ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বইমেলায় জঙ্গিদের হুমকি নাকি ‘তৃতীয় পক্ষের’ কারসাজি
বোমা হামলার চিঠির উৎস ৮ দিনেও অজানা
প্রকাশ: শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩, ৮:৪০ এএম আপডেট: ০৪.০৩.২০২৩ ৮:৪৬ এএম  (ভিজিট : ৪০৮৮)
একুশে বইমেলায় বোমা হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে পাঠানো চিঠির উৎস ৮ দিনেও জানা যায়নি। জঙ্গি সংগঠনের নামে আসা ওই চিঠি আদৌ জঙ্গিদের হুমকি, নাকি বইমেলা পণ্ড করতে ভীতি তৈরির লক্ষ্যে কোনো ‘তৃতীয় পক্ষের’ কারসাজি তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। যদিও মেলার শেষ দিন পর্যন্ত বোমা হামলার এমন উড়ো চিঠির কোনো প্রভাবও ছিল না অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। 

তবে এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের আশা প্রকাশ করে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক কর্মকর্তা।

এ ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা- কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, ‘বইমেলায় চিঠির মাধ্যমে বোমা হামলার হুমকির বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত বা নিশ্চিত করে বলার মতো কোনো তথ্য আমরা পাইনি। তবে আমরা এটা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি। যারা এটি করে থাকুক, তাদের দ্রুতই গ্রেফতার করতে পারব বলে দৃঢ়ভাবে আশা করি। জড়িতদের গ্রেফতার করা গেলে মূল রহস্য উদঘাটন করা যাবে।’

এ প্রসঙ্গে জঙ্গিবাদবিরোধী বিশেষ ভূমিকা রাখা এলিট ফোর্স র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সময়ের আলোকে বলেন, ‘চিঠি দিয়ে বইমেলায় হামলার হুমকির বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি র‌্যাবের পক্ষ থেকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই চিঠি আদৌ জঙ্গিরা দিয়েছে, নাকি তাদের নাম ভাঙিয়ে অন্য কেউ ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, আতঙ্ক ছড়ানোর জন্যই এমন চিঠি পাঠানো হয়ে থাকতে পারে। তবে তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

অন্যদিকে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা সময়ের আলোকে জানান, জঙ্গি সংগঠনের নামে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে পাঠানো ওই চিঠি মূলত খিলগাঁও পোস্ট অফিস থেকে পাঠানো হয়েছিল। খিলগাঁও থেকে সেই চিঠি যায় গুলিস্তান জিপিওতে। জিপিও থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে সরকারি ডাক পিয়ন সেটি বিতরণ করেন। ওই চিঠি রেজিস্ট্রি করাও ছিল না। ফলে প্রেরকের বিস্তারিত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে খিলগাঁও পোস্ট অফিস ও আশপাশের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টার দিকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বরাবর উড়ো চিঠি পাঠিয়ে বইমেলায় বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয়। হুমকিদাতা হিসেবে চিঠির নিচে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও জেএমবি সদস্য মাওলানা মো. সাইফুল ইসলাম বলে উল্লেখ করা ছিল। ওই ঘটনায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে সে রাতেই রাজধানীর শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এ হুমকির প্রেক্ষাপটে নড়েচড়ে বসেন গোয়েন্দারা। থানায় জিডি হওয়ার পরপরই বইমেলাজুড়ে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যদিও মেলা প্রাঙ্গণে বইপ্রেমীদের উপস্থিতি আর কোলাহলের কোনো ঘাটতি ছিল না।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে আনসাল আল ইসলামের সদস্যরা। এ হত্যাকাণ্ডের আগে তাকে চিঠি দিয়ে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। খুনের পর দায় স্বীকার করেও বিবৃতি দিয়েছিল আনসার আল ইসলাম। এ ছাড়াও একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকায় জঙ্গিরা ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে। তখন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টার্গেট কিলিং চালায় আনসার আল ইসলামসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। ফলে সদ্য শেষ হওয়া বইমেলায় বোমা হামলার হুমকির এই চিঠির উৎস এবং জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গেই নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে চিঠির ভাষা ও পরিক্রমায় অনেক অসংলগ্নতা রয়েছে বলেও জানা যায়। 

চিঠিতে বলা হয়, ‘রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে দুটি হোটেলে দেহব্যবসা বন্ধে পুলিশ বরাবর আবেদন করা হলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। দেহব্যবসা বন্ধ না করলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলায় বোমা মেরে বইপ্রেমীদের হত্যা করা হবে।’ 

কারণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বইপ্রেমীরা দেহব্যবসার বিরুদ্ধে কিছু লেখেনি।’ 

এমনকি ওই চিঠিতেই বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরেও বোমা হামলা চালানোর কথা বলা হয়।





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close