ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা  বুধবার ৩১ মে ২০২৩ ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
ই-পেপার  বুধবার ৩১ মে ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin Mohammad City (Online AD).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/780-90.jpg
বোমা হামলার হুমকি আনসার আল ইসলামের
হুমকি উপেক্ষা করে বইমেলায় মানুষের ঢল
এসএম মিন্টু ও আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশ: শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:৩৩ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 156

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় দুটি আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ না করায় অমর একুশে বইমেলায় বোমা হামলার হুমকি দিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। এরপর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বইমেলা ঘিরে। শুক্রবার বইমেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে পথে পথে পুলিশের পাশাপাশি তল্লাশি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এর ফলে দর্শনার্থীদের মেলায় প্রবেশে অনেকটা ভোগান্তি পোহাতে হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে বইমেলায়। এক পর্যায়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও বইমেলায় আগত দর্শনার্থীরা।

এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে উড়ো চিঠি পাঠিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও জেএমবি সদস্য মাওলানা মো. সাইফুল ইসলাম। এরপর থেকেই গোয়েন্দারা নড়েচড়ে বসেন। বৃহস্পতিবার গভীর থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বইমেলা জুড়ে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে।

এদিকে অমর একুশে বইমেলায় অনুষ্ঠানে শুক্রবার দুই মন্ত্রী আকস্মিক স্থগিত করা হয়েছে। দুটি আলাদা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শুক্রবার উপস্থিত থাকার কথা ছিল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের। কিন্তু শুক্রবার সকালে দুই মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা দুটি বার্তায় জানানো হয়েছে তারা বইমেলার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না।

অন্যদিকে বইমেলায় আসা দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই বোমা হামলার হুমকির বিষয়টি জানেন না। আবার যারা শুনেছেন তারা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী সময়ের আলোকে বলেন, মেলাকে ঘিরে প্রায় প্রতি বছর এমন হুমকি থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না। এগুলো নিয়ে ভয় পেয়ে হতাশ হলে চলবে না। এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে যে উড়ো চিঠি পাঠানো হয়েছে সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দা টিম মাঠে কাজ করছে। তিনি বলেন, সাধারণত জঙ্গিরা চিঠি দিয়ে হামলা করে না। তারপরও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা মাঠে কাজ করছি।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সময়ের আলোকে বলেন, আমরা উড়ো চিঠি কোথা থেকে এসেছে সেটি যাচাইয়ের জন্য কাজ করছি। তিনি বইমেলায় দর্শনার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের সদস্যরা নিরাপত্তা বেষ্টনী বসিয়ে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাগ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন। যারা বইমেলায় যাচ্ছেন তাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, জঙ্গিরা যে চিঠি দিয়ে হুমকি দিয়েছে সেটি আমরা ‘থ্রেট’ হিসেবে নিচ্ছি না। তারা আতঙ্ক ছড়ানোর জন্যই এমন চিঠি পাঠিয়েছে।

এর আগে ব্লগার দীপনকে থ্রেট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে- এ প্রসঙ্গে কমান্ডার আল মঈন বলেন, ২০১৩-২০১৫ পর্যন্ত টার্গেট কিলিং করেছে আনসার আল ইসলামসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। এই চিঠি যদি ভুয়া হয়েও থাকে আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। এ জন্যই দর্শনার্থীদের তল্লাশি করে ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে। ভেতরে যেন কোনো ধরনের নাশকতা না হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের বোমা হামলার চিঠির বিষয়ে শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তিনি বলেন, বোমা হামলার চিঠি নিয়ে ইতিমধ্যে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। জিডির কপি র‌্যাব ও সিটিটিসির কাছে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে তারা তদন্ত করছে।

তিনি বলেন, জঙ্গি হামলার চিঠির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছুটির দিনে বইমেলার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে চিঠির বিষয়টি মাথায় রেখে। এ ধরনের চিঠি আগেও পেয়েছি আমরা। এই চিঠির ওপর ভিত্তি করে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

বইমেলা চলাকালে সম্প্রতি লন্ডন প্রবাসী লেখক ও গবেষক ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারকে অনুসরণ করেছিল কয়েকজন। দাড়িওয়ালা ওই অনুসরণকারীদের মুখে মাস্ক ও মাথায় টুপি ছিল। এরপর অনুসরণকারীদের একজনকে নিঝুম মজুমদার শাহবাগ থানার কাছে জিজ্ঞাসা করলে ওই যুবক অস্বীকার করে দ্রুত সটকে পরে। পরে বিষয়টি র‌্যাব ও সিটিটিসি তদন্ত করে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, অনুসরণকারীদের চিহ্নিত করার জন্য র‌্যাব তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে তার সত্যতা পাওয়া যায়। অনুসরণকারীদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে কাজ করছে র‌্যাব।

সরেজমিন যা বলছে : শুক্রবার সকাল থেকেই বইমেলার সব প্রবেশপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত উপস্থিতি ও তৎপরতা দেখা গেছে। মূল গেট দিয়ে প্রবেশের সময় প্রতিটি গেটে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। ভেতরে প্রবেশের সময় সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও পকেট তল্লাশি করে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল। নারী ও পুলিশ সদস্যরা আলাদা আলাদা করে তল্লাশি করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড়ও বাড়ে। তবে সকালের দিকে বিক্রি কিছুটা কম দেখা গেছে। সবাই বিভিন্ন স্টলের সামনে গিয়ে বই দেখছিলেন।

মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, অনেকেই বোমা হামলার হুমকির বিষয়টি শোনেননি বা জানেন না। আবার যারা শুনেছেন তারা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, একুশে বইমেলা ঘিরে প্রায় প্রতি বছর নানা ধরনের হুমকি-ধমকির কথা শোনা যায়। শেষ পর্যন্ত এসব হুমকিদাতার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। এ কারণে এই ধরনের হুমকিতে ভয় পেয়ে ঘরে বসে থাকলে চলবে না।

যাত্রাবাড়ী থেকে মেলায় আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, কেউ কোথাও হামলা করলে কাউকে জানিয়ে করবে না। এখানে হামলার বিষয়টি যখন আগে জানিয়ে করেছে, তাই গুরুত্ব দেওয়ার দরকার মনে করি না। হামলাকারীরা কখনো আগে জানিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে কিছুই করবে না। তিনি বলেন, তারা আতঙ্ক ছড়াতে চেয়েছিল, কিন্তু সাধারণ বিষয়টিকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি।

একই কথা বলেন স্কুল শিক্ষিকা তৌহিদা নাসরিনও। তিনি বলেন, প্রতি বছর ছেলেমেয়েকে নিয়ে বইমেলায় আসি। সাধারণত শুক্রবার ছুটির কারণে এদিন আসা পড়ে। কোনো হুমকিতে ভয় পেলে হুমকিদাতাদের সুযোগ দেওয়া হবে। এর চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভালোই উপস্থিতি ও তৎপরতা দেখা গেছে। ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।

মেলার ভেতরে র‌্যাব ক্যাম্পে দায়িরত্ব কর্মকর্তারা বলেন, অন্যদিনের তুলনায় শুক্রবার সকাল থেকে মেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ও তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি গেটে তল্লাশি করে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। সকালের দিকে ডগ স্কোয়াড দিয়ে মেলার চারপাশে তল্লাশি করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।

চিঠিতে যা লেখা আছে : হাতে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে দুটি হোটেলে দেহব্যবসা বন্ধে পুলিশ বরাবর আবেদন করা হলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। তাই তারা পাকিস্তানের করাচি পুলিশ সদর দফতরের মতো বাংলাদেশের পুলিশ সদর দফতরে বোমা মেরে পুলিশ হত্যা করতে চায়। এর জন্য সুযোগের অপেক্ষায় আছে তারা। পুলিশ ওই দেহব্যবসা বন্ধ না করলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলায় বোমা মেরে বইপ্রেমীদের হত্যা করা হবে। কারণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, বইপ্রেমীরা দেহব্যবসার বিরুদ্ধে কিছু লেখেনি। ওই চিঠির নিচে স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপিকে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। তাতে মাওলানা সাইফুল ইসলাম নামের ব্যক্তির স্বাক্ষরের পর আনসার আল ইসলাম ও বাংলাদেশ জেএমবি লেখা রয়েছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com