বিদেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার মামলায় পলাতক ওসমান গণি (৩০) নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। মঙ্গলবার (২৩ মে) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার গোয়ালদী এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এই ব্যক্তি তরিকুল ইসলাম ওরফে আলামিন নামেও পরিচিত। তরিকুল ইসলাম নামে ভুয়া পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করে সে এই অপকর্ম চালিয়ে যেতো বলে জানা যায়।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেফতার ওসমান গণির নাম র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে তরিকুল ইসলাম ওরফে আল-আমিন (৩০)। সে সোনারগাঁ উপজেলার গোয়ালদী চর এলাকার মো. আব্দুল জলিলের ছেলে। ওসমান গণি অপরাধের পর সাজা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন সময় নাম বদলে থাকে।
র্যাব জানায়, নিরীহ মানুষকে বিদেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা আত্মসাৎ করা ও দেশের বাহিরে বিক্রয় করা তার পেশা। গ্রেফতার আসামি ও তার সহযোগীরা বিদেশে তথা মালয়েশিয়াতে চাকরির উদ্দেশ্যে লোক পাঠাতে পারে ও মোটা অংকের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে এমন প্ররোচনা দিয়ে মানুষকে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। এভাবে নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে অগ্রিম মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসামীরা আত্মগোপনে গিয়ে পলাতক থাকে। এরপর নিরীহরা আসামীদের প্রতারণার ফাঁদে পরে বিদেশ যাওয়ার লোভে জায়গাজমি, ঘর-বাড়ী বিক্রয় করে সর্ব শান্ত হয়ে যায়।
র্যাব-১১ সিনিয়র এএসপি (মিডিয়া অফিসার) মো. রিজওয়ান সাঈদ জিকু সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রেফতার আসামি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য। সে নিরীহ মানুষদের বিদেশ নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা আত্মসাৎ করে ও দেশের বাইরে বিক্রি করে। সে বরিশালের ধুড়িয়াইল গ্রামের জনৈক বাদী মো. নয়ন সরদারকে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কাপড়ের দোকানে নিয়মিত এসে তাকে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে মোটা অংকের বেতনের চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে বলে প্রলুব্ধ করে। পরবর্তীতে আসামী ও বাদীর মধ্যে বিদেশে যাওয়ার খরচ বাবদ ৪ লক্ষ টাকার একটি চুক্তি পত্র করা। চুক্তি অনুযায়ী বাদী তিন ধাপে মোট ৩ লাখ টাকা পাচারকারী চক্রের সদস্যের একাউন্টে পাঠায়। পরে ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর বাদী সহ ৫/৭ জনকে মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে বিমান যোগে নেপালের কাঠমুন্ডুতে পাঠিয়ে দেয় এবং বাদীকে সেখানে জিম্মি করে আরও ১ লাখ টাকা দিলে তাকে মালয়েশিয়া পাঠাবে বলে কথা দেয়। কিন্তু তাদের কথা অনুযায়ী ১ লাখ টাকা দেওয়ার পরও তাকে মালয়েশিয়া না পাঠিয়ে নেপালের কিছু দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রায় ২৫ দিন সেখানে মানবেতর জীবন কাটিয়ে নেপালে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তায় দেশে ফিরে আসে। পরবর্তীতে বাদী দেশে এসে আসামিদের বিরুদ্ধে বরিশাল গৌরনদী মডেল থানায় ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৬/৭/৮/৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে।
র্যাব জানায়, আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গণিকে মঙ্গলবার সোনারগাঁও উপজেলার চর গোয়ালদী এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বরিশাল গৌরনদী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে মালয়েশিয়া প্রবাসী এক বাংলাদেশির অভিযোগের জেরে ওসমান গণির বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, ওসমান গণি ওরফে মো. তরিকুল ইসলাম বিভিন্ন প্রবাসী ভাইদের ওয়ার্ক পারমিট, ভিসা, পাসপোর্ট ইত্যাদি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে হাজার হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিত নেয়। তবে তার সব তথ্য (নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা, ব্যক্তিগত নম্বর, জন্ম তারিখ ইত্যাদি) মিথ্যা হওয়ায় দীর্ঘদিন তাকে গ্রেফতার করা বা আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের জেরে ২০২২ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে পাসপোর্ট, মালয়েশিয়ায় তার ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং সেখানকার পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিশিপ কার্ড পাওয়া যায়।
তার কাছে পাওয়া পাসপোর্টের তথ্য স্থানীয়ভাবে যাচাই-বাছাই শেষে জানা যায়, পাসপোর্টে উল্লেখিত আসামির নাম, বাবার নাম, মায়েন নাম এমনকি পাসপোর্টে উল্লেখিত জন্ম তারিখ এবং জন্ম নিবন্ধন নম্বর সবই মিথ্যা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসামির প্রকৃত নাম ওসমান গনি ডালিম। সে সম্পূর্ণ মিথ্য তথ্য দিয়ে এ পর্যন্ত মোট ৫টি পাসপোর্ট তৈরি করেছে। সর্বশেষ পাসপোর্টটি সে গত ০৯ মার্চ ২০২১ তারিখে পাসপোর্ট ও ভিসা উইং, বাংলাদেশ হাই কমিশন, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া হতে গ্রহণ করে। ওই পাসপোর্টে তার জন্ম নিবন্ধন নম্বর দেয়া থাকলেও বাস্তবে ঐ জন্ম নিবন্ধন নম্বরের বিপরীতে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
জিজ্ঞাসাবাদের পর র্যাব জানায়, মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় মালয়েশিয়ান সরকার দেশটিতে তার অবস্থান নিষিদ্ধ করে ও তার পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়। তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য মালয়েশিয়ার সরকার তাকে খুঁজতে থাকে। আসামি বিষয়টি বুঝতে পেরে সম্পূর্ণ নতুন নাম পরিচয় দিয়ে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে। পরবর্তীতে সে এই তথ্যের ভিত্তিতে মালয়েশিয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং স্থায়ী রেসিডেন্সশিপ কার্ড ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এইভাবে সে প্রায় দুই যুগ অবাধে মালয়েশিয়া অবস্থান ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম করে আসছিল।