ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা  বুধবার ৩১ মে ২০২৩ ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
ই-পেপার  বুধবার ৩১ মে ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin Mohammad City (Online AD).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/780-90.jpg
সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি নিয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞদের অভিমত
সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ী ফিটনেসহীন যান, অদক্ষ চালক
রফিকুল ইসলাম সবুজ
প্রকাশ: বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩, ৮:১৫ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 151

ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ চলাচল, বাসের বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, সড়কে বিপজ্জনক বাঁক, চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব এবং মাদক সেবন করে যানবাহন চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিটনেসবিহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িগুলো চাঁদার বিনিময়ে অদক্ষ চালক দিয়ে চালানো হয়। এসব অবৈধ গাড়ি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চালক ও হেলপাররা মালিকের কাছ থেকে ট্রিপ অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালায় এবং দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে স্বল্প দূরত্বের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ছোট বাসগুলো হঠাৎ দীর্ঘ দূরত্বের রুটে চলাচল শুরু করার পর দুর্ঘটনা বেড়েছে। বিআরটিএ ও পুলিশের সামনে দিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চললেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। গত রোববার মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে ইমাদ পরিবহনের যে বাস দুর্ঘটনায় ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, সেই বাসটিরও ফিটনেস ছিল না। 

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫ হাজার ২১১ জন। ২০২০ সালে ৫ হাজার ৪৩১ জন এবং ২০২১ সালে ৬ হাজার ২৮৩ জন। আর ২০২২ সালে দেশে দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭১৩ জন নিহত হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৪৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৭ নিহত ও ৭১২ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ১৮৩টি। যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬১ দশমিক ৮০ শতাংশ। 

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালক হচ্ছে চতুর্থ নম্বর কারণ। এক নম্বর কারণ হচ্ছে সড়ক পরিবহনে ব্যবস্থাপনা না থাকা। চালকের হাতে আনফিট গাড়ি ধরিয়ে দেওয়া হয়। গাড়ির ফিটনেস নিশ্চিত করার দায়িত্ব হচ্ছে মালিকের, চালকের নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গাড়ির মালিক চালককে নিয়োগপত্র ও বেতন না দিয়ে ট্রিপ অনুযায়ী চুক্তিতে গাড়ি চালাতে দেয়। তখন চালক বেশি বেশি ট্রিপের জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। তিনি বলেন আমাদের দেশে সড়কের উন্নয়ন হয়েছে এবং গাড়ির গতিও বেড়েছে। কিন্তু স্পিড ক্যামেরাসহ গতি নিয়ন্ত্রণের আধুনিক কোনো ব্যবস্থা নেই। একটি বাসে যদি জিআরএসপি ডিভাইস লাগানো থাকে তা হলে ৮০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর নিয়ম থাকলে ৮১ কিলোমিটার চালালেই বাসটি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ সেখানে সেন্সর লাগানো থাকে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। 

সাইদুর রহমান বলেন, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধ করা যাবে না। একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি করার জন্যই গণপরিবহনে নৈরাজ্য টিকিয়ে রাখে। এ কারণে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। ফিটনেসবিহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িগুলো চাঁদার বিনিময়ে এবং হেলপার ও অদক্ষ চালক দিয়ে চালানো হয়। এ অবৈধ গাড়িগুলোই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেপরোয়াভাবে চলে এবং দুর্ঘটনা ঘটায়। বিআরটিএ ও পুলিশের সামনে দিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এটা একটা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা আছে। তবে সড়ক পরিবহন আইনে বিভিন্ন শ্রেণির মহাসড়কে আলাদা গতিসীমা নির্ধারণ করার কথা বলা থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। গতিসীমা না মেনে গাড়ি চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা বেড়েছে। 

সাইদুর রহমান বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ব^বিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক সময়ের আলোকে বলেন, গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এ নৈরাজ্যের জন্য দায়ী বিআরটিএ। কারণ তারা যে শর্তে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট দিচ্ছে তা মানা হচ্ছে কি না সেটা সঠিকভাবে তদারক করছে না। রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার ক্ষেত্রেও পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। বিজ্ঞানের যুগে অবৈজ্ঞানিকভাবে কাজ করে জনগণের জন্য সমস্যা তৈরি করেও কিন্তু বিআরটিএ বেমানান কাজ করছে। যে আসছে তাকেই রুট পারমিট দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, যারা গণপরিবহনে সেবা দেবে, বিনিয়োগের মতো সেবা দেওয়ার সক্ষমতাও তাদের থাকতে হবে, নিজস্ব ওয়ার্কশপ ও বাস রাখার জায়গা থাকতে হবে, প্রশিক্ষিত চালক থাকতে হবে, তারাই রুট পারমিট পাবে। কিন্তু আমাদের এখানে সেই সক্ষমতা আছে কি না যাচাই না করেই রুট পারমিট দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গণপরিবহনে যে নৈরাজ্য, অব্যবস্থাপনা তার মূল কারণ বিআরটিএর অদক্ষতা ও অপরিপক্বতা। বাসের রুট পারমিট যে দেবে তারই দায়িত্ব হচ্ছে যে যে শর্তে পারমিট দেওয়া হয়েছে তা পূরণ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া। এটা করতে না পারলে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাড়তি বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পৃষ্ঠপোষকতা। গণপরিবহনের উন্নয়নে পরিকল্পনা তৈরি করা আছে কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ নেই। বর্তমানে বাস কোম্পানিগুলো বেশি লাভ করার জন্য চালকদের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়। ফলে চালকরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালান।

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে সময়ের আলোকে বলেন, সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে, একটি বাসের ফিটনেস সনদ দেওয়ার আগে যানবাহনের ওজন, টায়ারের বিট, গতি ও ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে কি না ইত্যাদি বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা। কিন্তু বিআরটিএ অধিকাংশ যানবাহনের পরীক্ষার সনদ দেয় মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটে। এ ছাড়া অনেক গাড়ি না দেখেও ফিটনেস সনদ দেওয়ার অভিযোগ আছে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তাই ফিটনেসবিহীন মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি বন্ধের পাশাপাশি দুর্ঘটনা রোধে সড়ক পরিবহন আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, অদক্ষ চালক ও হেলপার দিয়ে যানবাহন চালানো, বিরামহীন যানবাহন চালানো, মহাসড়কে অটোরিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল এবং ব্যস্ত সড়কে ওভারটেকিং, ওভারলোডিং তদারক না করার কারণেও সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়ছে। 

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, সরকার সড়কে একটি মৃত্যুও চায় না। শেখ হাসিনা সরকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও দুর্ঘটনা রোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়ন ও এর বিধিমালা কার্যকর করেছে সরকার। এ ছাড়া একটি প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য স্পটও ঝুঁকিমুক্ত করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকৌশলগত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং স্থাপন করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় সাইন-সিগন্যাল। এ ছাড়া চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, পাশাপাশি সড়কে চালক, পরিবহন শ্রমিক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


আরও সংবাদ   বিষয়:  সড়ক দুর্ঘটনা  




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com