ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা সোমবার ২ অক্টোবর ২০২৩ ১৭ আশ্বিন ১৪৩০
ই-পেপার সোমবার ২ অক্টোবর ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin-Mohammad-City-(Online).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/SA-Live-Update.jpg
আল্লাহর ঘর জিয়ারতের আগ্রহ
মুহাইমিনুল ইসলাম
প্রকাশ: সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩, ১২:৪৬ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 250

ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পরিচয়ের প্রতীক পবিত্র কাবাগৃহ। প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ে জাগ্রত পবিত্র কাবাগৃহের ভালোবাসা। আল্লাহপ্রেমী বান্দা যে ঘরের ছায়ায় সামান্য সময় দাঁড়িয়ে অশ্রুপাত করতে ব্যাকুল। কাবার বিদ্যমানতা মুমিন বান্দার অস্তিত্বের অংশ।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ সম্মানিত কাবাগৃহকে মানুষের স্থিতিশীলতার কারণ বানিয়েছেন’ (সুরা মায়েদা : ৯৭)। সপ্তম আকাশে অবস্থিত বায়তুল মামুরের প্রতীক এই কাবার দিকে মুখ ফেরানো মানে বায়তুল মামুরের দিকে মুখ ফেরানো। আর বায়তুল মামুরের দিকে মুখ ফেরানো মানেই হলো আল্লাহ তায়ালার দিকে মুখ ফেরানো। তাই তো পুরো পৃথিবীর মুসলমানেরা যে যেখানেই থাকুক, প্রতিদিন পাঁচবার এই কাবার দিকে মুখ করে লুটিয়ে পড়েন রাব্বুল আলামিনের কুদরতি পায়ে। নত শিরে অর্পণ করেন হৃদয়ের সঞ্চিত সবটুকু ভালোবাসা। দুহাত তুলে ব্যক্ত করেন মনের আকুতি, প্রভু হে দয়াময়, জীবনে অন্তত একটিবার হলেও তোমার ঘর ‘কাবা’কে নিজ চোখে দেখার তওফিক দাও। 

পবিত্র কাবায় যারা এখনও যেতে পারেননি তারা যেমন এই আকুতি ব্যক্ত করেন, যারা গেছেন তারাও বারবার যাওয়ার তওফিক প্রার্থনা করেন। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কোনো বান্দা যদি নিষ্ঠার সঙ্গে মর্যাদাবান এ ঘরে এক রাকাত নামাজ আদায় করেন, তা হলে আল্লাহ তায়ালা তাকে এক লাখ রাকাত নামাজের সমান সওয়াব দান করেন।’ অপর হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে, তার একটি গোলাম আজাদ করার সওয়াব হয়। তাওয়াফের প্রতি কদমে আল্লাহ একটি করে গুনাহ মাফ করেন, একটি করে নেকি দান করেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন’ (তিরমিজি : ৯৫৯)। পবিত্র কাবাঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এই উম্মত সদা কল্যাণের ওপর থাকবে, যতক্ষণ তারা যথাযথভাবে এর (কাবার) মর্যাদাকে বজায় রাখবে। আর যদি সে সম্মানকে ছেড়ে দেয় এবং তা বিনষ্টে পরিণত করে, পরিণামে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪/৩৪৭)

সে জন্যই এখানে যারা আসেন তারা সবাই নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেন। হৃদয়ের সবটুকু প্রেম নিবেদন করে পরম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পবিত্র কাবাই হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে ফেরেশতারা এ ঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা তো মক্কায়, তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য দিশারি’ (সুরা আলে ইমরান : ৯৬)। পবিত্র এই কাবার রয়েছে তাৎপর্যময় বহু ইতিহাস। আদি পিতা হজরহ আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) যখন জান্নাত থেকে এই ধূলির ধরায় অবতরণ করেন, তখন তারা দুজনে ছিলেন পৃথিবীর দুই প্রান্তে। তিনশ বছর মতান্তরে সাড়ে তিনশ বছর বিচ্ছিন্ন থাকার পর এই কাবার আঙিনাতে তাদের মিলন ঘটে। এখান থেকেই রচিত হয় মানবজাতির প্রথম ইতিহাস। পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তায়ালা এই কাবাকে বিশ্ব মুসলিমের মিলনকেন্দ্র হিসেবে মনোনীত করেন। 

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘এবং সেই সময়কে স্মরণ করো, যখন কাবাঘরকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদস্থল করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমরা সবাই ইবরাহিমের দাঁড়ানোর স্থান মাকামে ইবরাহিমকেই সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো।’ (সুরা বাকারা : ১২৪-১২৭)
আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময়ও মানুষ এই কাবাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতেন। ঘোর শত্রুও যদি কাবার আঙিনায় চলে যেত, তা হলে তাকে হত্যা করত না। পবিত্র এই কাবাকে ঘিরে কালো-সাদা, ছোট-বড়, ধনী-গরিব, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বর্ণের, গোত্রের আল্লাহপ্রেমীদের কণ্ঠে যখন গুঞ্জরিত হয়, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির) তখন কাবার চারপাশ থেকে শুরু করে বিশ্ব জগতের প্রতিটি পাড়াই তরঙ্গিত হয়ে ওঠে এক ঐশ্বরিক মোহনায়। কাবার চত্বরে প্রতিদিন এই যে এক অনন্য দৃশ্য সৃজিত হয়, সে দৃশ্য কার না নয়ন জুড়ায়? বিমুগ্ধ এই দৃশ্য অবলোকনে আবেগের স্বচ্ছ জলে ধুয়ে যায় মনের সব পঙ্কিলতা। 

প্রেমময় এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশে ওই গৃহে (কাবা) হজ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য এবং কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ^জগতের মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান : ৯৮) 

পবিত্র এই কাবার সঙ্গে রয়েছে বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ের সম্পর্ক। এ যে হৃদয়ের তীর্থ, পরমাত্মার সেতুবন্ধ। তাই তো এ কাবা দর্শনের অভিপ্রায়ে মুমিনেরা স্বদেশ ছেড়ে উড়াল দেয় বহু দূরের মক্কায়। এক টুকরো সাদা কাফনের কাপড় কোমর আর ঘাড়ে ঝুলিয়ে সুর তোলেন, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক
।’ কতই না সৌভাগ্যবান তারা, যারা এখন হজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গুনাহমুক্ত হওয়ার তওফিক পেয়েছেন। 

যারা হজের সৌভাগ্য লাভ করেছেন তাদের কর্তব্য, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা নিবেদন করা এবং যারা এবার যাচ্ছেন না, তারা হাজিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দোয়া চাইতে পারেন। এ ব্যাপারে হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি কোনো হজ পালনকারীর সাক্ষাৎ পাবে তাকে সালাম করবে, তার সঙ্গে করমর্দন করবে এবং তাকে অনুরোধ করবে যেন তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তার ঘরে প্রবেশের পূর্বে। কেননা হাজিকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।’ (ইবনে হিব্বান : ২/২৭৪)




https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com