ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা  বুধবার ৩১ মে ২০২৩ ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
ই-পেপার  বুধবার ৩১ মে ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin Mohammad City (Online AD).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/780-90.jpg
গার্মেন্টসের ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের প্রথম সভা
মালিক-শ্রমিক পক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে প্রস্তাব
এসএম আলমগীর
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩, ৭:০২ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 121

দেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয়ের জন্য গঠিত নতুন মজুরি বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল বুধবার। এ দিন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বোর্ডের ছয় সদস্যের সবাই উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম সভায় উপস্থিত থাকা সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, মজুরি বোর্ডের প্রথম সভাতেই বোর্ড চেয়ারম্যান মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের কাছেই মজুরি প্রস্তাবনা চেয়েছেন। মালিক পক্ষ ন্যূনতম মজুরি কত প্রস্তাব করে এবং শ্রমিক পক্ষ কত প্রস্তাব করে সেটি বোর্ডের পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত টানা দুই ঘণ্টা অনুষ্ঠিত হয় বৈঠকটি। বৈঠকে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান। মজুরি বোর্ডের প্রথম বৈঠকে কি আলোচনা হলো-জানতে চাইলে তিনি সময়ের আলোকে বলেন, ‘প্রথম সভায় মূলত বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সব সদস্য একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। 

এরপর তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমানে কতটা গার্মেন্টস কারখানা চালু রয়েছে, কত শ্রমিক কাজ করে-এসব বিষয়ে জানতে চান বোর্ড চেয়ারম্যান। এরপর বৈঠকে মজুরি প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে আমার কাছে মজুরি কেমন হওয়া উচিত এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। আমি আমার অভিমত দিয়ে বলেছি, মালিক-শ্রমিক সবার জন্য সহনীয় হয় এমন মজুরি কাঠামো ঠিক করা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে, সবার আগে দেশ, তারপর শিল্প, তারপর মালিক-শ্রমিক। সুতরাং শিল্পের সক্ষমতা, চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতা এবং সব স্বার্থ দেখে তবেই মজুরি কাঠামো ঠিক করা উচিত। বৈঠকের শেষদিকে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের কাছে মজুরি প্রস্তাবনা চান এবং পরবর্তী বৈঠকে এই প্রস্তাব উভয় পক্ষকেই বোর্ডে উপস্থাপন করতে বলেন। আমরা এখন বিজিএমইএ ও সব সদস্যের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে বোর্ডে উপস্থাপন করব।’

মজুরি বোর্ডের প্রথম সভায় শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি। বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সময়ের আলোকে বলেন, ‘আসলে প্রথম বৈঠকের শুরু থেকে অনেকটা সময় চলে গেছে পরিচিতি পর্ব ও কুশল বিনিময়ে। এরপর আলোচনা হয় পোশাক শিল্পের সার্বিক বিষয়ে। আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, বর্তমানে পোশাক শিল্প খাতে কতজন শ্রমিক কাজ করে। জবাবে আমি বলেছি, বড়, ছোট ও মাঝারি গার্মেন্টস কারখানায় সব মিলিয়ে ৪০ লাখের মতো শ্রমিক রয়েছে। এর বাইরে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ১০ লাখসহ সব মিলিয়ে ৫০ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করছে। এসব শ্রমিক পরিবারের সদস্য মিলে প্রায় ৫ কোটি শ্রমিকশ্রেণির লোক এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এরপর আমার কাছে শ্রমিক পক্ষের মজুরি প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়। আমরা এখন সব শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্ধারণ করব কত মজুরি প্রস্তাব করা হয়।’

ইতিমধ্যে অনেক শ্রমিক সংগঠন ন্যূনতম মজুরি ২২-২৫ হাজার টাকা দাবি করেছে। আপনারাও কি এ ধরনের মজুরি প্রস্তাব করবেন। এ প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তারপর সিদ্ধান্ত প্রস্তাব চূড়ান্ত করে জমা দেব। দ্বিতীয় কথা হলো, ২২-২৫ হাজারের মতো অস্বাভাবিক প্রস্তাব দিলে তো আর হবে না। বাস্তবভিত্তিক প্রস্তাব দিতে হবে। আমরা আলোচনাসাপেক্ষে বাস্তবভিত্তিক প্রস্তাব দেব। আমি শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি। অবশ্যই শ্রমিকরা যাতে না ঠকে সে বিষয়টিকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগামী বৈঠকে প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারব বলে আশা করছি। এরপর আরও কয়েকটি বৈঠক শেষে হয়তো আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে মজুরি কাঠামো চূড়ান্ত করে ফেলব এবং ডিসেম্বর নাগাদ চূড়ান্ত ঘোষণা ও গেজেট প্রকাশ করা সম্ভব হবে।’

গত মাসের প্রথম সপ্তাহে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। মোট ছয় সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন স্থায়ী সদস্য। বাকি দুজন মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি। চার সদস্যের স্থায়ী নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন সিনিয়র জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা। অন্য স্থায়ী সদস্য হলেন-মালিক পক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের উপ-মহাসচিব মকসুদ বেলাল সিদ্দিকী, শ্রমিক পক্ষের স্থায়ী সদস্য জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ এবং নিরপেক্ষ প্রতিনিধি হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন।

জানা যায়, গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ১৯৯৪ সালে প্রথম মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। তার আগ পর্যন্ত অবশ্য ১৯৮৪ সালে ৬৩০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করার কথা বলা হলেও মজুরি বোর্ডের সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে ১৯৯৪ সালে ৯৩০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়। এরপর ১২ বছর পর ২০০৬ সালে গঠিত মজুরি বোর্ড ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা। চার বছর পর ২০১০ সালের গঠিত মজুরি বোর্ড নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করে ৩ হাজার টাকা। এরপর ২০১৩ সালে সাভারের ভয়াবহ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিশ^ব্যাপী পোশাক খাত নিয়ে ব্যাপক নেতিবাচক সমালোচনা হওয়ায় তিন বছরের মাথায় ফের মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। এবার নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। সবশেষ ২০১৮ সালে গঠিত মজুরি বোর্ড ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। এরপর পার হয়ে গেছে পাঁচ বছর। শ্রম আইনেও বলা আছে পাঁচ বছর পরপর মজুরি সমন্বয় করতে হবে। তার আলোকেই নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com