ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আমাদের তারুণ্য এবং দেশপ্রেম
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩, ২:৫৭ এএম  (ভিজিট : ২৫১)
 ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি...।’ 

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের এ গানটির চমৎকার বাণী এবং ভালো লাগার পঙক্তিমালার মধ্যে লুকিয়ে আছে দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং অপার আনুগত্য। এ হলো সব বাঙালির হৃদয় নিংড়ানো সুর, যাবতীয় চেতনায় আলো ছড়ানোর মন্ত্র। এ দেশের প্রতিটি মানুষ এ চেতনা সঙ্গে নিয়ে বড় হয়েছে। এ এক পরম আনন্দ, এ আনন্দ ছড়িয়ে দিতে হয় আকাশে-বাতাসে। এ বাণী উচ্চারণের এবং এর ভেতর লুকিয়ে থাকা আনন্দ ধারণ করার মানসিকতা কখনো জন্মসূত্রে প্রাপ্ত হয় আবার কখনো তা জাগিয়ে তুলতে হয়। এটি শিশুকাল থেকেই মানুষের মনের মণিকোঠায় জাগিয়ে তুলতে হবে এবং এটি শুরু করতে হবে পরিবার থেকে। 

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের হাত দিয়েই সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গড়ে উঠবে। শিশুদের শুধু শপথবাক্য পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর তাৎপর্য ও আবেদন তাদের অন্তরে গেঁথে দিতে হবে। দেশের প্রতি দায়িত্ব ও ভালোবাসা যেন তাদের মন থেকে উঠে আসে। তা হলেই ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে খালি পায়ে প্রভাতফেরিতে যাওয়া শিশুটি বড় হয়ে আর কখনোই জুতা পায়ে দিয়ে শহিদ মিনারে উঠবে না। ছোটখাটো ইস্যুতে রাস্তায় গাড়ি ভাঙবে না। মাদক বা ধর্ষণ নামক সামাজিক ব্যাধিতে নিজেকে কলুষিত করবে না।

শিশুকে গড়ে তোলার জন্য পরিবারের চেয়ে বড় কোনো ক্যানভাস নেই। এ জন্যই পরিবারকে বলা হয় ‘মানবিক গুণাবলি অর্জনের প্রথম শিক্ষাগার’। এখানেই শুরু হয় প্রকৃত শিক্ষা, এখান থেকেই সন্তানের জীবনে নৈতিকতা ও আদর্শের বীজ বপন করতে হবে, জাগ্রত করতে হবে দেশপ্রেম। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এ দেশ। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাণ্ডারি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দ্বারা এটি এখন বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, সগৌরবে উপস্থাপন করতে পারছে নিজের সুদৃঢ় মতামত। 

এখন লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখানোর। একটি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও সক্ষমতা অর্জন করতে হয়। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন সুনাগরিক। একটি দেশকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে দরকার বিপুলসংখ্যক তারুণ্যদীপ্ত এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সুনাগরিক। তাদের মধ্যে থাকতে হবে অপার দেশপ্রেম এবং দেশরক্ষায় লড়াকু মনোভাব।

 শৈশব কিংবা কৈশোরকাল, যা সবসময়ই আমাদের সমাজে একটি সংকটের নাম। একসময় যে শৈশব এবং কৈশোর নিয়ে প্রচুর সাহিত্য চর্চা হতো, নানাভাবে, নানা দৃষ্টিকোণ থেকে যে শৈশব এবং কৈশোরকে সমৃদ্ধ দেখা হতো এখন তা কখনো কখনো আতঙ্কের নামে পরিণত হচ্ছে।
বিশ্ব  যখন এগিয়ে যাচ্ছে প্রগতির পথে তখন আমাদের ভাবনার জগতে কালো মেঘের মতো বিরাজ করছে এক ভয়ংকর আতঙ্কের নাম ‘কিশোর গ্যাং’, যা পত্রিকার পাতা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গলির মোড় থেকে চায়ের দোকান, গণপরিবহন থেকে টকশো সব জায়গায় ‘কিশোর গ্যাং’ বা ‘গ্যাং কালচার’ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে রীতিমতো দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কের মধ্যে। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।

আমাদের সমাজব্যবস্থায় আছে নানা বৈষম্য। একই সমাজে দরিদ্র ও ধনী পরিবার বসবাস করে। একই সঙ্গে পড়াশোনা করে ধনী ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা। অনেক সময় উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জীবনযাত্রা মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের কিশোরদের প্রভাবিত করে। তারা নিজেদের জীবন নিয়ে হতাশা অনুভব করে। তারা জীবন বদলের স্বপ্ন দেখতেই পারে। কখনো কখনো এই স্বপ্ন হয় নেতিবাচক। এটিকে ইতিবাচক করে দিতে পারলে খুব ভালো হয়। জীবন বদলের স্বপ্নের ধারাটি একটু বদলে দিতে পারলেই অনেক কিছু বদলে যেতে পারে। জীবন হতে পারে সুবাসিত ও কুসুমিত।

প্রতিটি শিশুর মধ্যে ঘুমিয়ে আছে একজন আদর্শ নাগরিক এবং এ শিশুই একদিন দেশের কাণ্ডারি হবে, তবে সে জন্য শিশুকাল থেকেই তার ব্যক্তিত্ব গঠন করতে হবে। তার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে এবং তাকে আত্মবিশ্ব াসী করে গড়ে তুলতে হবে। 

তাদের বোঝাতে হবে, পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ দেশপ্রেমেরই অংশ। তাদের শেখাতে হবে শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করতে হবে, সর্বদা সত্য কথা বলার মানসিকতা থাকতে হবে। নৈতিকতার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই আয়ত্ত করতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অনেক ধর্মের মানুষের বসবাস, তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুকে পরধর্ম ও পরমতসহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে হবে। পরিবারে যদি ভালোবাসা থাকে তা হলে শিশুরা ভালোবাসতে শেখে।

তাকে জানাতে হবে প্রিয় মাতৃভূমি ও জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের প্রকৃত ইতিহাস। জানতে হবে, কীভাবে একজন মহান মানুষ তাঁর জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন, বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য। এ দেশের সোনার মানুষদের নিয়ে তিনি সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। 

শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমতা ছিল অপরিসীম। তাই তাঁর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে এ দিনটি পালন করা হয়। এ দিনটি যেমন আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করা হয়, তেমনি আমাদের ভালোবাসার বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার শপথ নিতে হবে।

প্রশ্ন আসতে পারে, দেশপ্রেম কী? সক্রেটিসের ভাষায় খুবই সহজ উত্তর হলো, ‘নিজের কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’ নিজের কাজটি ভালোভাবে করাই যদি দেশপ্রেম হয়, তা হলে আমরা শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগাতে পারি খুব সহজেই, শিশুকে তার কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারি, শেখাতে পারি নিজের কাজ নিজে করার উপায়। আর এভাবে বেড়ে ওঠা শিশুর কাজই হলো জ্ঞান অর্জন করা, সেটা যেন সে ভালোভাবে করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর সঙ্গে তাকে সততা ও পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দিতে হবে। তার চিন্তায় নিয়ে আসতে হবে সারা দেশ এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা। এ জন্য বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে প্রকাশিত গ্রন্থগুলো নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তাদের জানাতে হবে এবং জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশকে সমৃদ্ধি ও সাফল্যের পথে এগিয়ে নেওয়ার আদর্শে দীক্ষিত হতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর লেখা ১১টি প্রকাশনা পড়লে জাতির পিতা সম্পর্কে যেমন জানতে পারবে, তেমনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে ইতিহাসকে জানতে পারবে। ১১টি বইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর’ বইটির সম্পাদনা করেছেন। এটি একটি অসাধারণ গ্রন্থ, যা মানুষের মননে ও চেতনে গভীর স্থান করে নিতে পারে।

সর্বোপরি পরিবারের বড়দের তথা বাবা-মাকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে, জানতে হবে জাতির পিতার আদর্শ এবং এ বিষয়ে শিশুদের সঙ্গে আলোচনাও করতে হবে।

নিজেদের কাজ ও আদর্শ দ্বারা শিশুদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং উন্নত চিন্তায় প্রভাবিত করতে হবে। তা হলেই শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। তারা নিজেরা এগিয়ে যাবে নতুন সূর্যের পথে আবার অন্যদেরও নিয়ে যাবে।

জীবনের সব পর্যায়ে এর চর্চা যেন অব্যাহত থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। জাতীয় দিবসগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের ত্যাগের মহিমাও তাদের মননে-মগজেও ধারণ করাতে হবে। ধারণ করাতে হবে ভাষা আন্দোলনের আদর্শকেও।
তা ছাড়াও শিশু-কিশোরদের উন্নত কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। তাদের উন্নয়নশীল কাজেও নিয়োজিত করতে হবে। তা হলে আমরা একটি সুন্দর ও দুর্নীতিমুক্ত দেশের অধিবাসী হিসেবে গর্বিত হতে পারব। 

বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে উপস্থাপন করতে হবে শিশুদের মাধ্যমেই। এ জন্য দেশপ্রেমহীনতার সংস্কৃতি থেকে উদ্ধার করতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শৈশব থেকেই নতুন প্রজন্মের মধ্যে সৎ গুণাবলির উন্মেষ ঘটাতে হবে, যাতে তারা দেশ ও মানুষকে ভালোবাসতে শেখে। বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

শিশুদের জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তাদের মধ্যে দেশপ্রেমের বীজ বপন এবং তা চর্চা করতে হবে পরিবার থেকে। আমরা জানি পরিবারই পারে একজন মহান মানুষ গড়তে, একজন দেশপ্রেমিক উপহার দিতে। এভাবেই একসময় বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নেবে মুজিব আদর্শের সৈনিক। বাংলাদেশ ভরে উঠবে সোনার সন্তানে। 

বিশ্ব জানবে বাংলাদেশের মাটিতে শুধু সোনার ফসল ফলে না, মুজিব আদর্শের সোনার মানুষও গড়ে ওঠে।

কথাসাহিত্যিক
 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close