প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘর ও জমি পেয়েছেন ভূমিহীন ও গৃহহীন ফিরোজা বেগম। প্রধানমন্ত্রী তাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছেন, তাই তার জন্য দুই হাত তুলে দোয়া করেছেন ফিরোজা।
মঙ্গলবার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতাধীন বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর পাড়ে বসে কথা হয় ফিরোজা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার স্বামী কবে মারা গেছেন তা ঠিকমতো বলতে পারেন না। তবে ফিরোজা বলেন, আমি ‘বউ’ (সদ্য বিবাহিত) থাকাকালেই আমার স্বামী মারা যান। আমার একমাত্র ছেলের বয়স তখন এক বছর। এরপর থেকে অনেক কষ্ট করে আমার ছেলেকে বড় করেছি। টাকার অভাবে তাকে স্কুলে দিতে পারিনি।
দিন এনে দিন খেয়েছি। এ সন্ধ্যা নদীতে ভেঙে গেছে আমার সুখের ঘর। সে অনেক আগের কথা। আমার পায়ের তলায় কোনো মাটি ছিল না। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি পায়ের তলায় মাটি হবে। সেই আশা পূরণ করেছেন শেখের বেটি। আল্লাহর পরে শেখের বেটি। তিনি আমাকে ঘর দিয়েছেন, সঙ্গে দিয়েছেন জমি।
ফিরোজা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর অসহায় জীবনযাপন করেছি। কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। নিজে অন্যের জমি ও বাড়িতে কাজ করেছি। ছেলেকে নিয়ে ৩ বেলা খেতেও পারিনি। কিন্তু আজ আমার ছেলে বড় হয়েছে। ছেলে এখন অটো গাড়ি চালায়। কোনোরকম খেয়ে পরে বেঁচে আছি। কিন্তু আমি কোনো জায়গা জমি করতে পারিনি। একটা ঘর করতে পারিনি। এক বাড়িতে দীর্ঘ ২৬ বছর বারান্দায় কাটিয়েছি। কখনো কখনো ভাড়া বাসায় থেকেছি। কেউ কোনো সাহায্য সহযোগিতা করেনি। আমার ছেলের দুটি পুত্র সন্তান। তারাও একটু বড় হয়েছে। আমার এক নাতি অটো চালায়। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঘর ও জমি দিয়েছেন। আমি তার জন্য দুই হাত তুলে মোনাজাত ধরে দোয়া করি, তিনি যেন দীর্ঘজীবী হোন। আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ যেন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার তাকে প্রধানমন্ত্রী বানায়। আমার মতো যারা অসহায়, তারা যেন এমন করে ঘর ও জমি পান।
ঘর ও জমি পেয়েছেন রেখা বেগম। তিনি বলেন, আমার স্বামী নেই। স্বামী হৃদরোগে মারা গেছেন। দুই মেয়ে আমার। জমিও নেই, ঘরও নেই। বড় মেয়ে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। আমার সংসার কোনোভাবেই চলছিল না। ঘর ভাড়া দিয়ে আর থাকতে পারছিলাম না। কোনো উপায় না পেয়ে চলে যাই ঢাকায়। ঢাকার একটি বাসায় রান্নার কাজ করি। যে টাকা পাই তা দিয়ে দুই মেয়ের খরচ চালাই। মেয়েরা আমার শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গেই থাকে। চোখেমুখে অন্ধকার দেখছিলাম। সর্বশেষ অন্ধকার কেটে আলোর মুখ দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাকে তিনি ঘর ও জমি দিয়েছেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দুই হাত তুলে দোয়া করি। তাকে যেন আল্লাহ সুস্থ রাখেন। তিনি যেন আগামী নির্বাচনে আবার বিজয়ী হোন। শেখের বেটি এভাবেই যেন আমার মতো অসহায় মানুষকে ঘর ও জমি দিয়ে যেতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তৃতীয় পর্যায়ের অবশিষ্ট এবং চতুর্থ পর্যায়ের নির্ধারিত উপকারভোগী পরিবারের কাছে জমিসহ গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এরপর সিলেটের গোয়াইনঘাট, গাজীপুরের শ্রীপুর ও বরিশালের বানারীপাড়ায় যুক্ত হবেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে ভূমিহীনমুক্ত হবে ৭টি জেলার ১৫৯টি উপজেলা। মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৯ হাজার ৩৬৫টি পরিবার। বানারীপাড়ায় চতুর্থ পর্যায়ে হস্তান্তর করা হবে মোট ১৪২টি ঘর।
এ প্রসঙ্গে উজিরপুর-বানারীপাড়া আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম বলেন, বানারীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘর ও জমি দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ উপজেলাকে গৃহহীনমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জনগণের কাছে যে ওয়াদা করেছিলেন, দেশে কোনো ভূমিহীন ও গৃহীন থাকবে না, তার বাস্তবায়ন হলো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে এই প্রথম বাংলাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমি ও ঘর দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘর ও জমি দেবেন, তাই গত সোমবার বানারীপাড়ায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। কারণ যারা ছিন্নমূল মানুষ তারা প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার পেয়ে খুশি। বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর পাড়ে এ ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে। এখানে যারা থাকবেন তাদের বেঁচে থাকার জন্য, উপার্জনের জন্য অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। পাশেই সন্ধ্যা নদী। এখান থেকে তারা মাছ ধরতে পারবেন। তারা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন। পাশাপাশি সঙ্গেই সড়ক রয়েছে। তারা অটো, ভ্যান চালানোসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।
বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা আজরিন তন্বী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর ও জমি ছিন্নমূল মানুষকে দেওয়া হয়েছে। তাদের ঘর ও বাড়ি ছিল না। এদের বেশিরভাগেরই বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তারা উদ্বাস্তু ছিলেন। এখানে যাদের ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে তা একটি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। এ জমিগুলো খাস ছিল। এখানে আগে নদী ছিল। এখানে চর ছিল। ফলে এখানে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। আমরা সবদিক বিচার বিবেচনা করে উপকারভোগীদের জন্য জমি ও ঘর দিয়েছি।
স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা মিরা বলেন, বানারীপাড়া নদীভাঙনকবলিত এলাকা। এখানে যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারে ঘর ও জমি পেয়েছেন সবাই নদীভাঙনকবলিত মানুষ। তারা মূলত ছিন্নমূল ছিলেন। তাদের কোনো থাকার জায়গা ও ঘর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ঘর ও জমি দিয়ে ঠিকানা দিয়েছেন। এখানে যারা ঘর ও জমি পেয়েছেন তারা বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন। কারণ পাশেই সন্ধ্যা নদী। মাছ ধরতে পারবেন। পাশে বাজার আছে, সড়ক আছে। তাই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সন্ধ্যা নদী ইলিশ প্রজননের অভয়াশ্রম। ফলে তারা ইলিশ ধরেও জীবনযাপন করতে পারবেন। এখানকার উপকার ভোগীরা সবাই শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেন। তার প্রতি সবাই কৃতজ্ঞ।