বিদায়ের সুর বাজছে অমর একুশে বইমেলায়। বইপ্রেমীদের হয়তো মনে পড়ছে কবিগুরুর বিখ্যাত সেই উক্তি, ‘যেতে নাহি দিব হায়/তবু যেতে দিতে হয়’। মেলার এক মাস বইপ্রেমীদের মিলনমেলা ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিন। আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি মেলা শেষ হবে। তার আগেই যেন বইমেলায় বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর।
করোনা মহামারির পর এ বছর ভাষার মাসের প্রথম দিনই শুরু হয় বইমেলা। সে কারণেই এবারের বইমেলায় প্রত্যাশাও ছিল বেশি। শেষের দিকে জঙ্গিগোষ্ঠী মেলায় বোমা হামলার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠালেও দর্শনার্থীদের ভিড়ে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। এ বছর দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শুরুর দিন থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থী-পাঠকরা মেলায় ভিড় জমিয়েছে।
শুরুর দিকে বইয়ের বিক্রি কম থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়েছে। এতে প্রকাশকদের মুখেও হাসি ফুটেছে। এবারের বইমেলার আগেই বিশ^বাজারে কাগজের দাম বেড়েছে অনেকটাই। ফলে বইয়ের দামের ওপর এর প্রভাব পড়েছে অনেক। তারপরও পাঠকরা বই কিনেছেন। এর বাইরে প্রতিবার শেষের দিকে বৃষ্টির বাগড়ায় অনেক বই নষ্ট হয়। এ বছর প্রকৃতির সে বিরূপ আচরণ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
মেলায় বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি নানা বয়সি মানুষ বইমেলায় এসেছেন; মনের আনন্দে ঘুরে বেরিয়েছেন; বই দেখেছেন; সংগ্রহ করেছেন। এভাবেই কেটেছে বইমেলার প্রতিটি দিন। ব্যস্ততার জন্য সাধারণ দিনে যারা মেলায় আসতে পারেননি, বন্ধের দিনে তারা ঠিকই হাজির হয়েছেন প্রাণের মেলায়। ফলে ছুটির দিনগুলোতে সবচেয়ে মুখরিত থাকত বইমেলা। এ দুদিন বইয়ের বিক্রিও থাকত অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি।
বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে শিশুপ্রহর। বইমেলা চলাকালীন শুক্র ও শনিবার আয়োজন করা হয় শিশুপ্রহরের। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর শিশুপ্রহর আয়োজন নিয়ে ছিল নানা সীমাবদ্ধতা। তবে এ বছর শিশু চত্বরের স্থান পরিবর্তন করে বড় আকারে যাত্রা করে। শুরুর দিকে প্রস্তুতির ঘাটতি থাকায় কিছুটা রং হারিয়েছিল এ চত্বর। তবে এর পরপরই মেলায় জমে ওঠে শিশুপ্রহর। প্রতিটি শিশুপ্রহরে অসংখ্য শিশু এসেছে, পছন্দের বই কিনেছে। খেলেছে সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্রগুলোর সঙ্গে।
রোববার পর্যন্ত এবার মেলার তথ্যকেন্দ্রের হিসাব অনুসারে, নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ৩০৫টি। প্রকাশক, লেখক ও পাঠকরা বলছেন, নতুন অনেক বই প্রকাশ হচ্ছে এটা ঠিক, তবে বইয়ের মান ততটা উন্নত হচ্ছে না। প্রতি বছরের মতো এবারও এখন পর্যন্ত কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, বিজ্ঞানবিষয়ক, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই এসেছে সবচেয়ে বেশি।
প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে রহস্য, রোমাঞ্চ ও অভিযান ঘরানার উপন্যাসের একটি চল তৈরি হয়েছে। নতুন লেখকরা গতানুগতিক ধারার প্রেমের বা সামাজিক উপন্যাস লেখার পরিবর্তে লিখছেন রহস্য-রোমাঞ্চের জগৎ নিয়ে। পাশাপাশি সায়েন্স ফিকশনও একটা বড় অংশের তরুণ পাঠক পছন্দ করেছেন।
বাংলা একাডেমির সচিব এএইচএম লোকমান সময়ের আলোকে বলেন, এ বছর মেলা ২৮ তারিখের পর বর্ধিত করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের কেউ কিছু জানাননি। আর একুশে বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. কেএম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত আমরা মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর স্টল বিন্যাস ও খাবারের দোকানগুলোর বিন্যাস পাঠকরা পছন্দ করেছেন, প্রশংসা করেছেন। শুরুর দিকে আমাদের কিছু ত্রুটি থাকলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা তা সংশোধন করে নিয়েছি।
একুশে বইমেলায় রিয়াজুল হকের ‘পার্থিব আসক্তি অকল্যাণকর’: একুশে বইমেলায় অন্বেষা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে মো. রিয়াজুল হকের ‘কুরআন ও হাদিসে পার্থিব আসক্তি অকল্যাণকর’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মো. জহিরুল হক। বইমেলায় অন্বেষা প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
বইটি সম্পর্কে এর লেখক মো. রিয়াজুল হক বলেন, জাগতিক বিষয়াদি নিয়ে আমরা এত ব্যস্ত থাকি যে, আমরা ভুলেই যাই এই পৃথিবী থাকার জায়গা না। নানারকম ব্যস্ততায় আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরে যাই। অন্যের হক নষ্ট করি। ইবাদতে গাফিলতি করি। অথচ মৃত্যুকালে পৃথিবীর কিছুই নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়গুলো পাঠকের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।