প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩, ৭:০৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ Count : 357
যুগ যুগ ধরে পৃথিবীব্যাপী মোগল খাবার জয় করে চলেছে ভোজনরসিকদের মন। মোগল সাম্রাজ্য শেষ হওয়ার পর এখনও মোগল নবাবদের শানদার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হচ্ছে খাবার। মোগল খাবারকে এই অঞ্চলের খাবার বলে পরিচিত করা হলেও ইতিহাস কিন্তু বলে একদমই অন্য কথা। মোগল খাবারের উৎস আসলে পারস্য বা ইরান। মূলত মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর দিল্লি সালতানাত প্রতিষ্ঠার পরও ভুলতে পারেননি তার পিতৃপুরুষের ভূমি সমরখন্দকে, তাই উজবেক ও ইন্দো-পার্সিয়ান খাবার রান্নার ধরনের স্পষ্ট ছাপ পাওয়া যায় মোগল খাবারে।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারে মোগল মোগলভাব আছে এখনও। মূলত মোগলদের হাত ধরেই ঢাকার খাবারে যুক্ত হয়েছে এসব আইটেম। রমজানে রোজাদারদের তৃষ্ণা মেটাতে তাই ইফতারের আইটেম হিসেবে কদর রয়েছে ঢাকার কিছু মোগলাই শরবতের। রয়েলের পেস্তাবাদামের শরবত, বিউটির লাচ্ছি, নূরানির লাচ্ছি, শাহীর জুস ও আল রাজ্জাকের মাঠা অন্যতম। দেশজুড়ে এক নামে পরিচিত এসব ঠান্ডাপানীয় সারা বছর সমানতালে বিক্রি হলেও এবার রোজা ও গরম একসঙ্গে হওয়ায় দ্বিগুণ কদর বেড়েছে এসব পানীয়ের।
ভোজনরসিক মাত্রই জানেন পুরান ঢাকার রয়েল হোটেলের নাম। রয়েলের বিখ্যাত হচ্ছে পেস্তাবাদামের শরবত। জনশ্রুতি আছে, এই শরবত একবার যে মুখে দেন, বারবার তিনি ফিরে আসেন রয়েলেই। পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লার পাশেই প্রায় দুই দশক ধরে মুগলীয় কায়দায় ‘পেস্তাবাদামের শরবত’ তৈরি করে আসছে রয়েল হোটেল। বিখ্যাত এই পেস্তাবাদামের শরবতের জন্য ভিড় লেগেই থাকে। বিশেষ করে রমজানের দিন হলে তো কথাই নেই। রয়েলের পেস্তাবাদামের শরবতের জনপ্রিয়তা নিয়ে হোটেলটির ব্যবস্থাপক আবদুল মালেক সময়ের আলোকে বলেন, মোগলরা পেস্তাবাদামের শরবতকে অতিথি আপ্যায়নে পরিবেশন করত। আমাদের শরবত ইফতারে সেই মোগলীয় স্বাদ এনে দেয়।
১৯২২ সাল থেকে পুরান ঢাকার মানুষকে ভিন্ন রকম লেবুর শরবত, লাচ্ছি আর ফালুদা খাওয়াচ্ছে ‘বিউটি লাচ্ছি ফালুদা’। এখানে শরবত-লাচ্ছি-ফালুদা সব হাতে বানানো হয়। রায় সাহেব বাজার মোড় থেকে একটু সামনে হাঁটলেই ছোট একটি দোকান এটি। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল গাফফার নিজেই হাতে বানিয়ে লেবুর শরবত আর লাচ্ছি দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। আবদুল গাফফার মারা যাওয়ার পর এখন দোকানের মালিক তার ছেলে মো. জাবেদ হোসেন। লালবাগ শাহী মসজিদের সামনে অবস্থিত শাহি জুস কর্নারে মিলবে জলপাই, জাম, লেবু, গাজর, কাঁচা-পাকা আম, কলা, বেদানা, গাজর, আনারস, পেঁপে, আপেল ও তরমুজসহ ২২ পদের ফলের শরবত।
রোজায় পুরান ঢাকার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী হোটেল আল রাজ্জাক তাদের মাঠা ও ফলের জুস অনেকের পছন্দের। আল রাজ্জাকের ব্যবস্থাপক জানান, মাঠা, বোরহানির পাশাপাশি ফলের জুসও তাদের ক্রেতাদের চাহিদায় থাকে। ১৯৯৩ সাল থেকে তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ হোসেন মোল্লার হাতে হোটেল আল রাজ্জাকের প্রচলন হয়। এরপর দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে পুরান ঢাকার বিভিন্ন আইটেম দিয়ে পুরো রোজার মাস ইফতারির পসরা এখানে বসে। পুরান ঢাকার অন্যতম জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর বর্তমান মালিক হোসেন মোল্লার স্ত্রী দুলালী হোসেন।
মোগল সম্রাট হুমায়ুনের শরবতের শখের জন্যই মোগল খাবারের সঙ্গে ফলের রস ও তা ঠান্ডা করতে বরফের ব্যবহার শুরু হয়। এ ধারা অব্যাহত থাকে পরও।