ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা বৃহস্পতিবার ৮ জুন ২০২৩ ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
ই-পেপার বৃহস্পতিবার ৮ জুন ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin Mohammad City (Online AD).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/728X90.gif
গড়পুকুরে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে অনিয়মের অভিযোগ
তৌহিদ উদ দৌলা রেজা, মেহেরপুর
প্রকাশ: বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩, ৪:২৫ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 169

মেহেরপুরে পৌরসভার অধীনে গড়পুকুরে সৌন্দর্যবর্ধনসহ উন্নয়নকাজ মূল ঠিকাদারকে বাইরে রেখে সাব-লিজের মাধ্যমে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানোয় অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ এসেছে ঢাকা থেকে পৌরসভায় পাঠানো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক তদন্ত প্রতিবেদনে। গত ফেব্রুয়ারিতে তদন্তের প্রেক্ষিতে আইএমইডি গত ১৩ মার্চ প্রতিবেদন পৌরসভায় পাঠায়। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, কাজ সম্পাদনের চুক্তির মেয়াদ ২ বছর অতিবাহিত হলেও ১৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৬১ হাজার ৭৪৮ টাকা ২৮ পয়সা ব্যয়ে গড়পুকুরের ১৭,৬৭৫.৮৮ বর্গমিটার সৌন্দর্য বর্ধন ও ভূমি উন্নয়নকাজের ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। কাজটির মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মেসার্স মাসুমা বেগম। মূল ঠিকাদার কাজ না করে সাব-লিজ দিয়ে রাজশাহীর ঠিকাদার গোলাম সারওয়ারকে দিয়ে কাজ করিয়ে টেন্ডারের বিধি চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। কাজটির কার্যাদেশ প্রদানের তারিখ ২১ মার্চ ২০২১ এবং কাজ সমাপ্তির তারিখ ২০ মার্চ ২০২২। তবে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পেরোলেও শেষ হয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ কাজ। মেহেরপুর পৌরসভার এই প্রকল্পটি ডিজাইন না মেনেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। 

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিপিএ-২০০৬ সেকশন ৩১(৩)-এর নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ক্রয়কার্য সম্পাদন করা হয়েছে। ল্যাব টেস্টে বালু ও ইটের মান নিম্নমানের তা প্রমাণিত। প্রতিবেদনে দায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পৌর প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। এ ছাড়াও প্রকল্প পরিদর্শনের পর প্রকল্পের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পৌর মেয়র জানান, মূল ঠিকাদারের পরিবর্তে রাজশাহীর ঠিকাদার গোলাম সারওয়ার এই প্রকল্পের কাজ করছেন। 

মেহেরপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ডিজাইনে পাইলক্যাপ ধরা নেই। এ জন্য পাইলিংয়ের গ্রেটবিমের অবস্থানগত বিচ্যুতি হয়েছে। অথচ প্রকল্পের ডিজাইন পরীক্ষায় দেখা যায়, এমফিথিয়েটারের ক্ষেত্রে পাইলক্যাপ ধরা আছে, যা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করেনি। পাশাপাশি প্রকল্পের এই অংশের কাজ মেহেরপুর পৌরসভার (ডিপিপি অনুযায়ী) বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত কারিগরি বিভাগ চরমভাবে উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। পাবলিক টয়লেট নির্মাণে যে ইট ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে, সরেজমিনকালে তা যথাযথ মানের বলে মনে হয়নি। ঢালাইয়ের কাজে বালুর এফএম ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫ থাকার কথা, কিন্তু ল্যাবটেস্টে এফএম ১.৬৬ পাওয়া গেছে। ইটের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম ও গরমিল পাওয়া গেছে। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের (সাব-কন্ট্রাক্টর) লেক উন্নয়ন কাজ করার অভিজ্ঞতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ডিপিপির সংস্থান ও ডিজাইন মোতাবেক প্রকল্পের কর্মকাণ্ড দেখভালের দায়িত্ব পৌরসভার প্রকৌশল দফতরের। এ ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। সুতরাং এই ম্যানেজমেন্ট দিয়ে গুণগত মানের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।

এ ছাড়াও পৌরসভার গড়পুকুরের পশ্চিম সীমানায় মাছের আড়ত রয়েছে। এই আড়তটি উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও রহস্যজনকভাবে পৌর কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি তা করেনি। পৌরসভার গড়পুকুরের ৫ ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশেই ব্যক্তিমালিকানা বাড়ির সীমানা প্রাচীর রয়েছে। সীমানা প্রাচীরের পর থেকে পৌরসভার জায়গা হলেও ওই ৫ ফুট জায়গা বাদ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ সঠিক হয়নি। ঢালাই কাজে স্টিল শাটারিংয়ের বদলে বাঁশ ও কাঠের ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে, যা কার্যাদেশের বর্ণিত শর্তের লঙ্ঘন হয়েছে। দ্বিতীয় ঘাটের ঢালাইকাজ যথাযথভাবে না হওয়ায় ঘাটের তলায় ফুটো দেখতে পাওয়া গেছে। এই ঘাটের সর্বশেষ পিলার ৫ ও ৬ দুটি বাঁকাভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এমফিথিয়েটারের পাইলিং এবং এর চারদিকে রিং বিমের ঢালাইসহ প্ল্যাটফর্ম ঢালাই অনেক নিচুতে দেখা গেছে। রিং বিমের ওপর যে গ্রেটবিম ঢালাই করা হয়েছে, সেখানে ব্যাপক অসামঞ্জস্য লক্ষ করা গেছে। রিং বিমের নিচের প্রিকাস্ট পাইল এবং রিং বিমের ওপরের কলামের সেন্টার অসাদৃশ্য। নির্মাণস্থলে মেজারমেন্ট বুক পাওয়া যায়নি। ঘাট ও এমপিথিয়েটারের নির্মাণকাজে বাস্তব অগ্রগতি বিবেচনায় না নিয়ে বাস্তব কাজের অতিরিক্ত অর্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিশোধ করা হয়েছে। 

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেহেরপুর পৌরসভার ২০২০-২১ অর্থবছরে নিরীক্ষ (অডিট) আপত্তি রয়েছে। আপত্তিগুলো হলো, ভ্যাট, আয়কর ও স্যালভেজ ক্রয় ও বিক্রয় সম্পন্ন করা। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে অডিট হয়নি। প্যাকেজটির আওতায় ২০টি সাব-কম্পোনেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৫টির কাজ চলমান রয়েছে। পরিদর্শনের সময় ৭-৮ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। চুক্তির মেয়াদ ইতিমধ্যে প্রায় ১ বছর অতিবাহিত হলেও প্যাকেজটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র প্রায় ১৬ শতাংশ। সাইনবোর্ড স্থাপন বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সাইনবোর্ডটি প্রকল্প স্থানের সম্মুখভাগে স্থাপন না করে মাছের আড়তের পাশে একটি ইলেকট্রিক খাম্বা ও একটি বাঁশ পুঁতে তার সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে। নকশা অনুযায়ী পৌরসভার গড়পুকুরে উত্তর পাশের একটি ঘাটলা নির্মাণের সংস্থান থাকলেও নকশা বহির্ভূতভাবে তা পশ্চিম দিকে নির্মাণ করা হচ্ছে। 

মেহেরপুর পৌরসভার বিরুদ্ধে এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, উন্নয়নের নামে এই প্রকল্পে হরিলুট চলছে। মূল ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে যাদের এই কাজের অভিজ্ঞতা নেই এমন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সাব-লিজ দিয়ে কাজের নামে অকাজ হচ্ছে বেশি। যে গতিতে কাজ চলছে, তা কবে শেষ হবে তা কেউ জানে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। 

মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মেসার্স মাসুমা বেগম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। আর সাব-লিজ নিয়ে কাজ করা রাজশাহীর ঠিকাদার গোলাম সারওয়ারও কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। 

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র মাহাফুজুর রহমান রিটন মঙ্গলবার ফোনে সময়ের আলোকে বলেন, কাজের কোনো সমস্যা নেই। প্রতিপক্ষের লোকজন কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে এসব অভিযোগ করছে।

https://www.shomoyeralo.com/ad/780-90.jpg



https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com