ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে ৭০ লাখ লিটার তেল কিনছে সরকার। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিকটন চিনি এবং মরক্কো ও কানাডা থেকে ৮০ হাজার মেট্রিকটন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির সভায় এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
তিনি বলেন, ক্রয় কমিটির সভায় মোট ১১টি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৩টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৩টি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব রয়েছে। এসব প্রস্তাবের মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৫২ কোটি ২৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
সাঈদ মাহবুব খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি থেকে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ১২৯ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৪০ টাকা।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান থেকে উন্মুক্ত ক্রয় পদ্ধতিতে ৭০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১২৭ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৮২ টাকা ৬৫ পয়সা।
সাঈদ মাহবুব খান জানান, জরুরি প্রয়োজনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রতি কেজি চিনির দাম পড়বে ১০৫ টাকা।
এদিকে মরক্কো ও কানাডা থেকে ৮০ হাজার মেট্রিকটন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৩৪৬ কোটি ৭১ লাখ ৯৩ হাজার ২০০ টাকা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কোর একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিকটন টিএসপি সার কেনা হবে। এতে খরচ হবে ১২০ কোটি ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ টাকা।
আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে কানাডার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পঞ্চম লটে ৫০ হাজার মেট্রিকটন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২২৬ কোটি ৬৮ লাখ ১৪ হাজার টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা কর্তৃক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন’ প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, রাস্তা এবং ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণে ৫১১ কোটি ৪৬ লাখ ১৬ হাজার ৩০৮ টাকা ব্যয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সাঈদ মাহমুদ খান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথ উদ্যোগে কোরিয়ার চিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, ইয়োশিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, ইয়োশিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্টস লিমিটেডকে ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, এ প্রকল্পের আওতায় মিরসরাই-২-এ অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় ১০ দশমিক ৭০ কিলেমিটার রাস্তা এবং ১৬ দশমিক ৫৫৭ কিলোমিটার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণকাজ যৌথ উদ্যোগে চীনের সিসিইসিসি এবং সিআরসিসির কাছ থেকে ২৩৭ কোটি ৯৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৮ টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় মিরসরাই-২ বি অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় ১২ দশমিক ৮৬১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণকাজ ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাছ থেকে ২১৯ কোটি ৯৩ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৫ টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের জন্য ১২ কোটি ৮৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকায় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের জন্য ৯ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে।