প্রকাশ: শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩, ১১:২৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ Count : 140
চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের রহমতের পাড়া গ্রামে ছোট ভাইয়ের সম্পত্তি গ্রাস করতে রোখসানা আক্তারকে (২৩) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যা করেছে ভাসুর ও তার স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বিকেলে রোকসানার পিতা নুরুল আলম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে তার ভাসুর মোস্তফা ও জা স্বপ্না আক্তারকে আসামি করা হয়। এ দিন বিকেলে চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাহমুদুল হক, আবদুল্লাহ খান ও ফারদিন মুস্তাকিম তাসনিমের পৃথক আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে নিহত গৃহবধূর ভাসুর গোলাম মোস্তফা ও জা স্বপ্না আক্তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী হোসনেয়ারা বেগমও জবানবন্দি দিয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন কিবরিয়া ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জেরে হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন আগে বাড়ির উঠানে মোস্তফার করা পানি নিষ্কাশনের ড্রেন বন্ধ করে দেয় কিবরিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার। ঘটনাটি নিয়ে উভয়ের মধ্যে তুমুল বাক–বিতণ্ডা হয়। এরপর তারা রোকসানা ও তার স্বামী কিবরিয়াকে মারার পরিকল্পনা করেন। প্রথমে তারা সিদ্ধান্ত নেন রোকসানাকে মারবে, পরে সুযোগ বুঝে মারা হবে তার স্বামীকেও। পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার দুপুরে বাঁশবাড়িয়া বাজারের ছোট্ট সওদাগরের দোকান থেকে ৯০ টাকার কেরোসিন ও স্বপনের ফার্মেসি থেকে ৩০ টাকার হ্যান্ডগ্লাভস কিনে নেন। এরপর মোস্তফা নিজ বসতঘরে ঢুকে হাতে গ্লাভস লাগিয়ে নেন এবং একটি কাঠের টুকরো নেন। স্ত্রীর হাতে তুলে দেন কেরোসিন তেলের বোতল। দুপুরে গোলাম কিবরিয়ার অনুপস্থিতে মোস্তফা ও তার স্ত্রী ঘরে ঢুকে পেছন থেকে রোকসানার মাথায় কাঠের টুকরো দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিতের পর লেপ–কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে দেন। ঘটনাটি প্রতিবেশী হোসনেয়ারা দেখে ফেলায় তা কাউকে না জানাতে হুমকি দেন। জানালে তাকে ও তার প্রতিবন্ধী মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ঘণ্টাখানেক পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সাজাতে তারা ফের কিবরিয়ার বসতঘরে ঢুকে রোকসানার মরদেহের উপর কেরোসিন তেল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর বাইরে এসে আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকেন। পরে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আগুন নেভান।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এলাকাবাসীকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মরদেহের সুরতহাল করি। এসময় নিহতের মাথায় তিনটি ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়। গৃহবধূর মরদেহ খাটের উপরে পড়ে থাকার ধরন দেখে এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যা বলে নিশ্চিত হন তিনি। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোকসানা আক্তারের স্বামী আনোয়ার হোসেন কিবরিয়া, ভাসুর গোলাম মোস্তফা ও জা স্বপ্না আক্তারকে আটক করা হয় বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদকালে মোস্তফা ও তার স্ত্রী স্বপ্নার কথায় ব্যাপক গরমিল পরিলক্ষিত হয়। এক পর্যায়ে তারা দুজনেই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে নেন।