বইমেলার শেষ ছুটির দিনে শিশুদের কলকাকলীতে মুখর ছিল মেলার শিশু চত্বর। মেলার শেষ সময়ে নিজেদের পছন্দমতো বই কেনার পাশাপাশি সিসিমপুর দেখে আনন্দমুখর সময় কাটিয়েছে ছোট্ট সোনামণিরা। শিশুদের ছোটাছুটি আর দুরন্তপনায় যেন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে শিশু চত্বর। ছন্দে-সুরে আর ছড়া-গানে এবারের বইমেলায় শেষ শিশুপ্রহরে আনন্দে মেতে ওঠে তারা। মাসব্যাপী এ বইমেলা শিশুদের বইপ্রেমী তরে তুলবে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা। অন্যদিকে শিশুদের মনন অনুযায়ী বই জোগান দিতে পেরে খুশি বই বিক্রেতারাও।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি থেকে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে মেলা শুরু হলে মাসের শেষ দিনই হয় বইমেলার শেষ দিন। সে হিসেবে মেলার সর্বশেষ ছুটির দিন ছিল গতকাল। নিয়ম অনুযায়ী, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় (শুক্র ও শনি) মেলার দুয়ার খুলে দেওয়া হয় বেলা ১১টায়। মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত চলে শিশুপ্রহর। গতকালও তার ব্যত্যয় হয়নি।
শনিবার সকাল থেকেই মেলায় ছিল শিশুদের আনাগোনা। বেলা ১১টায় মেলার দুয়ার খুলে দিলে আগে থেকেই অভিভাবকদের সঙ্গে অপেক্ষায় থাকা সোনামণিরা মেলায় প্রবেশ করে। দুয়ার খুলতেই খুদে বইপ্রেমীদের মনে যেন উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই। ছুটির দিনে নেচে গেয়ে সিসিমপুরের আয়োজিত অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখা গেছে শিশুদের।
প্রতি শুক্র ও শনিবার শিশুদের জন্য শিশু চত্বরে সকাল-বিকাল ও সন্ধ্যায় থাকে শিশু প্রহর। যেখানে থাকে শিশুদের প্রিয় অনুষ্ঠান সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্রগুলোর পরিবেশনা। মেলায় ঘুরে বেড়ানো আর বই কেনার পাশাপাশি শিশু চত্বরের সিসিমপুর মেলায় আসা শিশুদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে। গতকালও অনুষ্ঠান দেখতে এসেছে অনেক শিশু। পাশাপাশি কিনেছে নিজেদের পছন্দের বই।
শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশুদের ছোটাছুটি আর দুরন্তপনায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে শিশু চত্বর, ছন্দে-সুরে আর ছড়া-গানে মেতে ওঠে তারা। সিসিমপুরের চরিত্রগুলো শিক্ষণীয় নানা বিষয় মজার ছলে পরিবেশন করে। এরপর শিশুরা নেচে গেয়ে নিজেদের মতো করে সময় কাটান। অমর একুশে বইমেলার শেষ শিশু প্রহরে সিসিমপুরের জনপ্রিয় চরিত্র হালুম, টুকটুকি, ইকরি ও শিকুদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছে শিশুরা। সিসিমপুরের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বেলা ৩টায়। সিসিমপুরের শেষ পরিবেশনা ছিল সন্ধ্যায়।
মেলায় আসা শিশু সামিউল জানায়, মেলায় এসে তার ভালো লাগছে। সে সিসিমপুর দেখেছে। আর বাবা তাকে কিনে দিয়েছে বর্ণমালা শেখার খেলার উপকরণ। অন্যদিকে জিনিয়া নামের আরেক শিশু জানায়, সে মূলত সিসিমপুর দেখার জন্য মেলায় এসেছে। প্রথমবারের মতো টিভিতে দেখা চরিত্রগুলোকে বাস্তবে দেখে তার অনেক ভালো লেগেছে।
মেলা নিজের শিশুকে নিয়ে এসেছেন রহমান ইমতিয়াজ নামের একজন। তিনি বলেন, শিশুরা এখানে এসে আনন্দ পায়। খেলার ছলে তারা অনেক কিছু শিখতে পারে। আবার তাদের পড়ার অভ্যাসও তৈরি হয়। শিশু চত্বরের স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর বইমেলায় শিশুদের পছন্দের বইয়ের তালিকায় রূপকথার পাশাপাশি ভূতের গল্পের বই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। এর বাইরেও বিজ্ঞান, সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার বইয়ে আগ্রহ বেশি কিশোরদের।
পঙ্খিরাজ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রুহি আক্তার বলেন, এবার বইমেলায় প্রচুর পরিমাণ শিশু-কিশোরদের বই বিক্রি হয়েছে। বিশেষ করে ভূতের গল্প, রূপকথা, মজার গল্প, ঈশপের গল্প বেশি বিক্রি হয়েছে। নলেজ মিডিয়া পাবলিকেশন্সের বিক্রয়কর্মী মামুন আহমেদ বলেন, ভূতের বই, ঈশপের গল্প, নলেজ ব্যাংক ও রূপকথার গল্প বেশি বিক্রি হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ওপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ফিকশন, নলেজ ব্যাংক ও থ্রিলার বই কিনছে।