ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা  বুধবার ৩১ মে ২০২৩ ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
ই-পেপার  বুধবার ৩১ মে ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin Mohammad City (Online AD).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/780-90.jpg
ডলার সংকটে পরিশোধ করা যাচ্ছে না জ্বালানির মূল্য: সাশ্রয়েই সমাধান
রফিক রাফি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩, ৪:৪২ এএম আপডেট: ২৫.০৫.২০২৩ ৬:১৩ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 825

জ্বালানি খাতে ডলার সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে না পারায় সরবরাহ কমেছে। জ্বালানি সংকটে বন্ধ রয়েছে অসংখ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে বিপর্যয়ে পতিত হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। চাহিদানুয়ায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদিত না হওয়ায় দেশজুড়ে বেড়েছে লোডশেডিং।

মূলত ডলার সংকটের কারণে তেল, গ্যাস (এলএনজি) এবং কয়লা আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিল বকেয়া থাকায় তেল, গ্যাস এবং কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে একাধিক বিদেশি কোম্পানি।

সংকট সামাল দিতে জ্বালানি খাতে সাশ্রয়ের বিকল্প নেই বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানি তেল বাবদ ৩০ কোটি ডলার পাবে ৬টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় চুক্তি অনুযায়ী শিডিউলে থাকা তেল সরবরাহ করতে রাজি হচ্ছে না তারা। ইতিমধ্যে তেল সরবরাহের একটি চালান বাতিল করেছে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। চলতি মাসে ভিটলের ৩০ হাজার টন ডিজেল সরবরাহের কথা ছিল। বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে না বলে চিঠি দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বুমি সিয়াক জাপিন (বিএসপি) ও ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনসহ (আইসিএল) অন্যান্য তেল সরবরাহকারী কোম্পানি।

বিপিসির কাছে ভিটলের বকেয়া পাওনা ১০০ দশমিক শূন্য ৪ মিলিয়ন ডলার। প্রতি ডলার ১০৬ টাকা হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ হাজার ৬০ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বকেয়া না পেয়ে আগামী জুনে তিনটি কার্গো চালানে ৯০ হাজার টন ডিজেল ও আরেকটি কার্গো চালানে ২৫ হাজার টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে তারা।

জানা গেছে, বিপিডিপির কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর (আইপিপি) সাত মাসের বিল বকেয়া পড়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিল বকেয়া থাকায় জ্বালানি তেল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারি খাতের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকেরা। ফলে জ্বালানি তেল সংকটে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রে আংশিক উৎপাদন হয়। এ ছাড়া সরকার ভর্তুকির অর্থ নিয়মিত ছাড় না করায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি। গ্যাস সংকটেও বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়। তবে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এসব কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ কাটা যাবে না। বসে থাকা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দিতে হবে মাসে ৭ কোটি ডলার। উপরন্তু বকেয়া বিলের ওপর বাড়তি সুদ দাবি করেছে তারা।

অন্যদিকে কয়লা সংকটে একাধিকবার বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি চালু হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছয় মাসের বিল বকেয়া ২৯৮ মিলিয়ন (২৯ কোটি ৮০ লাখ) মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা ধরে)। কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি চিঠি দিয়ে বলেছে, টাকা না দিলে কয়লা সরবরাহ করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে চলতি মাসেই ফুরোবে কয়লার মজুদ। আগামী মাসের শুরুতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পায়রার উৎপাদন, যা বিদ্যুৎ খাতের জন্য চরম আঘাত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ যোগান দেয় এই সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র।

জানা গেছে, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) ডলারের সংকটের কারণে তাদের পাওনাদারদের নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ করতে পারছে না। বকেয়া রয়েছে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির উৎপাদিত গ্যাসের মূল্য। এ ছাড়া এলএনজি বিল পরিশোধ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, এলএনজি আমদানি করেও ডলার সংকটে বিল না দেওয়ায় কাতার গ্যাসকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৫১ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার বা ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। এ ছাড়া কাতার গ্যাসের ৩ কোটি ৫৯ লাখ ২৬ হাজার ৬১৮ টাকার আরও একটি বিল এখনও বকেয়া রয়েছে। এ বিল পরিশোধ করতেও পেট্রোবাংলাকে জরিমানা গুনতে হবে। এ ছাড়া মার্কিন কোম্পানি শেভরনকে বিল দিতে দেরি হওয়ায় জরিমানা দাবি করেছে সংস্থাটি। আরেক বহুজাতিক কোম্পানি তাল্লো বাংলাদেশ থেকে গ্যাস ও কনডেনসেট কেনার বিপরীতে দুটি বিল এবং সামিটের এফএসআরইউর (ভাসমান টার্মিনাল) ব্যয়ের বিপরীতে একটি বিল যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারেনি পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পেট্রোবাংলার হিসাবে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ রয়েছে বিল পরিশোধের জন্য। তবে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।
জ্বালানি খাতের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম. তামিম সময়ের আলোকে বলেন, কিছুই করার নেই। ডলার সংকট না কাটলে আমরা বিপদে পড়ব। অনেকেই এলসি খুলতে পারছে না। তিনি বলেন, করণীয় হচ্ছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও তেলের ব্যবহার কমাতে হবে। লোডশেডিং হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, দেশের ডলার সংকটের জন্য জ্বালানি খাত ভালোভাবে দোষী। কারণ প্রত্যেকটি পাওয়ার প্লান্টই একেকটি ঋণ। আমরা ঋণটাকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিচ্ছি ডলারে। ডলারের ওপর চাপ পড়ার একটি বড় অংশ এসেছে জ্বালানি খাত থেকে। তিনি বলেন, আমরা যে বড় বড় প্রকল্পগুলো করেছি, সেগুলো থেকে যেই পরিমাণ রিটার্ন ডলারে আসার কথা তা না আসায় সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটা খারাপ শোনাবে কিন্তু আপাতত জ্বালানি খাতকে সংকুচিত করা দরকার। এখন তো লোডশেডিং হচ্ছেই। জ্বালানি খাত আমরা অনেক দ্রুত উন্নয়ন করেছি, এটা কম বয়সি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার মতো। তাকে এমন একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যা সে নিতে পারবে না।

শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তখনই বলেছি এটা আমাদের গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যাবে কিন্তু তারা শোনেনি। আমাদের আবাসিক চাহিদা বেশি, গ্রামেও অনেকে এসি লাগাচ্ছে। এটার দরকার ছিল না। ব্যবসায়ীরা বলছে, বিদ্যুতের দাম নির্বাচনের পর ইউনিট প্রতি ২০ টাকা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ডলার যাতে কম খরচ হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করতে হবে। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বাড়াতেই হবে। গ্যাস পেলেই ডলার বাঁচবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দিতে হবে। এতে তেল কেনার ডলার বাঁচবে। মূলত জ্বালানি খাতে ডলার সাশ্রয়ী সব রকমের পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, ডলার সরবরাহ যেন স্বাভাবিক থাকে আমরা নানা পর্যায়ে সেই চেষ্টা করছি। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার সংকটে তিনি বলেন, বকেয়ার অংশ বিশেষ পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তারা যেন কয়লা সরবরাহ অব্যাহত রাখে সেটা, সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। মাঝখানে অল্প কয়েক দিনের গ্যাপ থাকতে পারে। পায়রা বন্ধ থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টা হচ্ছে বন্ধ না করে অল্প পরিমাণ উৎপাদন করে কেন্দ্রটি সচল রাখা।


আরও সংবাদ   বিষয়:  ডলার সংকট  




https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com