ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা  বুধবার ৩১ মে ২০২৩ ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
ই-পেপার  বুধবার ৩১ মে ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin Mohammad City (Online AD).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/780-90.jpg
পরিবেশদূষণ ও নাগরিক কর্তব্য
আশিক উস সালেহীন
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩, ৭:১৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 55

ঢাকা শহর আজ বিশ্বের দূষিত শহরের একটি। বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ। এর আগে ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের একটি গবেষণায় ঢাকাকে বসবাসের জন্য দ্বিতীয় অযোগ্য শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এক নম্বরে ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, দূষণের কারণে বাংলাদেশের বছরে ৬৫০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়, যা মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ।

বাংলাদেশে প্রতি বছর যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখবিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে  এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবেশ দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু হয় সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভারতে ২৬ দশমিক ৫।

পরিবেশ দূষণের বেশ কয়েকটি ভাগ রয়েছে। যেমন বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, খাদ্যদূষণ ইত্যাদি রয়েছে। সবগুলোর ফলেই কোনো না কোনোভাবে মানুষ ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কিছু ক্ষতি প্রত্যক্ষভাবে হচ্ছে। যেমন-কীটনাশক মেশানো লিচু খেয়ে শিশু মারা গেল বা বিষাক্ত মাছ খেয়ে কেউ অসুস্থ হলেন। আবার কিছু ক্ষতি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি। যেমন রাসায়নিক বা কীটনাশক মেশানো বা বিষাক্ত খাবার খেয়ে কারও কিডনি নষ্ট হয়ে গেল বা দীর্ঘদিন দূষিত বায়ুতে থেকে ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হলেন। বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণের শিকার দরিদ্র নারী, শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কারণ তাদের বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করেন, যেখানে সিসা দূষণেরও ঝুঁকি রয়েছে। ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে এবং স্নায়বিক ক্ষতি হতে পারে। দূষিত এলাকায় বসবাসের ফলে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে। এসব এলাকার দূষিত বায়ু এবং পানির কারণে তার নিজের এবং গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান লরেন্স বের্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি বলছে, রাসায়নিক মিশ্রণ আছে, এমন দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকলে চোখ, নাক বা গলার সংক্রমণ বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেই সঙ্গে ফুসফুসের নানা জটিলতা, যেমন-ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমা এবং বিভিন্ন অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বায়ুদূষণের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন বায়ুদূষণের মধ্যে থাকলে বা এ রকম পরিবেশে কাজ করলে ফুসফুসের ক্যানসার এবং হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। এমনকি সেটা মস্তিষ্ক, লিভার বা কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও তৈরি করতে পারে। যুক্তরাজ্যের ওয়াটার পলিউশন গাইড, যারা পানির মাধ্যমে দূষণের মাত্রা কমাতে কাজ করছে, তারা বলছে, পানিদূষণে সাময়িক প্রভাবের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব অনেক বেশি পড়ে। বিশেষ করে শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য মানবদেহের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। এসব পানি ব্যবহার চর্মরোগ, টাইফয়েড, জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের মতো রোগ হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, দূষিত পানি বা নদীর ভেতর যেমন মাছ বা প্রাণী থাকে, যেসব ভেজষ উৎপন্ন হয়, দূষণ সেসব প্রাণীর ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ে। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে এসব ক্ষতিকর পদার্থ আবার মানবদেহের শরীরে চলে আসে। ফলে সরাসরি দূষিত পানির কাছাকাছি না থাকলেও, সেসব দূষিত পদার্থ এসব মাছের মাধ্যমে মানবদেহে আসে, যার ফলে ত্রুটিপূর্ণ জন্ম বা ক্যানসার হতে পারে। এমনকি খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবশরীরে ঢুকছে সিসা, প্লাস্টিকসহ নানা ক্ষতিকর পদার্থ।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব নয়েজ কন্ট্রোল বলছে, পথের শব্দের কারণে একজনের হাইপারটেনশন, আলসার, হৃদরোগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত শব্দের পরিবেশে থাকলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি তৈরি হতে পারে। শব্দদূষণের কারণে ব্লাড প্রেশার, শ^াসের সমস্যা এমনকি হজমের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

খাদ্যদূষণের কারণে অন্ত্রের নানা রোগ, লিভার, কিডনি বা পাকস্থলী কার্যকারিতা হারাচ্ছে। গ্যাস্ট্রিক-আলসারসহ নানা সমস্যার তৈরি হচ্ছে। কখনো কখনো এসব কারণে ক্যানসারও তৈরি হচ্ছে। শিশুরা ছোটবেলা থেকে এ ধরনের দূষিত খাবার খেলে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে বা বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।

বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও যানজট ঢাকা শহরের নিত্যসঙ্গী। একদার এ শহরটির চারপাশের প্রমত্তা নদীগুলো আজ বড়ই অসহায়। বুড়িগঙ্গা নদীর অবস্থা দেখলেই ঢাকার পরিবেশদূষণ কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে তা বুঝতে কারও পরিবেশবিদ্যায় ডিগ্রিধারী হওয়ার প্রয়োজন নেই। অথচ এই নদীগুলোতেই একসময় দেখা যেত রংবেরঙের পালতোলা নৌকার। মানুষ এগুলোর স্বচ্ছ ও সুন্দর পানি ব্যবহার করত দৈনন্দিন কাজে। ঢাকা শহরের নদীর ওপর দিয়ে আজ নৌকা পারাপারেও দম আটকে আসে, পানির দুর্গন্ধে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনার উপস্থিতি লক্ষণীয় হারে বাড়ছে শহরের অলিগলি-রাস্তাঘাট এমনকি উড়াল সেতুগুলোর নিচেও, যা যারপরনাই নগরবাসীর বিরক্তির কারণ।

বিশ্ব  স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবল। পরিবেশ অধিদফতরের গত বছরের জরিপে দেখা যায় দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় শব্দের মানমাত্রা ১৩০ ডেসিবল ছাড়িয়ে গেছে, যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে উঠে এসেছে রাজধানীর পল্টন, শাহবাগ ও ফার্মগেট, মতিঝিল, রামপুরাসহ কয়েকটি এলাকার নাম। যানবাহনের হর্ন, ভবনের নির্মাণকাজ, কলকারখানা এবং মাইকিংয়ের, বিশেষ করে সিগন্যালগুলোতে একসঙ্গে কয়েকশ গাড়ি হর্ন বাজানোকে শব্দদূষণের প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতিমধ্যে দেশের প্রায় ১২ ভাগ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে বলে পরিবেশ অধিদফতরের সাম্প্রতিক জরিপে উঠে আসে। ঢাকাকে ঘিরে বুড়িগঙ্গা এবং শীতলক্ষ্যাসহ নদীগুলোর দূষণের মাত্রা বাড়ছে। এখন দেশের অন্য শহরগুলোর মানুষও দূষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কৃষিকাজে বিষাক্ত রাসায়নিক বা কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় দূষণের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে মানুষের খাদ্যে। মাটি, পানি, বাতাস সবই কিন্তু দূষিত। কারণ আমরা যে ধরনের শিল্প গড়েছি, সেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে দূষণ হচ্ছে। একই সঙ্গে ইটের ভাঁটার কারণেও দূষণ হচ্ছে। নদীগুলো দূষিত হচ্ছে শিল্প-কারখানার বর্জ্য পড়ে।

আমাদের খাদ্যে দূষণের প্রভাব মারাত্মক হচ্ছে। এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেগুলো দূষণের প্রভাবমুক্ত করতে অনেক সময় লেগে যাবে। বাংলাদেশে পানিদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আর্সেনিক। এখনও সারা দেশে সাড়ে ৫ কোটির বেশি মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি ব্যবহার করছে বলে বিশ্ব  স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বলা হচ্ছে। ঢাকা শহরে যত জলাভূমি ছিল গত ৪০ বছরে তার ৭৫ শতাংশ হারিয়ে গেছে। এসব জলাভূমি ভরাট করে সেখানে বাড়িঘর তোলার কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে দেশের ছোট ছোট শহরও পরিবেশদূষণের শিকার হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ১৯৯০ সালের পর পাবনা শহর তার অর্ধেক জলাভূমি হারিয়ে ফেলেছে এবং এই শহরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইছামতী নদী এখন মৃতপ্রায়। 

দ্রুত বিবর্তনশীল ও আগ্রাসী প্রযুক্তি-কবলিত যুগে বর্তমানে আগের সেই গ্রামকে আজ খুঁজে পাওয়া যায় না। স্বাধীনতাপূর্ব ও উত্তরকালের এই দুই সময়কালের বিভাজিত উত্তরকালের সময়টিকে বিবেচনায় নিলে পাঁচ দশকের ব্যবধানে গ্রাম তার হাজার বছরের স্বরূপ, সামাজিক আচার-ঐতিহ্য, জীবনাচার ও সংস্কৃতিকে হারিয়েছে নদীগর্ভে বাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ার মতো করে। এখন গ্রাম আর সেই গ্রাম নেই। গরুরগাড়ি, লাঙ্গল, ঢেঁকি, পালকি, নবান্ন উৎসবসহ অসংখ্য জীবন ও সমাজঘনিষ্ঠ বিষয়, অনুষঙ্গ, আচার, প্রথা আজ বিলুপ্ত কিংবা বিলুপ্তপ্রায়। আগের গ্রামে বস্তি, নর্দমা, আবর্জনা, পূতিগন্ধময় পুকুর-ভাগাড় ছিল না। এখন আছে।

দেশের অনেক স্থানেই শহরের চেয়েও বেশি দূষিত গ্রামের পরিবেশ। শহরে নিষ্কাশন, বর্জ্য সরানো ও পানিশোধনের কিছু ব্যবস্থা থাকলেও গ্রামে সে ব্যবস্থা নেই। মানুষে মানুষে আগের মতো মধুর সম্পর্ক, সম্প্রীতি, যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক নেই। ভীষণ আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পরিপূর্ণ এখন গ্রামের মানুষের জীবন। 

শহর আর গ্রামের পরিবেশের মধ্যে এখন কোনো তফাত নেই। তবে গ্রামের দুঃখ-দুর্দশা বেশি। এর মাথার ওপর শক্তিশালী, অর্থশালী প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা নেই সার্বিক সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার। শহরে যতটুকু ব্যবস্থাপনা আছে, গ্রামে তার কিছুই নেই। ধরা যাক প্রথমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। গ্রামে এর কোনো বালাই নেই। শহরের চেয়ে বেশি বর্জ্য ও আবর্জনার উৎপাদন এখন গ্রামেই বেশি। সেখানে শহুরে জীবনের প্রভাব পড়ায় নাগরিক জীবনে ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীর ব্যবহার বেড়েছে অকল্পনীয় রূপে।

এই যে বর্জ্য নিয়ে এত কথা। অথচ এ বর্জ্যকেও কাজে লাগানো যায়। পৃথিবীর অনেক দেশ বর্জ্যকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগাচ্ছে। ই-বর্জ্য থেকে নতুন জিনিস তৈরি করে সেগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে। দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হয়, তাকে বোঝা না ভেবে বরং সম্ভাবনা হিসেবে নিতে হবে। পাশাপাশি সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বর্জ্য নিষ্কাশন ও এর ব্যবস্থাপনা করতে হবে। পরিবেশ দূষণ এড়ানোর জন্য শুধু সরকার বা কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না। নিজেরা আগে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

দেশের পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতের জ্বালানির সংস্থান হয় আমদানির মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরকারি কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে এসব জ্বালানি আমদানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এ আমদানি অব্যাহত রাখা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেল, কয়লা ও গ্যাস-প্রাথমিক এ তিন জ্বালানি আমদানি বাবদ বিপুল পরিমাণ বকেয়া জমেছে জোগানদাতাদের কাছে। এ দেনা শোধ করা যাচ্ছে না ডলার সংকটের কারণে। রক্ষণশীলভাবে হিসাব করলেও দেখা যায়, জ্বালানির সংস্থান বাবদ দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরকারি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান-সংস্থাগুলোর দেনা অনেক আগেই ৫০০ মিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। 

দেশের বাজারে টাকায় বিক্রি করলেও জ্বালানি আমদানিকারকদের তেলের মূল্য পরিশোধ করতে হয় ডলারে। এ জন্য হাতে অর্থ থাকলেও আমদানির মূল্য পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডলার সংস্থান করতে পারছে না সংস্থাগুলো। ফলে সক্ষমতা থাকলেও দেনা জমছে আমদানিকারকদের। এ মুহূর্তে তাদের জন্য বিড়ম্বনার বিষয় হলো পাওনা পরিশোধ করতে না পারলে বিদেশি সরবরাহকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। 

জ্বালানি তেল আমদানিতে মূল্য পরিশোধের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৩০ দিন। আগে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল জাহাজীকরণের ৮-১০ দিনের মধ্যেই মূল্য পরিশোধ করে দেওয়া হতো। বৃহস্পতিবার সময়ের আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিপিডিপির কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর (আইপিপি) সাত মাসের বিল বকেয়া পড়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিল বকেয়া থাকায় জ্বালানি তেল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারি খাতের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা। ফলে জ্বালানি তেল সংকটে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রে আংশিক উৎপাদন হয়। এ ছাড়া সরকার ভর্তুকির অর্থ নিয়মিত ছাড় না করায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি। গ্যাস সংকটেও বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়। তবে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এসব কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ কাটা যাবে না। বসে থাকা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দিতে হবে মাসে ৭ কোটি ডলার। উপরন্তু বকেয়া বিলের ওপর বাড়তি সুদ দাবি করেছে তারা। 

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পেট্রোবাংলার হিসাবে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ রয়েছে বিল পরিশোধের জন্য। তবে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সারা বিশ্বের মানুষ বেশ অনেক দিন ধরেই ভুগছে। অফিসে কাজের সময় কমিয়ে, পেট্রোল পাম্পগুলো একদিন করে বন্ধ রেখে এবং দৈনিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের বিষয়ে কঠোরতা চলছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়। এই সংকটগুলো মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দরকার। সারা বিশ্বই এটা মোকাবিলা করছে। আমাদেরও এটা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আমাদের দেশেও জ্বালানি সংকটের পরবর্তী ধাক্কা থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় নিজের দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও মনোযোগী ও দক্ষ হতে হবে। এই মুহূর্তে আমাদের সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে যথাসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার এবং জনসাধারণের ওপর যতটা সম্ভব কম পরিমাণে বোঝা চাপানোর বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছে অভিজ্ঞ মহল। এ পরিস্থিতিতে করণীয় হচ্ছে-গ্যাস, বিদ্যুৎ ও তেলের ব্যবহার কমাতে হবে। ডলার যাতে কম খরচ হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করতে হবে। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বাড়াতেই হবে। গ্যাস পাওয়া গেলে ডলার বাঁচবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দিতে হবে। এতে তেল কেনার ডলার বাঁচবে। মূলত জ্বালানি খাতে ডলার সাশ্রয়ে সব রকমের পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আমরা মনে করি। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।




https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com