প্রকাশ: শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩, ৭:৩৮ এএম | অনলাইন সংস্করণ Count : 58
এলজিইডির ছোঁয়ায় রাঙামাটির বুকে গড়ে উঠেছে ১৮ কিমি দৈর্ঘের এক নান্দনিক সড়ক স্থাপনা। রাঙামাটির আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের বড়াদম যেন হয়ে উঠেছে পাহাড়ের বুকে এক অনিন্দনীয় সৌন্দর্যের রানি। এলজিইডির ছোঁয়ায় গড়ে উঠেছে এমন চিত্র। প্রতিষ্ঠানটির ১৮ কিমি সড়ক এবং তিনটি ব্রিজ স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাই বদলে দিয়েছে। পর্যটন সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়ায় একের পর এক হোটেল মোটেল রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে। গড়ে তোলা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জেলা পর্যায়ের দফতর।
পাহাড়ের বুক ছিঁড়ে বা কোথাও ঢালু বেয়ে আঁকা-বাঁকা সর্পিল সড়ক ও ব্রিজগুলো রাঙামাটিবাসীর জীবনমানে আমূল পরিবর্তন এনেছে। দীর্ঘদিনের যোগাযোগ সমস্যারও সমাধান হয়েছে। ব্রিজ ও সড়কের দুই পাশে উঁচু-নিচু পাহাড় বাড়িয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য। কোনো কোনো স্থানে পর্যটন সম্ভাবনাও বেড়েছে। রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের দুই পাশের বন-পাহাড় দেখে মুগ্ধ দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও। উন্নত বিশে^র আদলে পাহাড়ের সঙ্গে পাহাড়ের সংযোগ ব্রিজ এবং সড়ক উন্নয়নের এই অসাধ্য সাধন করেছে জেলা এলজিইডি।
কাপ্তাই হ্রদের পাড় ধরে বন-পাহাড়ের মাঝ দিয়ে গড়া আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়কের পুরোটাই দৃষ্টিনন্দন। প্রকৃতির মাঝে মানবসৃষ্ট এ সড়কের আকর্ষণ দিন দিন বাড়ছে। বেড়েছে সুবিশাল নীল জলরাশির কাপ্তাই হ্রদের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগও। তাই পাহাড়ের বুক ভেদ করে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখতে সকাল-সন্ধ্যায় ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় লেগেই থাকে।
রাঙামাটি সদর উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের প্রলয়ঙ্করী পাহাড় ধসের কারণে এই সড়কটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা এ সড়ককে বর্তমান রূপে ফিরিয়ে আনার মতো অসাধ্য সাধন করে রাঙামাটি এলজিইডি। প্রকৃতি ও পরিবেশকে অক্ষত রেখে এখানে নতুনভাবে তিনটি স্ল্যাববেইজড ব্রিজ তৈরিসহ দুই লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এলজিইডির নিজস্ব নক্সায় বাস্তবায়িত এসব ব্রিজের ফলে পরিবেশ থাকবে অক্ষত।
সড়কের দুই পাশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাবিপ্রবি (রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়)সহ গড়ে তোলা নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র এবং রিসোর্টে যাতায়াতকারী এবং উপজাতীয় গ্রামগুলোর বাসিন্দারা সরাসরি উপকৃত হবে। পার্বত্যাঞ্চলের প্রয়াত শীর্ষ ধর্মগুরু সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের জন্মস্থান, স্মৃতিস্তম্ভ, সুউচ্চ পাহাড়বেষ্টিত নিকষ কালো জলের পাহাড়ি ঘোনা, বড়াদম বৌদ্ধ বিহার, খাড়া পাথুরে পাহাড়, গুহা ও দৃষ্টিনন্দন বন-পাহাড় চোখে পড়ে এ সড়ক পথে গেলেই।
সড়কটি চালু হওয়ায় ঝুম চাষ নির্ভর অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠছে। স্থানীয়দের উৎপাদিত কৃষিপণ্য, বাঁশ, কাঠ ও মাছ বিপণনের জন্য কাঁধে বহন ও দুই ঘণ্টার নদী পথ পেরোনোর মতো মহা বিড়ম্বনার দিনও শেষ হয়ে গেছে। আবার রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগেও কমেছে ২০ কিমি পথ।
পাহাড়ে না চড়েই পাহাড় ভ্রমণের দুর্লভ সুযোগ এবং সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসে। আকর্ষণ বাড়াতে ও আত্মহত্যাকারী প্রেমিক যুগলের স্মৃতি ধরে রাখতে তৈরি করা হয়েছে ‘লাভ পয়েন্ট’। প্রশাসন যদি পর্যটকবান্ধব হয়, তা হলে এখান থেকেই কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই যাওয়ার জন্য এটি হচ্ছে একটি বিকল্প সড়ক। সড়কটি নির্মাণের ফলে রাঙামাটি-কাপ্তাইয়ের যোগাযোগেও পরিবর্তন এসেছে। দূরত্ব কমেছে প্রায় ২০ কিমি। পর্যটকরা একই স্থান থেকে হ্রদ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সড়কটিকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠছে। যা রাঙামাটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।