সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে আর ২ দিন বাকি। কিন্তু কাজ বাকি আছে প্রায় ৯০ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে বৃদ্ধি পাবে ব্যায় বৃদ্ধি পেলে কাজ শেষ হবে না।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূলত নকশার ভুলের কারনে কাজের অগ্রগতি হয়নি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নকশা জমা দেয়া হবে। ফলে বর্ধিত মেয়াদেও কাজের অগ্রগতি হবে না বললেই চলে। যদিও চলতি বছরের জুনের মধ্যে ২৫ শতাংশ কাজ শেষ করা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নকশা চুড়ান্ত করা ছাড়াই বেশি কিছু কাজ করা হচ্ছে, যা ঝুকিপূর্ন।
অপরদিকে, মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে বেবিচকের কাছে থেকে চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি)।
তারা বলেছে, প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ি, একতরফাভাবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো বা কোনো শর্ত পরিবর্তনের অধিকার কোনো পক্ষের নেই। এটা বেআইনি এবং অবৈধ। এটা বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া, নকশার ভুলের কারনে প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতিপুরনের বিষয়টি সম্পূর্ন উপেক্ষা করা হয়েছে। ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত নথিও দেয়া হয়নি। এগুলোসহ কয়েটি বিষয়ে বেবিচকের কাছে জবাব চেয়েছে তারা।
জানা গেছে, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে ২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। বাকি টাকা দেওয়া হবে বেবিচকের নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর সরকার অনুমোদন দেয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মেয়াদ ধরা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি)। দুই দফা বাড়িয়ে এর মেয়াদ ধরা হয় ২৭শে মে ২০২৩। নতুন প্রকল্পের আওতায় এখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুয়েলিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকমানের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পৃথক সাব-স্টেশন স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, যাত্রীদের জন্য এক্সকেলেটরসহ আরও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ রযেছে। কিন্তু ধীর গতিতে কাজ হওযায় গত ২ বছরে প্রকল্পের আওতায় প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনসহ ল্যান্ডসাইড এলাকায় শুধু মাটি খননের কিছু কাজ শেষ হয়েছে। আর বালি ভরাটের কাজ চলছে কার্গো টার্মিনাল ভবনের। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নকশার ভুলের কারনে প্রকল্পের অগ্রগতি একেবারে তলানীতে। এর পেছনে ‘অযোগ্য’ ব্যাক্তিকে প্রকল্প পরিচলক করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ন। এটি নিয়ে গত বছরের শেষে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটি জানায়, মূলত প্রকল্পের পিডির অনভিজ্ঞতা আর অনিহার জন্য পুরো প্রকল্পটি স্থবির হয়ে আছে।
এদিকে, এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিমান প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দেন পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
চিঠিতে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জরুরি কাজগুলো দ্রুত শেষ করা এবং এই প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে ‘বিশেষ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ’ গ্রহনের জন্য বলেন তিনি। গত মাসের ১৮ তারিখে ওসমানি বিমানবন্দর পরিদর্শন করে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
সম্প্রতি প্রকল্পটির অগ্রগতি বিষয়ক এক সভায় প্রধান প্রকৌশলী জানান, সংশোধিত মাস্টার প্ল্যানের উপর ভিত্তি করে সংশোধিত নকশা তৈরি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি এবং মূল ডিজাইনারকে সেই অনুযায়ী নকশা প্রস্তুত করতে হবে। খসড়া নকশা সেপ্টেম্বরে এবং চুড়ান্ত নকশা চলতি বছরের ডিসেম্বরে জমা দেয়ার কথা জানিয়েছে মুল ডিজাইনার।
সভায় বলা হয়, এটি সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং ত্রুটিপূর্ণ নকশার কারণে এই প্রকল্পটি দীর্ঘকাল ধরে বিলম্বিত হয়েছে।
সভায় প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলি প্রকল্পের অগ্রগতির লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে এবং দ্রুততম সময়ে সংশোধিত নকশার কাজ শেষ করার তাদিগ দেন। পাশাপাশি আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভালো কাজের অগ্রগতি দেখানোর জন্য ঠিকাদারকে অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, কাজ করতে যেয়ে নকশা ত্রুটি ধরা পড়ে, তা ঠিক করা হচ্ছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকল্পের সময় এবং ব্যয় বাড়বে।