ঈদের আগে চতুর্থ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়েছে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার। বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার সবচেয়ে ভালো লাগে একটা মানুষ ঘর পাওয়ার পর তাঁর মুখের হাসি। জাতির পিতা তো দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই চেয়েছিলেন।’
সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশে ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সাড়ে তিন বছর একটা রাষ্ট্রের জন্য কম সময়। তখন তো একটা প্রদেশ ছিল, সেটি দেশে উন্নীত করা ও তার গঠন করা; এটি তিনি করে গেছেন। কিছু বেঈমান-মুনাফেকের জন্য তার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। পিছিয়ে থাকবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জানান, স্বামী-স্ত্রীর যৌথ মালিকানায় দুই শতাংশ জমি দলিল ও নামজারি করে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘর হস্তান্তর করা হচ্ছে। তারা এই জমির পুরোপুরি মালিকানা পাচ্ছেন। তবে শর্তানুসারে তারা জমি হস্তান্তর করতে বা বন্ধক দিতে পারবেন না। ভবিষ্যতে গৃহ সংস্কারের প্রয়োজন হলে মালিকানা হিসেবে তারাই সেটা করবেন।
মুখ্য সচিব জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সাল থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে সারা দেশে উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ জন।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি, তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ২৬ হাজার ২২৯টি এবং চতুর্থ পর্যায়ে বুধবার (২২ মার্চ) ৩৯ হাজার ৬৬৫টি ঘর হস্তান্তর হচ্ছে। এতে করে চিহ্নিত ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি পরিবারের মধ্যে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর সম্পন্ন হচ্ছে। অবশিষ্ট ৪৩ হাজার ৪১০টি পরিবারের মধ্যে ২২ হাজার ১০টি পরিবার চিহ্নিত করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই শতাংশ জমিসহ একক গৃহ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বাকি ২১ হাজার ৪০৪টি পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে ‘দেশের কোনও মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না’ বলে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে।
মুখ্য সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবার প্রতি ৫ জন হিসেবে এ কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প সরাসরি পুনর্বাসন করেছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবার (প্রায় ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৯৮৫ জনকে)। ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের সমধর্মী কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে অবশিষ্ট ২ লাখ ১৬ হাজার ৭০৪টি পরিবার।
ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে সরাসরি ৩টি উপজেলায় উপকারভোগীদের সাথে তিনি মতবিনিময় করবেন। উপজেলাগুলো হলো গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প; সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশাল জেলার বানারিপাড়া উপজেলার বানারিপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে দেশের ২১১টি উপজেলা। এরমধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের ৩২টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের গৌরীপুর, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর, মানিকগঞ্জের সিংগাইর, দৌলতপুরসহ বেশ কিছু উপজেলাও গৃহহীনমুক্ত হবে।
জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার তাদের মাথার উপর ছাদ পায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি গৃহহীন পরিবার ঘর পায়। তৃতীয় পর্যায়ের দুই ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি ঘর গৃহহীনদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ফলে এখন পর্যন্ত ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল উপজেলাসহ সারা দেশের মোট ১৫৯টি উপজেলা।