোনো আইন নেই। মায়ের মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ডান্ডাবেড়িসহ জানাজায় অংশগ্রহণের অমানবিক এমন একাধিক ঘটনায় সারা দেশে বইছে সমালোচনার ঝড়। প্রশ্ন উঠেছে, কোন আইনে বা ক্ষমতাবলে পুলিশ কিংবা কারা কর্তৃপক্ষ এমন নিষ্ঠুর, নির্যাতন-নিপীড়নমূলক ঘটনা ঘটাচ্ছে? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসামিকে ডান্ডাবেড়ি পরানোর সুনির্দিষ্ট কোনো আইনই নেই। বরং সংবিধান অনুযায়ী ডান্ডাবেড়ি পরানো অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তা ছাড়াও ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির না করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সংবিধান ও হাইকোর্টের আদেশটিও যথাযথ মানা হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না সময়ের আলোকে বলেন, বিচারাধীন বা সাজাপ্রাপ্ত কোনো ক্ষেত্রেই আসামিকে ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে না। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সবচেয়ে বড় আইন হচ্ছে দেশের সংবিধান। সংবিধানে যেটা নিষেধ আছে, সেটা নিয়ে যদি আইনও থাকে বা যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় সে আইন বাতিল বলে গণ্য হবে। এসব (ডান্ডাবেড়ি) আইন হচ্ছে ‘ব্রিটিশ কলোনিয়াল ল’। ব্রিটিশরা যে আইনগুলো করেছে সেগুলো হলো- শোষণ, শাসন এবং দমন-পীড়নের আইন। সেটি তো এখনও চলতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। যারা ডান্ডাবেড়ি পরিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের সাজা হওয়া উচিত। তারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানই সর্বোচ্চ আইন। সে দিকেই গুরুত্বের সঙ্গে নজর দিতে হবে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কারাবন্দিদের জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে অনুসৃত যে ন্যূনতম নীতিমালা তৈরি করেছে, সেখানকার ৩৩ নম্বর অনুচ্ছেদে ডান্ডাবেড়ি পরানোকে অমানবিক বলা হয়েছে। এই ধরনের অমানবিকতা সভ্য সমাজে চলতে পারে না। এ ধরনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষের আরও মানবিক ও দায়িত্বশীল আচরণ আমরা প্রত্যাশা করি। |